রমণী বিশ্বাস, তেহট্ট: পাওয়া যাচ্ছে না পাটের দাম। বাধ্য হয়ে পেঁপে চাষে ঝুঁকছেন ভারত বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকার একাধিক কৃষক। চাষিরা ইতিমধ্যে জোরকদমে শুরু করে দিয়েছে পেঁপে চারা রোপণের কাজ। তেহট্ট ১ ব্লকের বিভিন্ন জমিতে গিয়ে সেই দৃশ্যই দেখা গেল। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, তেহট্ট মহকুমায় প্রচুর পরিমাণে পাট চাষ হয়। এলাকার এই ফসলের গুণগত মান খুবই ভালো। প্রত্যেক বছর দেখা যায় ফেব্রুয়ারি, মার্চ মাসেই পাট চাষের জন্য জমি প্রস্তুত শুরু হয়ে যায়। লক্ষ্যণীয় বিষয় বিভিন্ন জায়গায় এই অর্থকারী ফসল চাষের গুরুত্ব অনেক কমেছে। যেখানে এই সময় মূলত পাট চাষের জন্য জমি প্রস্তুত করতে দেখা যায়, সেখানে বহু জায়গায় জমি তৈরি হয়েছে বটে, কিন্তু তা পাটের জন্য নয়। জানা গিয়েছে, সেখানে পেঁপে চাষ করবেন কৃষকরা। আসলে পেঁপে লাভজনক ফসল বলেই ব্যাখ্যা বহু কৃষকের।
প্রশ্ন হচ্ছে হঠাৎ অর্থকারী ফসল পাট চাষের পরিবর্তে পেঁপে চাষ কেন করছেন কৃষকরা, তার জন্য অবশ্য বেশ কিছু কারণের কথা জানিয়েছেন তাঁরা। চাষিরা জানান, পাট চাষের জন্য জমি তৈরি থেকে বীজ বপন, সার প্রয়োগ, সেচের ব্যবস্থা সব করতে বিরাট খরচ হয়। এরপর পাট বড় হলে ঝড়বৃষ্টিতে ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। তাছাড়া জাঁক দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত জলাশয় প্রয়োজন। অনাবৃষ্টিতে তাতেও সমস্যা হয়। কৃষকরা আরও জানান, বিগত কয়েকবছরে মূলত পাট চাষিদের চরম সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। পর্যাপ্ত বৃষ্টির অভাবে খাল, বিল, পুকুর জল শূন্য ছিল। জাঁক দেওয়ার জায়গার অভাব ছিল। যে কারণে বাড়তি খরচ করে জমি থেকে পাট ট্রাক্টর করে অন্য জায়গায় নিয়ে যেতে হয়েছে। আবার অনেককে নিজের জমিতেই বাড়তি খরচ করে মাটি কেটে আল উঁচু করে জল দিয়েও পাট জাঁক দিতে হয়েছে। এরপরেও বিভিন্ন জমিতে পড়ে শুকিয়েছে পাট। এতকিছুর পরেও পর্যাপ্ত দাম পাওয়া যায়নি বলেই অভিযোগ।
চাষিরা আরও জানান, একটু উঁচু জমিতে পেঁপে চাষ করলে তিন-চার মাস পর্যবেক্ষণ করতে পারলে তিন বছর টানা ফলন পাওয়া যায়। গরমের সময় পাইকারি দরে পেঁপে ১৫ থেকে ২৫ টাকা কিলোতে বিক্রি হয়। শীতের সময় পেঁপের দাম তুলনায় একটু কম থাকে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ক্ষতি না করলে পেঁপে চাষে ক্ষতি কম। সামান্য পরিচর্যাতে ভালো ফলন পাওয়া যায়। তাছাড়া শহরাঞ্চলে বা বিভিন্ন খাবারের কারখানা গুলিতে পেঁপের চাহিদাও রয়েছে। এই কারণেই আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন না হয়ে পেঁপে চাষে ঝুঁকেছে অনেকে। তেহট্টের বেতাই, লালবাজার, চাপাগাড়া মাঠে সহ ব্লকের বিভিন্ন জায়গায় এই চাষ পর্যাপ্ত পরিমাণে শুরু করেছে চাষীরা চাষিদের মধ্যে গণপতি হীরা, সন্ন্যাসী ঘোষ, নিখিল বিশ্বাস, বিকাশ মজুমদাররা বলেন,"পাট , ধানের থেকে পেঁপে চাষে লাভ বেশি। আমাদের চেনা বহু চাষি এই চাষ করছেন। লাভজনক বলে এই চাষের দিকে ঝুঁকছে চাষিরা। এই ফসল বিক্রির কোন ঝামেলা নেই, মহাজন জমি থেকে নিজেরা পেঁপে সংগ্রহ করে ট্রাক ভর্তি করে শহরে নিয়ে যায়, এবং জমিতে বসে হাতে হাতে টাকা দিয়ে যান। যে কারণে অর্থকরী ফসল পাট চাষ বন্ধ করে পেঁপে চাষের দিকে ঝুঁকছেন চাষিরা।"