নব্যেন্দু হাজরা: সোমবার থেকে জাতীয় সড়কের সমস্ত টোলপ্লাজায় বাধ্যতামূলক হচ্ছে ফাসট্যাগ (FASTag) পদ্ধতি। গাড়িতে তা না থাকলেই দ্বিগুণ টাকা জরিমানা দিয়ে পার করতে হবে টোল প্লাজা। এখনও রাজ্যের প্রায় ৪০ শতাংশ ট্রাক, ৯০ শতাংশ বাসেই লাগানো হয়নি ফাসট্যাগ। অন্যান্য আরও গাড়ি তো আছেই। পরিস্থিতি বুঝে এখন ঘুম ছুটছে পরিবহণ এবং গাড়ি মালিকদের একাংশের।
এতদিন গাড়িতে ফাসট্যাগ চালু থাকলেও টোলপ্লাজায় (Toll Plaza) বেশ কয়েকটি জেনারেল লেনও চালু ছিল। যেখান থেকে ক্যাশ দিয়ে টোল পার করে নেওয়া যেত। তবে সোমবার রাত ১২টার পর থেকেই তা বন্ধ হয়ে যেতে চলেছে। সূত্রের খবর, সেক্ষেত্রে খোলা থাকবে একটিমাত্র জেনারেল লেন। যেখান দিয়ে এই ফাসট্যাগ ছাড়া গাড়ি (Cars) পার করানো যাবে। যা করতে গেলে বড়সড় লাইন পড়ে যাবে টোলে। ফলে সম্ভাবনা রয়েছে যানজটের। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষও (NHA) বিষয়টি নিয়ে ওয়াকিবহাল। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের এক আধিকারিকের কথায়, মূলত ট্রাক এবং বেসরকারি বাস কোনওভাবেই ফাসট্যাগ লাগাতে চাইছে না। কারণ, ফাসট্যাগ লাগালে তারা সরকারি নিয়মের আওতায় চলে আসবে। ফলে ওভারলোডেড ট্রাক, কয়লা বা পাথর বোঝাই ট্রাকের যাবতীয় তথ্য নথিভুক্ত হয়ে যাবে NHA’র কর্তৃপক্ষের কাছে। আটক হয়ে যাবে সেই সমস্ত গাড়ি। তাই ঝুঁকি এড়াতেই তাঁরা গড়িমসি করছে। আর বেসরকারি বাস এমনিতেই ভাড়া কমের দোহাই দিয়ে এই ফাসট্যাগ লাগাচ্ছে না। তাঁরা একবার টোল কেটে একাধিকবার যাতায়াত করে এখন সেখান দিয়ে। কিন্তু ফাসট্যাগ লাগালে সেটা আর করা যাবে না। তাই লাগানো হচ্ছে না।
[আরও পড়ুন: ভোটের মুখেই খুশির হাওয়া, বাজেটের ঘোষণা মেনে ৩ শতাংশ ভাতাবৃদ্ধি পার্শ্বশিক্ষকদের]
এর আগে ১ জানুয়ারি থেকেই ফাসট্যাগ বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু পরিস্থিতি বিবেচনা করে সেই সময়সীমা ১৫ ফেব্রুয়ারি করা হয়। তাতেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। বহু গাড়িই এখনও লাগায়নি ফাসট্যাগ। এদিকে বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ট্রাক মালিকরা। তাঁদের দাবি, গাড়ির চালকরা অধিকাংশ অশিক্ষিত। সকলের কাছে স্মার্ট ফোনও নেই। তাঁরা এই পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারবেন না। তাই তাঁরা লাগাচ্ছেন না। ফাস্ট্যাগ এক ধরনের ডিজিটাল ট্যাগ বা স্টিকার। যা রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইন্ডেটিফিকেশন পদ্ধতিতে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। গাড়ির সামনের কাচের উপরে থাকবে এই বিশেষ স্টিকার। টোল আদায় কেন্দ্রগুলিতে বিশেষ লেন দিয়ে গাড়ি যাতায়াতের সময়, ডিজিটাল পদ্ধতিতে টোল আদায় হয়ে যাবে। সময় নষ্ট করে আর টোল প্লাজায় দাঁড়াতে হবে না।
[আরও পড়ুন: খাস কলকাতায় ১৮ কোটি টাকার মাদক উদ্ধার করল STF, গ্রেপ্তার মহিলা-সহ পাঁচ]
কিন্তু এতেও আছে গন্ডগোল। যে সমস্ত ব্যাংকের সঙ্গে এই ট্যাগ লিংক করা হয়েছে, তা অনেকক্ষেত্রেই সময়মতো কাজ করছে না বলে অভিযোগ। যে কারণে টোল প্লাজায় লম্বা লাইন পড়ে যাচ্ছে গাড়ির। সমস্যায় পড়েছেন সাধারণ মানুষ। ফলে গাড়ির মালিকরা বলছেন, তাতে ঝঞ্ঝাট বাড়ছে। রাজ্যে উত্তরবঙ্গ এবং দক্ষিণবঙ্গ মিলিয়ে জাতীয় সড়কের উপর মোট ২৫টি টোল প্লাজা রয়েছে। যেখান দিয়ে দিনে হাজার হাজার বাস, ট্রাক এবং চার চাকার গাড়ি যাতায়াত করে। তাঁরা প্রত্যেকেই এই নিয়মের বিরোধিতা করছেন।
এর আগে ফাসট্যাগ পদ্ধতি চালু হলেও, তা সকলে ব্যবহার করতেন না। জেনারেল লেন দিয়েই পার করতেন টোল। ফেডারেশন অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রাক অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সজল ঘোষ বলেন, “ফাসট্যাগ চালু হলে ট্রাক চালকরা সমস্যায় পড়বেন। প্রচুর ট্রাকচালক স্মার্টফোনের ব্যবহার জানেন না। তাঁরা কী করে ব্যবহার করবেন? তাছাড়া যান্ত্রিক সমস্যায় ঠিকঠাক কাজ করছে না ফাসট্যাগ।” বাস-মিনিবাস সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাহুল চট্টোপাধ্যায় বলেন, “৯০ শতাংশ বাসেই ফাসট্যাগ লাগানো হয়নি। কারণ, পরিবহণ দপ্তরের আধিকারিকদের উপস্থিতিতে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের তরফে যে কথা বলা হয়েছিল, তা রাখা হয়নি।”