shono
Advertisement
Raktabeej 2 Review

ভারত-বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সন্ত্রাসদমনের রোমহর্ষক কাহিনি দেখাল 'রক্তবীজ ২'

'রক্তবীজ ২'-এর পরতে পরতে রহস্য! কেমন হল? পড়ুন রিভিউ।
Published By: Sandipta BhanjaPosted: 12:43 PM Sep 26, 2025Updated: 02:53 PM Sep 26, 2025

শম্পালী মৌলিক: ‘র’ ফাইল ঘাঁটতে ঘাঁটতে যেমন প্রকৃত সত্যের কাছে পৌঁছতে হয়, ‘রক্তবীজ টু’-তে তেমন হয়েছে। দুটো পাশাপাশি দেশের সম্পর্ক, দু’জন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের ব্যক্তিগত সম্পর্ক, এক সন্ত্রাসবাদী ও তার প্রেমিকার সম্পর্ক, রাজ্য ও কেন্দ্র পুলিশের সম্পর্কের সূক্ষ্ম সে-তার ধরে ‘মক ড্রিল’ পেরিয়ে দর্শক শেষপর্যন্ত দ্যাখে শুভ আর অশুভের চরম সংঘাত। সারা পৃথিবীজুড়ে সন্ত্রাসবাদের কালো ছায়ার বিরুদ্ধে মানুষ লড়ছে। নিরীহ মানুষের প্রাণ নেওয়ার মধ্যে কোনও কৃতিত্ব নেই– আর কতবার বলা হলে মানুষ বুঝবে কে জানে! মনের আঁধারের শিকড় অনেক গভীরে প্রোথিত। সেই গভীর অন্বেষণের বিষয়টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে আজকের পৃথিবীতে। ‘রক্তবীজ ২’-এর প্রেক্ষিতটা খয়রাগড় বিস্ফোরণের ষড়যন্ত্রের নানা থিওরির সূত্র থেকে এগিয়েছে।

Advertisement

প্রথম পর্বে গ্রামের বাড়িতে আসা রাষ্ট্রপতিকে হত্যার চেষ্টায় বাধা দিয়েছিল কেন্দ্রের ডিআইজি পঙ্কজ সিংহ ও রাজ্যের এসপি সংযুক্তা। এখানে মুনির আলম-সহ প্রথম পর্বের চরিত্ররা আছে। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের আদলে তৈরি চরিত্র অনিমেষ (ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়), তার দিদি (অনসূয়া মজুমদার), দিদির বাড়ির লোকজন (সত্যম ভট্টাচার্য, দেবলীনা কুমার, পারমিতা মুখোপাধ্যায়) সকলেই আছেন। আর অবশ্যই পঙ্কজ (আবির চট্টোপাধ্যায়) ও সংযুক্তা (মিমি চক্রবর্তী)। এবারে নতুন আসছে দিদির ডাক্তার (অঙ্কুশ হাজরা)। তার প্রেমিকা আয়েষা (কৌশানী মুখোপাধ্যায়)। আর পুলিশ নিত্যানন্দ (কাঞ্চন মল্লিক), রিয়া (অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়) এবং পুরো টিম থাকছে। এবারে ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা ইন্ডিয়ায় হলেও মিশন অর্থাৎ ঘটনাস্থল বাংলাদেশ। রাষ্ট্রপতি অনিমেষ আন্ডার নাইন্টিন ওয়ার্ল্ড কাপের সময় বাংলাদেশে সফরে যাচ্ছেন। মাস্টারদা সূর্য সেনের স্মৃতি ইত্যাদি পরিদর্শন করছেন। সেই সময় ক্ষমতায় সুলতানা রহমান (সীমা বিশ্বাস) যে চরিত্র শেখ হাসিনার আদলে তৈরি। আর রয়েছেন বিরোধী দলনেত্রী ভূমিকায় স্বাগতা মুখোপাধ্যায়। প্রথম পর্বে যেখানে মুনির আলম আবির্ভূত হয়েছিল, ফলত এই পর্বে সে স্বরূপ দেখায়। ছবি যত এগোয় স্পষ্ট হয় অমোঘ সত্য, সন্ত্রাসবাদীদের কোনও দেশ হয় না। মানুষ একদিনে সন্ত্রাসবাদী তৈরি হয় না, তার অতীত ইতিহাস তাকে কীভাবে প্ররোচিত করে দিনে দিনে সেই ছবি উঠে এসেছে। তবে তার ভিতরের অন্তর্দ্বন্ধ আরও কিছুটা এক্সপ্লোর করা যেত। ‘মাইনষের থিক্যা মকসদ বড়’ কিংবা ‘সব দেশের নেতাই খুনি’ শুনতে শুনতে গায়ে কাঁটা দেয়। ছবি ছুঁয়ে গেছে বেআইনি অস্ত্র কারবারের প্রসঙ্গ, সীমান্ত অঞ্চলের সমস্যার কথা। একই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের নতুন যুগ, তিস্তার জলবন্টন চুক্তি, প্রসঙ্গও এসেছে। শেষত, দুই দেশের পুলিশের কাঁধে কাঁধে মিলিয়ে সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ের বার্তা ভালো লাগে। একটা চমৎকার সংলাপ রয়েছে পঙ্কজের মুখে ‘যতদিন গঙ্গা বইবে, পদ্মা বইবে ভারত-বাংলাদেশ একসাথে লড়বে।’

অ্যাকশন, সিরিয়াস ইস্যু, দুই দেশের সম্পর্ক, তার মধ্যে প্রেম, রোমান্স, কমেডি সবটাই ধরতে চেয়েছেন পরিচালকদ্বয়। সব রঙিন তাস মেলে ধরলে রামধনু লাগে সিনেমায়, ঠিক সেটাই হয়েছে। কমিক রিলিফ কম হলে সিরিয়াস ইস্যুর দ্রবণ আরও জমাট হত। তবে শেষের মিনিট পাঁচেকে এতই রোমহর্ষক টুইস্টে ভরা, পুরো পয়সা উশুল যাকে বলে। এক্কেবারে টোটাল এন্টারটেনার! এবার আসা যাক অভিনয় প্রসঙ্গে, ছিপছিপে চেহারার অ্যাকশন-মুখর পঙ্কজ যথার্থই সিংহ। আবির ফুল মার্কস পাবেন। মিমি সমুদ্র তীরে যতটা আকর্ষণীয়, ততটাই অ্যাকশন দৃশ্যে। ‘চোখের নীলে’ গানে দারুণ তাঁদের রসায়ন। আর চমকে দিয়েছেন অঙ্কুশ। তাঁর ঠাণ্ডা ভিলেন-অবতার মনে দাগ কাটে। তাঁর আরও সুযোগ প্রাপ্য। কৌশানী কিন্তু জলের মতো চরিত্র ধরে নিচ্ছেন, দেখা গেল। ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায় যতটুকু আছেন অভিজাত উপস্থিতি তাঁর। সীমা বিশ্বাসের বিশেষ কিছুই করার ছিল না। তবে যতটুকু আছেন ঠিকঠাক। স্বল্পপরিসরে স্বাগতা মুখোপাধ্যায় চমৎকার। বাংলাদেশের পুলিশের চরিত্রে সুব্রত দত্ত, সঞ্জীব সরকার সাবলীল। ছোট্ট চরিত্রে সুপ্রভাতকে বেশ লাগল। অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায় পুলিশের চরিত্রে বেশ স্মার্ট। সত্যম, দেবলীনাও তাঁদের চরিত্রে যথাযথ। ‘চোখেরনীলে’ গানটা শুনতে ভালোই। সারা ছবিতে যতিচিহ্নের মতো জেগে রইল নুসরত জাহানের 'অর্ডার ছাড়া বর্ডার'। প্রতীপ মুখোপাধ্যায় ক্যামেরার দায়িত্ব ভালোই সামলেছেন। জিনিয়া সেন ছবির কাহিনী-চিত্রনাট্য লিখেছেন।গল্পের জোর আছে। তবে প্রয়োগ আরও ভালো হতে পারত। অনিমেষ আর দিদির রসায়ন তৈরির জন্য কিছু মুহূর্তের প্রয়োজন ছিল।তবে শেষে 'ওস্তাদের মার' সব খামতি পুষিয়ে দিয়েছে! তৃতীয় পর্বের অপেক্ষা রইল। গল্পের জোর এবং পরিচালক জুটির ম্যাজিকে নন্দিতা রায়-শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের অ্যাকশন থ্রিলার উত্তীর্ণ হয় অন্যমাত্রায়। কীভাবে সেটা প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে দেখাই ভালো।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • আবির ফুল মার্কস পাবেন। মিমি সমুদ্র তীরে যতটা আকর্ষণীয়, ততটাই অ্যাকশন দৃশ্যে।
  • চমকে দিয়েছেন অঙ্কুশ। তাঁর ঠাণ্ডা ভিলেন-অবতার মনে দাগ কাটে। তাঁর আরও সুযোগ প্রাপ্য।
  • কৌশানী কিন্তু জলের মতো চরিত্র ধরে নিচ্ছেন। ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায় যতটুকু আছেন অভিজাত উপস্থিতি তাঁর।
Advertisement