রঞ্জন মহাপাত্র, কাঁথি: ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্র হবে না, এই দাবিতে জুনপুট (Junput) ভূমিরক্ষা কমিটি গড়ে আন্দোলনের সুর চড়াতে শুরু করলেন মৎস্যজীবীরা। রবিবার থেকে জুনপুটে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। এদিনের সভা থেকে জীবন জীবিকা বাঁচানোর লক্ষ্যে বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়েছে। হরিপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র বিরোধী আন্দোলনের মতই ক্ষেপণাস্ত্র (Missile) উৎক্ষেপণ কেন্দ্র স্থাপনের বিরুদ্ধেও এবার পথে নামতে চলেছেন মৎস্যজীবীরা। এদিন তারই প্রস্তুতি সভা হল বলে দাবি তাঁদের। স্থানীয় মৎস্যজীবী লক্ষ্মীরানি পন্ডা বলেন, ”দীর্ঘদিন ধরে আমরা জুনপুট এলাকায় অস্থায়ী বাড়ি বানিয়ে রয়েছি। সংসার চালানোর জন্যে একমাত্র ভরসা সমুদ্র। এখান থেকে আমাদের তুলে দিলে আমরা কয়েকশো মৎস্যজীবী পরিবার ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্রের আগুনে পুড়ে মরে যাব।”
কাঁথির জুনপুট সমুদ্র সৈকতে DRDO ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্র তৈরির কাজ শুরু করেছে। এখান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষানিরীক্ষা করবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। এই কেন্দ্র তৈরি হলে মৎস্যজীবীদের (Fishermen) জীবন, জীবিকা বিপন্ন হবে। এই কেন্দ্রের স্থান পরিবর্তনের দাবিতে পথে নামতে শুরু করেছেন মৎস্যজীবীরা। জুনপুট উপকূলে ৫০ বছরের বেশি বংশ পরম্পরায় অস্থায়ী বাড়ি বানিয়ে বসবাস করেন মৎস্যজীবীরা। সকালে সমুদ্র থেকে মাছ ধরে আনলে তা দিয়ে সংসার চলে। পাশাপাশি নৌকার করে মাছ ধরে তা বালিতে শুকিয়ে শুঁটকি মাছে রূপ দিয়ে বাজারে বিক্রি করে মৎস্যজীবীরা উপার্জন করেন। কিন্তু ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্র স্থাপিত হলে মৎস্যজীবীদের উচ্ছেদ হতে হবে বলে আশঙ্কা। এমনকী রুটিরুজিতেও টান পড়বে বলে আতঙ্কিত উপকূলের মৎস্যজীবীরা। তাই প্রতিবাদ সভার মধ্য দিয়ে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আন্দোলনের পথে নামতে চলেছেন মৎস্যজীবীরা।
[আরও পড়ুন: কবে থেকে অনুপমের সঙ্গে প্রেম? মুখ খুললেন হবু স্ত্রী প্রস্মিতা]
এদিনের প্রতিবাদ সভায় দাঁড়িয়ে কাঁথি মহকুমা মৎস্যজীবী উন্নয়ন সমিতির চেয়ারম্যান আমিন সোয়েল বলেন, ”আমরা দেশের প্রতিরক্ষার পক্ষে। অন্যান্য দেশে একটি করে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্র রয়েছে। সেখানে ভারতে ওড়িশার চাঁদিপুর এবং তামিলনাড়ুতে রয়েছে। জুনপুটে আবার একটি তৈরি হচ্ছে। কিন্তু আমরা বলতে চাই, জুনপুটে দীর্ঘদিন ধরে বংশ পরম্পরায় সমুদ্রে মাছ ধরার উপর নির্ভর করে এখানে মানুষ বসবাস করেন। ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্র করে কেন্দ্রীয় বাহিনী এলাকা ঘিরে রাখবে। ফলে মৎস্যজীবীদের রুটিরুজি বন্ধ হয়ে যাবে। মৎস্যজীবীরা স্বাধীনভাবে জীবন যাপন করতে পারবে না।”
[আরও পড়ুন: ফের প্রেম ভাঙল সলমনের! দুবাইয়ে ইউলিয়াকে এভাবে এড়ালেন? ভাইরাল ভিডিও]
তাঁর আরও বক্তব্য, ”আপনাদের বলে রাখি, হরিপুর পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা কিন্তু একেবারে বন্ধ হয়ে যায়নি। গুগলে গিয়ে দেখবেন পেন্ডিং দেখাচ্ছে। তার মানে যে কোনও সময় পরমাণু কেন্দ্র হতে পারে। আমাদের আশঙ্কা ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্র স্থাপনের নামে এলাকা দখল করে পরমাণু কেন্দ্র স্থাপন করবে। তাই আমাদের জীবন জীবিকা বাঁচানোর জন্যে রাজনৈতিক রং না দেখে একত্রিত আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্র হোক, আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু যেখানে জনবসতি নেই, সেখানে স্থানান্তরিত করা হোক। না হলে আগামী দিনে মৎস্যজীবীদের স্বার্থে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।”