shono
Advertisement
Durga Puja 2024

স্মৃতির চৌকাঠে পুজোর দিনগুলি, ছোলার ডাল রাঁধতে রাঁধতে গল্প শোনাতেন মামীমা

লুচি শেষ হলে আসত ভাজা মিষ্টি, চিত্রকুট বা পান্তুয়া।
Published By: Kishore GhoshPosted: 09:34 PM Sep 28, 2024Updated: 09:37 PM Sep 28, 2024

সায়ন্তন সরকার: পুজো হল স্মৃতি ঝালিয়ে নেওয়ার এক জন্তর মন্তর ঘর। মহালয়ার পর থেকে সেই ঘরে ঢুকে প্রত্যেকবার কিছু না কিছু ঠিক হাতে এসে পড়ে! কখনও ক্যাপ-বন্দুক, কখনও চ্যাপ্টা গোলাপ, আবার কখনও বন্ধুর আঙুল ঘুরে আসা সিগারেটের শেষ কাউন্টার। পুজো এলে স্মৃতির উঠোনে বসে শরতের মায়ায় নিজের শৈশবকে মনে হয় অন্য কারও! মাঝেমধ্যে সেই উঠোন থেকে চৌকাঠ পেরিয়ে আমি ঢুকে পড়ি আমার অতীতে, আমার ছোটবেলার পুজোয়।

Advertisement

একেবারে ছোটবেলায় হাফ ইয়ারলি পরীক্ষা শেষ হত পুজোর ঠিক এক সপ্তাহ আগে। সেই পরীক্ষা শেষের দিনে হাতে জুটত পূজাবর্ষিকী। তার আগে তন্ন তন্ন করে খুঁজেও আমি পেতাম না সেই অমূল্যরতন। বাবা যে কোথায় লুকিয়ে রাখত সেটা আজ অবধি জানি না। সেই যে আমার পুজো শুরু হয়ে যেত, কালীপুজোর আগে তা থামার নাম নিত না। কিন্তু খাওয়া দাওয়া ? সেটা তো আর এক সপ্তাহ আগে থেকে শুরু হত না। নিম্ন মধ্যবিত্ত বাড়িতে পুজোর আসল খাওয়া নবমীর দিন পাঁঠার মাংস। তার আগের যাবতীয় খাওয়া দাওয়াই উদ্যোগপর্ব। ক্রিকেটীয় পরিভাষায় যাকে বলে একটু দেখে খেলা। কিন্তু শৈশব আমিষকে নিরামিষের উপরে স্থান দিতে শেখেনি, সে তাই বোকার মতো বিয়ে বাড়িতে গিয়ে ফিশ ফ্রাই দিয়ে খাওয়া শুরু না করে দুটো কচুরি খেয়েই অর্ধেক পেট ভরিয়ে নিয়েছে। আর সেই একই নিয়মে নবমীর পাঁঠার মাংসের আগেই ষষ্ঠীতে সে সেরে ফেলেছে তার পুজোর সর্বশ্রেষ্ঠ আহার লুচি-ছোলার ডাল। সঙ্গে মামীমার আদর মাখানো ডাক---“কী রে আর একটা দিই?"

বাবার সুখী ছোট পরিবারে আদরের অভাব হলেই আমাকে দিয়ে আসা হত মামাবাড়ি। মামীমা খুব স্নেহ করত আমায়। ফলে পুজো শুরু হলেই আমি আদরের কোটা সম্পূর্ণ করতে ষষ্ঠীর সকালে নতুন গেঞ্জি আর হাফ প্যান্ট পরে মায়ের হাত ধরে পৌঁছে যেতাম মামাবাড়ি। মায়ের সঙ্গে একচোট গল্পের পর মামীমা ছোলার ডাল বানানো আরম্ভ করত। নারকোল কাটা, ডাল ভেজানো এসবের বড় কিছু না করলেও, বিড়ালের আক্রমণ থেকে সবকিছু রক্ষা করার দায়িত্ব আমিই বহন করতাম। অবাক বিস্ময়ে আমি তাকিয়ে থাকতাম কড়াইয়ের দিকে। আর রান্নার মাঝখানে মামীমা একটার পর একটা পুজোর গল্প শোনাতেন। সেই গল্প শেষ হওয়ার আগেই ডাল রান্না শেষ হয়ে যেত।

নারকলের কুচি ডালের উপর পড়ার পরই শুরু হত কড়াইতে সাদা তেল গরম করা। সেই সাদা তেলে একটা একটা করে বেলে রাখা লুচি পড়ত। আমি তীব্র আগ্রহে অপেক্ষা করতাম সেগুলো ফুলে ওঠার। ফুলে ওঠা লুচি জমতে আরম্ভ করতো কাঁসার থালায়। কিছুক্ষণের পরই আমার প্লেট থেকে পেটে চালান হয়ে যেত! লুচি শেষ হলে আসত ভাজা মিষ্টি, চিত্রকুট বা পান্তুয়া। সেসব খতম করে হাত ধোয়ার পর একটু ভাজা জোয়ান। তারপর সুখের দিবানিদ্রা দিয়ে শেষ হত আমার পুজোর শ্রেষ্ঠ আহার। এবং শুরু হত পুজো।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • একেবারে ছোটবেলায় হাফ ইয়ারলি পরীক্ষা শেষ হত পুজোর ঠিক এক সপ্তাহ আগে।
  • সেই পরীক্ষা শেষের দিনে হাতে জুটত পূজাবর্ষিকী।
  • তার আগে তন্ন তন্ন করে খুঁজেও আমি পেতাম না সেই অমূল্যরতন।
Advertisement