অভিরূপ দাস: চুলোচুলি নয় কোলাকুলি। নির্বাচনের নতুন বর্ণপরিচয় লিখলেন ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim)। যার ব-এ বিরোধী। স-এ সম্প্রীতি। ভোটের রবিবারে যতটা না তাঁকে পেল দলের কর্মীরা। তার চেয়ে বেশি পেলেন বাম-কংগ্রেসীরা। জল খাবার তো বটেই, সিপিএম পার্টি অফিসের সামনের রাস্তা সাড়ানোর আবদারও করে ফেললেন গুটি কয়েক নেতা। পেয়ারিমোহন রায় রোড, জইনুদ্দিন মিস্ত্রি লেন থেকে চেতলার শংকর বোস লেন। বিদায়ী মেয়রের দু’পা পুরভোটের দিন যেনো এগারো নম্বর বাস!
দুপুর ১টা থেকে দেড়টার মধ্যে ভোট দিতে আসবেন। তেমন একটা গুঞ্জন ছিলই। যেটা ছিল না সেটা ফিরহাদের পাড়া ভ্রমণের টাইম টেবিল। অফ হোয়াইট রঙের কুর্তা। তার উপর কালো মেরুনের মিশেলে ওভারকোট। স্নিকার পায়ে ফিরহাদ হাকিম পাড়া বেড়াতে বেরিয়েছিলেন ১২ টা নাগাদ। ৮২ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী (TMC Candidate) এদিন ‘রুট বদল করে বারবার ঢুকে পরেছেন একাধিক সিপিএম পার্টি অফিসে। কেন এমন? ফিরহাদ বলছেন, “হোক না বিরোধী। ওরা তো আমার পাড়ার মানুষ।”
[আরও পড়ুন: ‘টাকার বিনিময়ে প্রার্থী করেছে বিজেপি’, কলকাতা পুরভোটের দিন ফের বোমা ফাটালেন রূপা]
এক পার্টি অফিসে লাল চা খাচ্ছিলেন জনা চারেক কমরেড। করমর্দন করে ফিরহাদের প্রশ্ন, “কী খাচ্ছেন? সকাল থেকে শুধু চা খেলে চলবে। আমি খাবার পাঠিয়ে দিচ্ছি।” কোথাও বা সিপিএম পার্টি অফিসে পা রেখে তাঁর সপাট বার্তা, “কোনও অসুবিধে হলে আমায় বলবেন। এক ফোনে হাজির হবো।” এলাকার ববি দার ‘জবান’, দিনভর ভরসা যুগিয়েছে কমরেডদের। চেতলার সিপিএম কর্মী মধুসূদন বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, সারাবছরই তাঁরা একসঙ্গে। ভোটের দিনও আলাদা নয়। এটা আজকের কথা নয়। ৮১ সাল থেকে চলছে। বিরোধী শাসক সম্পর্কের মানদন্ডে ফিরহাদকে ১০০ তে ১১০ দিচ্ছেন তাঁর এলাকার বিরোধীরা। এদিন অলিতে, গলিতে যেখানেই তাঁকে দেখেছে জনতা।চার থেকে চল্লিশের নানান সম্বোধনে ফিরহাদ বুঝিয়েছেন তিনি অপ্রতিরোধ্য। এ আত্মীয়তার টান মানে না রাজনীতির রঙের গণ্ডি।
বছর কুড়ি আগের গল্প। এক কংগ্রেস কর্মী তাঁর পথ অবরোধ করেছিল। সময়ের ফেরে তিনিও আজ তৃণমূলে (TMC)। ঘুরছেন ফিরহাদের আশ পাশেই। সেই পথেই পুরভোটের দিন হাঁটতে বেরিয়ে স্মৃতি ফিরে এল বিদায়ী মেয়রের। “মনে পড়ে?” ফিরহাদের ছোট্ট প্রশ্নে? চোখ ছলছল করে সে কর্মীর। ভোটের দিন এ ওয়ার্ডে কান পাতলে আড্ডার আওয়াজ, চায়ের কাপের ঠুংঠাং। বোমের শব্দ ধারনাতীত। ভোট দিয়ে বেরিয়ে ফিরহাদ বলেছেন, “ভোট তো উৎসব। কেন অশান্তি হবে? আমার তো মনে হয় বিরোধীরা নিজেরাই অশান্তি করে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। সেই যে..নাচতে না জানলে উঠোন ব্যাকা। জানেন তো?”