shono
Advertisement
Birangana series review

কেমন হল সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার 'বীরাঙ্গনা'? পড়ুন রিভিউ

এই সিরিজের ম্যান অফ দ্য ম্যাচ 'লাফটারসেন'।
Published By: Sandipta BhanjaPosted: 07:21 PM Jul 29, 2025Updated: 07:25 PM Jul 29, 2025

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: শহরের বুকে একের পর এক নবপরিণীতার মৃত্যু! ফুলশয্যার রাত যেন শরশয্যা! তবে এক্ষেত্রে টার্গেট শুধু বিবাহ বিচ্ছিন্না মহিলারা- এমনই এক রোমহর্ষক প্লট নিয়ে তৈরি হইচই-এ সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত 'বীরাঙ্গনা'। পরিচালনায় নির্ঝর মিত্র। যিনি এর আগে 'শিকারপুর', 'ডাইনি'র মতো থ্রিলার সিরিজ উপহার দিয়েছেন। তবে এবার শুধু থ্রিলার নয়, রোমাঞ্চের মোড়কে জটিল মনস্তত্ত্বের সুতোয় টান দেওয়ার চেষ্টা করেছেন পরিচালক।

Advertisement

এই গল্পের নায়িকা চিত্রা বসু (সন্দীপ্তা সেন)। শৈশবে মায়ের সান্নিধ্য না পাওয়া এক মেয়ে। পুলিশ অফিসার বাবার শিক্ষায় শিক্ষিত। ভাগ্যচক্রে চিত্রাও পেশায় সাব ইনসপেক্টর। লোকে বলে- 'বাবার সুপারিশে মেয়ের চাকরি হয়েছে।' কিন্তু চিত্রা দমে যাওয়ার পাত্রী নয়। নিত্যদিন পুরুষতান্ত্রিক সিস্টেমের যাঁতাকলে পড়েও মাথা উঁচু করে কাজ চালিয়ে যেতে চায় সে। শহরে ঘটে যাওয়া একের পর এক নবপরিণীতার রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা ভাবায় তাকে। যেখানে তার উধস্তন কর্তৃপক্ষ সেসব মামলাকে 'ডিসমিস' করে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে শুধুই 'সুইসাইড' বলে চালিয়ে দেয়, সেখানে চিত্রা স্পর্ধার সঙ্গে প্রশ্ন তোলে। একসময়ে সে নিজেই নেমে পড়ে নিজের মতো করে তদন্ত অভিযানে। তবে বসের বিরুদ্ধে গিয়ে কাজ করার মাশুলও অবশ্য গুনতে হয় সাব ইনসপেক্টর বসুকে। বরখাস্ত করা হয় চাকরি থেকে। না, অধস্তন কর্মী বলে তাকে শাস্তি পেতে হয়নি। চিত্রাকে শাস্তি পেতে হয়েছে 'মেয়েমানুষ' হয়ে প্রশ্ন করার 'অপরাধে'। তাই তো চিত্রা যখন সিট কমিটির সদস্য হয়, তার পুরুষ সহকর্মীরা ঠাট্টা করে বলে- 'এবার থেকে মেনোপজ, মাসিক, শাড়ির গল্প শোনার জন্য রেডি হয়ে যান...।' প্যারালালি গল্পের খলচরিত্রকে পরিচয় করানো হয় ধীর লয়ে। তবে টিজার-ট্রেলার দেখে ততদিনে দর্শকরা আন্দাজ করে ফেলতে পেরেছে এই ডিভোর্সি নবপরিনীতাদের রহস্যজনক মৃত্যুর নেপথ্যে কে?

চিরায়ু তালুকদার (নীরঞ্জন মণ্ডল)। 'অনাথ' তরুণ। শৈশব থেকে সে-ও চিত্রার মতোই মায়ের সান্নিধ্য থেকে বঞ্চিত। এটা দুই চরিত্রের 'কমন' বৈশিষ্ট্য হলেও এখানে গল্পকার বাবাদের চরিত্রের মধ্যে দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন- 'সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে... গুনবান পতি যদি থাকে তার সনে।' দ্বিতীয় অংশ, যেটা সমাজ বলতে-বোঝাতে-শেখাতে ভুলে গিয়েছে। কিংবা কোনওদিন প্রয়োজনই বোধ করেনি হয়তো। চিরায়ুর বাবা শৈশব থেকে তাকে শিখিয়েছে মা ভিলেন। পরপুরুষে আসক্ত। তাই সংসার-সন্তান ত্যাগ করে সুখের ঘর বেঁধেছে সে। যে কারণে চিরায়ুর 'ভিলেন' মানসিকতা তৈরি হয়। অন্যদিকে চিত্রার বাবা তাকে পাঠ দিয়েছে, মা যেমন জীবন চেয়েছিল, তা পায়নি, তাই সে নিজেকে নিজের মতো গুছিয়ে নিয়েছে। চিন্তাধারা, শিক্ষার এহেন পার্থক্যেই তাই চিত্রা সমাজের মূলস্রোতে। আর চিরায়ু বৈপরীত্যে অবস্থান করে। সমান্তরালে এহেন পাঠ দেওয়ার জন্য অবশ্যই পরিচালক, গল্পকারের, বাহবা প্রাপ্য। তবে চিত্রা-চিরায়ু দু'জনের ক্যারেক্টার ডিজাইনই মনে প্রশ্ন জাগায়। প্রথমত, কিছু দৃশ্যে চিত্রার চুপ থাকা। আবার কখনও দুষ্ট দমনে অ্যাকশনের মারপ্যাঁচ দেখানো, এমন একই রঙ্গে বহুরূপ বিশ্বাসযোগ্য তখনই মনে হয়, যখন খুব যত্ন করে সেই চরিত্রের সবদিকগুলো গল্প অনুযায়ী এস্ট্যাবলিশ করা হয়। দ্বিতীয়ত, চিরায়ু। ভাড়া বাড়িতে তার একার বাস। ফুলের দোকান চালায়। ফুলের চাষও সে নিজেই করে বাড়িতে। বর্তমান প্রজন্মের এই বয়সি 'ছোকড়া'দের ক'জন এমন পেশার দিকে ঝোকেন বা ঝুকছেন বা ঝুকবেন? সে ব্যতিক্রম আছে বইকী! তবে রহস্যের পরত সাজাতে গিয়ে বিষয়টা বড্ড ম্যাড়ম্যাড়ে ঠেকে দেখতে দেখতে। উপরন্তু চিরায়ু আচমকাই কেন খুন করা শুরু করে? আগে কেন কোনও ডিভোর্সি মহিলা তার টার্গেটে ছিল না? সেসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায় না। বেশ কিছু সংলাপ শুনে দর্শক হিসেবে মনে হয়, চামচে করে নারীবাদ খাইয়ে দিতে হচ্ছে! নারীত্ব কিংবা নারীদের লড়াই ফুটিয়ে তোলার জন্য এত অতিরঞ্জনের প্রয়োজন হয় না। নির্ঝর মিত্র এর আগে 'শিকারপুর', 'ডাইনি' সিরিজে পরিচালক হিসেবে দক্ষতার ছাপ রেখেছেন। তাঁর ফ্রেমে ক্যামেরা-লাইটের কাজ থেকে চরিত্র-কাহন, সংলাপ প্রশংসিত হয়েছে। তবে আগের দু'টি সিরিজের মতো 'বীরাঙ্গনা' ঠিক জমল না। চিত্রনাট্যের গাঁথুনিও সেরকম পোক্ত নয়। সেকারণেই 'ডাইনি' দেখার পর সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার 'বীরাঙ্গনা' বড্ড হালকা মনে হয়। তবে শেষপাতে উল্লেখ্য, এই সিরিজের ম্যান অফ দ্য ম্যাচ কিন্তু নীরঞ্জন মণ্ডল ওরফে লাফটারসেন। ভবিষ্যতেও তাঁর এহেন সাবলীল অভিনয় দেখার প্রত্যাশা রইল।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • নির্ঝর মিত্র এর আগে 'শিকারপুর', 'ডাইনি' সিরিজে পরিচালক হিসেবে দক্ষতার ছাপ রেখেছেন।
  • আগের দু'টি সিরিজের মতো 'বীরাঙ্গনা' ঠিক জমল না। চিত্রনাট্যের গাঁথুনিও সেরকম পোক্ত নয়।
  • এই সিরিজের ম্যান অফ দ্য ম্যাচ কিন্তু নীরঞ্জন মণ্ডল ওরফে লাফটারসেন।
Advertisement