shono
Advertisement
Durga Puja 2024

ধোঁয়া ওঠা ভাত আর বড়া-ভাপার সর্ষের ঝাঁজ! পুজোয় চারদিনই নিরামিষেই বাজিমাত

অভিজ্ঞ মহিলারা তাঁদের ঝুলি থেকে বের করতেন আশ্চর্য সব রেসিপি।
Published By: Biswadip DeyPosted: 08:26 PM Sep 26, 2024Updated: 02:27 PM Sep 27, 2024

অরিন্দম গোস্বামী: দুর্গাপুজোর(Durga Puja 2024) সময় চারটে দিন ছিল নিরামিষ খাওয়ার দিন। অনেক জায়গায় নবমীর দিন নিরামিষ মাংস খাওয়ার কথা শুনেছি। কিন্তু আমাদের এলাকায় বলি দেওয়া হত আখ আর চালকুমড়ো। ছাগবলি হত না। পুজো হয়ে গেলে প্রসাদ বিতরণ করা ছিল আমার পছন্দের কাজ। অষ্টমীর দিন বসিয়ে খাওয়ানো হত খিচুড়ি, লাবড়া আর কোনও একটা ভাজা। 

Advertisement

বাড়িতে এর সঙ্গেই রান্না হত নানা ধরনের। বোধহয় নিরামিষ বলেই, বিভিন্ন ধরনের পদের বৈচিত্রের দেখা মিলত এই সময়ের রান্নায়। এক একটা দিন রান্না করা হত এক এক ধরনের শাক। সদ্য বাজারে ওঠা ফুলকপি ও বাঁধাকপি বিশেষভাবে এই সময় থেকেই কিনে আনা হত। আর ছিল গোল গোল সবুজ রঙের মাকড়া বেগুন। ডুবো তেল থেকে তোলা অর্ধ-বৃত্তাকার সেই গরম বেগুন ভাজা শাল পাতার থালায় পড়ে অদ্ভুত সুবাস ছড়াত। আমরা বিশ্বাস করতাম, আঙুলের ডগা দিয়ে সেই ভাজা একটুখানি ভেঙে দিলেই, তার ভেতর থেকে ঘি বেরিয়ে আসবে। 

এর ওপর সে সময় অভিজ্ঞ মহিলারা তাঁদের ঝুলি থেকে বের করতেন নিজস্ব দক্ষতার পরিচয়। যেমন আমার ঠাকুমার খ্যাতি ছিল ডালের বড়া দিয়ে তৈরি বিভিন্ন ধরনের পদের জন্য। বিভিন্ন রকমের ডালের বড়ার চরিত্র বিভিন্ন। কিন্তু ঠাকুমা বলতেন- রান্নার কারুকাজ আছে কলাই ডালের বড়ায়। আগের রাতে ঈষদুষ্ণ গরম জলে ভিজিয়ে রাখতেন ডালটা। পরে সেটা বেটে অনেক সময় নিয়ে ফাঁটতেন বলেই বোধহয়, সেই বড়া হত তুলতুলে নরম। আর সেটা ভাঙলেই দেখা যেত, ভেতরে পাঁউরুটির মতো (নাকি উই ঢিবির মতো) সুড়ঙ্গ আর সুড়ঙ্গ! 

বাবার চাকরির জন্য আমাদের ছোটবেলা কেটেছে বাংলার বাইরে। আশেপাশের কোয়ার্টারে বিভিন্ন রাজ্যের বাসিন্দা। তাদের কাছ থেকে শিখে মা একবার ঠাকুমার ওই টেকনোলজি ব্যবহার করে তৈরি করেছিল 'দহি বড়া'। সেটাও অপূর্ব সুন্দর একটা খাবার। কিন্তু আমার মনে হয় ঘি দিয়ে ভাত মেখে বড়ার চেয়ে ভালো স্বাদ আর কিছুতে কি আছে? এটা উপেক্ষা করে আবার নতুন একটা পদ তৈরি করার আদৌ কোনও দরকার আছে? 

আমার এই ভাবনাটা অপ্রতিরোধ্য থেকে যেত, যদি না ঠাকুমা সেই সময় তৈরি করতেন 'বড়া-ভাপা'! গরম জলে ভিজিয়ে রাখা কলাই ডাল বাটার সঙ্গে মেশাতে হবে সামান্য একটু আদাবাটা, লঙ্কা বাটা আর হিং। সেটা ডুবো তেলে ভেজে নিতে হবে হালকা করে। নুন দিতে হবে সামান্য। কেননা, রান্নার সময় আবার সে নুন টানবে। এবার একটা ঢাকা দেওয়া যায় এমন কৌটার ভেতরে বড়াগুলো রেখে তার ওপর ঢেলে দিতে হবে সর্ষে-পোস্ত-কাঁচা লঙ্কা বাটা। ওই বাটাতেও দিতে হবে পরিমাণ মতো নুন। এবার তার ওপর সামান্য কাঁচা সর্ষের তেল ঢেলে, কয়েকটা গোটা কাঁচা লঙ্কা ওপরে সাজিয়ে রেখে, কৌটোর ঢাকনা আটকে দিতে হবে। এবার একটা কড়াইয়ে আধভর্তি জল নিয়ে তার ওপর ওই কৌটোটা বসিয়ে মিনিট পনেরো ফুটতে দিতে হবে। নামিয়ে নিয়ে সেটাকে ততক্ষণ পর্যন্ত রেখে দিতে হবে, যতক্ষণ না সবাই মিলে একসঙ্গে খেতে বসছে। 

আসলে যে কোনও ভাপা রান্নার ওটাই একমাত্র চাহিদা। খোলার সময় গন্ধটা যেন সবাই পেতে পারে। কৌটোটা খুলতে একটু অসুবিধা হতে পারে, হয়তো অসাবধানতাবশত তেল লেগে তার বাইরেটা পেছল হয়ে যেতে পারে। এর জন্য এখন ক্লিপ দেওয়া এক ধরনের কৌটা পাওয়া যায়, সেটা ব্যবহার করা যেতে পারে। 

নিরামিষ খাওয়ার দিনে এই পদ আসুক একেবারে শেষ পর্যায়ে। কেননা, এর পর আর সব কিছুই খুব ম্রিয়মাণ মনে হবে। ভাতটাও থাক ধোঁয়া ওঠা আর ভাপার মধ্যেও থাক আসল সর্ষের ঝাঁজ। নিয়ম মেনে ডায়েটিং তো অনেক হল। অনুগ্রহ করে এইদিন পাশের মানুষটাকে আর খাওয়ার পরিমাণ নির্ধারণ করে দিতে চাইবেন না। বছরের বিশেষ একটা দিনও যদি মানুষ একটুখানি অনিয়ম না করে, তাহলে তাকে আর উৎসব বলেছে কেন? 

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • নবমীর দিন নিরামিষ মাংস খাওয়ার কথা শুনেছি। কিন্তু আমাদের এলাকায় বলি দেওয়া হত আখ আর চালকুমড়ো। ছাগবলি হত না।
  • পুজো হয়ে গেলে প্রসাদ বিতরণ করা ছিল আমার পছন্দের কাজ।
  • অষ্টমীর দিন বসিয়ে খাওয়ানো হত খিচুড়ি, লাবড়া আর কোনও একটা ভাজা। 
Advertisement