সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: গত বেশ কয়েকদিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় কয়েকটি গ্রুপে একটি খবর ঘুরপাক খাচ্ছে। সেখানে বলা হচ্ছে, রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে নাকি তারকেশ্বর মন্দিরের ট্রাস্টের চেয়ারম্যান হিসাবে নিযুক্ত করা হয়েছে। এই নিয়ে বেশ কিছু ফেসবুক গ্রুপে আপত্তিজনক মন্তব্যও ছুড়ে দিচ্ছেন কেউ কেউ। বিজেপি সাংসদ সুব্রহ্মণ্যম স্বামী এই খবরের জেরে দ্রুতই কলকাতাতেও আসবেন বলে টুইটারে আগাম হুমকি দিয়ে রেখেছেন।
কিন্তু সত্যিটা কী? সত্যি কি ফিরহাদকে মন্দির ট্রাস্টের চেয়ারম্যান হিসাবে নিযুক্ত করা হয়েছে?
একটি জাতীয় সংবাদমাধ্যমের খবর কিন্তু অন্য কথা বলছে। সেখানে দাবি করা হয়েছে, সদ্য গঠিত তারকেশ্বর উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসাবে নিযুক্ত করা হয়েছে ফিরহাদকে, মন্দির ট্রাস্টের নয়। তারকেশ্বর উন্নয়ন পর্ষদের কাজ হবে এলাকার পরিকাঠামোগত উন্নয়ন ঘটানো। রাস্তার রক্ষণাবেক্ষণ, নিয়মিত পানীয় জল, আবর্জনা সাফাই ও প্রতিদিন রাস্তাঘাট সাফ-সুতরো রাখাই হবে পর্ষদের মূল কাজ। এর সঙ্গে তারকেশ্বরের শিব মন্দিরের কোনও যোগ নেই বলেই দাবি করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। মন্দিরের দায়িত্ব বহাল রয়েছে বেসরকারি ট্রাস্টের হাতে। সেক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের কোনও ভূমিকা নেই।
তবে এই ঘটনা নিয়ে জলঘোলা কিছু কম হচ্ছে না। তারকেশ্বর উন্নয়ন পর্ষদের আওতায় ২৮৮ বছরের শিব মন্দিরটিও পড়ছে বলে দাবি করছেন একাধিক বিজেপি নেতা। সুব্রহ্মণ্যম স্বামী তো মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই সিদ্ধান্ত ফিরিয়ে নিতে ৪৮ ঘন্টার ডেডলাইনও দিয়ে ফেলেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনি পথে যাচ্ছে বিজেপি। কৈলাশ বিজয়বর্গীয় এক টুইটে জানিয়েছেন, বন্দর এলাকাকে যে ব্যক্তি ‘মিনি পাকিস্তান’ বলে চিহ্নিত করেছেন, তাঁকেই তারকেশ্বর মন্দির বোর্ডের চেয়ারম্যান করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপির রাজ্য সম্পাদক সায়ন্তন বসু দাবি তুলেছেন, মসজিদের দৈনন্দিন কাজে মাননীয়া একজন অ-মুসলিমকে বসানোর সাহস দেখাতে পারবেন তো? তাঁর মতে, এই সিদ্ধান্ত শুধু সাম্প্রদায়িকই নয়, হিন্দুদের ভাবাবেগেও আঘাত করতে পারে।
আরএসএস-এর এক মুখপাত্র দেবাশিস চৌধুরি বলেছেন, “তারকেশ্বর মন্দিরের কর্তৃত্ব নিজেদের হাতে রাখতে চাইছে রাজ্য সরকার। কিন্তু একজন মুসলিমকে মন্দিরের চেয়ারম্যান নিযুক্ত করে দুর্বল প্রশাসনিক চরিত্রের পরিচয় দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ফুরফুরা শরিফের চেয়ারপার্সন হিসাবে একজন হিন্দুকে নিয়োগ করে দেখান মুখ্যমন্ত্রী।”
গত পয়লা জুন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হুগলির প্রশাসনিক সভায় কমিশনারেট, একটি বিশ্ববিদ্যালয়, একটি মেডিক্যাল কলেজ ও তারকেশ্বর উন্নয়ন পর্ষদ গঠনের কথা ঘোষণা করেন। পাশাপাশি, তারকেশ্বর মন্দিরকে ৫ কোটি টাকা আর্থিক সাহায্য দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর ইঙ্গিত, নয়া পর্ষদ মন্দিরের দেখভাল করবে। ফিরহাদ হাকিমকে ওই পর্ষদের চেয়ারম্যান ও বেচারাম মান্নাকে ভাইস চেয়ারম্যান নিযুক্ত করা হয়। বিরোধীদের অভিযোগ, যে ফিরহাদ নারদা-কাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত, তাঁকে কী করে মুখ্যমন্ত্রী একটি নয়া পর্ষদের মাথায় বসিয়ে দিতে পারেন? সিবিআই যে ১২ জন তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করেছে তার মধ্যে ফিরহাদ হাকিমের নামও রয়েছে বলে সূত্রের খবর।
The post তারকেশ্বর মন্দির ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ফিরহাদ হাকিম! জানেন সত্যিটা কী? appeared first on Sangbad Pratidin.