বাবুল হক, মালদা: ঘরের ভিতর নববধূ, আর দরজার বাইরে মেয়ে কোলে দাঁড়িয়ে পুরনো বউ৷ স্বামী কার, তা নিয়ে শুরু দুই বউয়ের কথা কাটাকাটি৷ একসময় স্বামীর দু’হাত ধরে দুই বউয়ের টানাহ্যাঁচড়াও শুরু হয়ে যায়৷ নাটকের টানটান দৃশ্য তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করতে দেখা যায় পড়শিদের। এমনই ঘটনার সাক্ষী পুরাতন মালদহের (Maldah) খয়রাতি পাড়ার বাসিন্দারা৷ শেষপর্যন্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি সামাল দেয়৷ ঘটনা নিয়ে এখনও আলোচনায় মশগুল এলাকাবাসী৷
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, খয়রাতি পাড়ার বাসিন্দা ইব্রাহিম শেখ বিহারের (Bihar) কাটিহারে একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন৷ বেশ কয়েক বছর আগে পাড়ারই যুবতী টিনা বিবির সঙ্গে তাঁর বিয়ে (Marriage) হয়েছিল৷ তাঁদের একটি মেয়ে আছে। কিন্তু দাম্পত্য কলহের জেরে চার বছর ধরে টিনা বিবি স্বামীর সঙ্গে থাকেন না৷ মেয়ে নিয়ে তিনি বাপের বাড়িতেই থাকেন৷ বিভিন্ন কারণে তিনি স্বামী সহ শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও করেছেন৷ সব মামলা বর্তমানে বিচারাধীন৷ ইব্রাহিমের সঙ্গে তাঁর বিবাহ বিচ্ছেদ নিয়ে কথাবার্তাও হয়েছে৷ কিন্তু এখনও পর্যন্ত ইব্রাহিম ও টিনার মধ্যে আইনত ডিভোর্স (Divorce) হয়নি৷
[আরও পড়ুন: বিশেষ কারণে নবান্নে আসছেন না অমিত শাহ, স্থগিত পূর্বাঞ্চলীয় নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক]
এরই মধ্যে ইব্রাহিম কাটিহারে কাজ করতে গিয়ে সেখানকার বাসিন্দা সাহেরা খাতুনকে শরিয়ত (Sharia) মতে বিয়ে করেন। এরপর নিজের পৈতৃক বাড়ি পুরাতন মালদহের খয়রাতি পাড়ায় নিয়ে আসেন নববধূকে৷ তারপরই ঝামেলার শুরু৷ স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, বিবাহবিচ্ছেদ না হতেই স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করে ঘরে বউ আনার খবর পেয়েই মেয়ে কোলে সেখানে চলে আসেন টিনা৷ চার বছর ধরে স্বামী কিংবা শ্বশুরবাড়ির সংস্রব না থাকলেও টিনা স্বামীর উপর নিজের অধিকার রাখতে কার্যত মারমুখী হয়ে ওঠেন৷ সব দেখেশুনে ঘাবড়ে যান নতুন বউ সাহেদাও৷ তিনিও স্বামীর অধিকার ছাড়তে নারাজ৷ এনিয়ে তুমুল হইচই শুরু হয়ে যায় সেখানে৷ প্রতিবাশীরাই খবর দেন মালদহ থানায়৷ ঘটনাস্থলে এসে পুলিশ দু’পক্ষের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা করে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেয়৷ টিনাকেও সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যান পুলিশকর্মীরা৷ এরপরেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে৷
[আরও পড়ুন: সোশ্যাল মিডিয়াকে কাজে লাগাচ্ছে জঙ্গিরা! রাষ্ট্রসংঘে সতর্ক করলেন বিদেশমন্ত্রী]
টিনার বক্তব্য, “আমার একটা মেয়ে রয়েছে৷ স্বামীর সঙ্গে আইনগত বিবাহবিচ্ছেদও হয়নি৷ এরই মধ্যে ও দ্বিতীয় বিয়ে করে বউ নিয়ে ঘরে তুলেছে৷ আমি মেয়ে নিয়ে এখন কোথায় যাব? খবর পেয়ে আমি বাড়িতে ঢুকেছিলাম৷ আমার শ্বশুর বাধা দেয়৷ আর ননদ আমাকে মেরে বাড়ি থেকে বের করে দেয়৷ সম্প্রতি স্বামী আমার সঙ্গে হাসপাতালে দু’রাত থেকেছে৷ আমার কাছে সেই প্রমাণ রয়েছে৷ খোরপোশের দাবিতে আমি আদালতে মামলা করেছি৷ সেই মামলা বিচারাধীন৷ ওরা একমাস সময় চেয়েছে৷ তারমধ্যেই স্বামী আরেকটা বিয়ে করেছে৷ আমি চাই, আমার স্বামীকে গ্রেপ্তার করা হোক৷ আর ওর দ্বিতীয় বউকেও ওকে ডিভোর্স দিতে হবে৷ আমি বারবার বলেছি, আমি ওর সঙ্গে সংসার করব৷ কিন্তু ওরা আমার কাছে ৯০ হাজার টাকা দাবি করেছে৷ আমি কিছু জানি না৷ স্বামীকে গ্রেফতার করে আমার সঙ্গে সংসার করতে বাধ্য করাতে হবে পুলিশকে৷”
এদিকে সাহেরা জানান, “ও আমাকে বলেছিল, ওর বিয়ে হয়েছে৷ একটা বাচ্চাও আছে৷ প্রথম বউকে তালাক দিয়েছে৷ তারপরেই আমি ওকে বিয়ে করি৷ ওর প্রথম বউ চার বছর ধরে স্বামীর ঘরে থাকে না৷ আমাকে বিয়ে করে এই ঘরে আনা হয়েছে৷ আমি স্বামীর সঙ্গে এই বাড়িতেই সংসার করব৷”