সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ভুল সময়ে জন্মেছেন রাহুল দ্রাবিড়। শচীন-সৌরভদের জৌলুসে তাই ‘আনসাং হিরো’ হয়েই রয়ে গিয়েছেন দ্য ওয়াল। জনৈক ক্রিকেটারের মুখে একবার এমন কথাই শোনা গিয়েছিল। আচ্ছা, একই কথা কি বলা যায় লুকা মদ্রিচের (Luka Modric) ক্ষেত্রেও?
বিশ্বজোড়া ফুটবল ভক্ত তাঁকে নিয়ে জয়জয়কার করছে। টিভির পর্দায় তাঁর পারফরম্যান্স নিয়ে তর্কে জড়াচ্ছেন বিশ্লেষকরা। তাঁর পোস্টার হাতে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে মিছিলে শামিল অনুরাগীরা। মেসি-রোনাল্ডো-নেইমারদের নিয়ে এহেন পাগলামি লক্ষ্য করা গেলেও এসব দৃশ্য দেখতে অভ্যস্ত নন মদ্রিচ। মজার বিষয় হল, তিনি এসব নিয়ে বিশেষ মাথাও ঘামান না। লাইমলাইটের খিদে কখনওই নেই তাঁর। তাই তো শিরোনামে থাকার লোভ কখনও তাড়া করেনি তাঁকে। দলকে জিতিয়ে সমস্ত কৃতিত্ব নিজে নেওয়ার চেষ্টা করেননি। বিতর্কে জড়িয়ে রাতের ঘুমও ওড়াননি। তাই হয়তো তাঁকে নিয়ে আলোচনার জন্য বিশেষ সময় নষ্ট করা হয় না। কিন্তু মেসি-রোনাল্ডোর (Cristiano Ronaldo) থেকে কি কোনও অংশে কম তাঁর শৌর্য? ৩৭ বছরের রোনাল্ডোর খেলা নিয়ে যখন বিস্তর কাঁটাছেঁড়া চলছে, তখন সমবয়সি লুকা মাঝমাঠে রীতিমতো ভেলকি দেখিয়েছেন। হয়ে উঠেছেন বিপক্ষের ত্রাস, দলের একের পর এক সাফল্যের সওদাগর। সে জন্য তাঁকে মহাতারকাদের তালিকাভুক্ত হতে হয়নি কখনও। সেই কারণেই তিনি অনন্য, অতুলনীয়।
[আরও পড়ুন: লিভারপুল নয়, ছেলের পছন্দের ইপিএল ক্লাব কেনার পথে মুকেশ আম্বানি]
মাঠে তিনি টিম ম্যান। আর মাঠের বাইরে ছাপোষা ‘ফ্যামিলি ম্যান’। জন্মের পরই যুদ্ধবিদ্ধস্ত ক্রোয়েশিয়ার (Croatia) করুণ চেহারাটা খুব কাছ থেকে দেখেছিলেন। সে জন্যই হয়তো মায়াবি জুতোয় পা গলিয়ে চলতে ভালবাসেন না। শিশিরে পা ভিজিয়েই তাঁর স্বস্তি। তাই তো পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলকে কোয়ার্টার ফাইনালে হারানোর পরও উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়তে দেখা যায়নি তাঁকে। বরং দৌড়ে চলে গিয়েছেন সাইডলাইনে দাঁড়িয়ে থাকা সন্তানদের কাছে। তাঁরাই তো সব। নাম-যশ-খ্য়াতি তো নেহাতই আপেক্ষিক। এই থাকে, এই উড়ে যায় কর্পূরের মতো। তাই ওসবের পরোয়া না করে তিনি দলের তরুণদের মতোই সাঁইত্রিশেও মন দিয়ে নিজের কাজটুকুই করেন। ডিব্রল করেন, কখনও ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার তো কখনও অ্যাটাকিং মিডিওর ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। কিন্তু তাঁর মরিয়া প্রয়াসেও ৪০ লাখের দেশ ক্রোয়েশিয়ায় ফুল ফুটল না। সেমিফাইনালে শেষ গতবারের রানার্স আপদের সফর।
রাশিয়া মনে রেখেছিল লুকার চোখের জলে ভেজা বিরহের ইতিহাস। চূড়ান্ত লড়াইয়ে তাঁদের মুখের সামনে থেকে ছোঁ মেরে ট্রফি নিয়ে গিয়েছিল ফ্রান্স। বেদুইনে দেশেও ভাগ্যের চাকা ঘুরল না। সেই ইতিহাসেরই পুনরাবৃত্তি ঘটল। বিরহের রাতে আরও একবার ট্র্যাজিক নায়ক হয়েই রয়ে গেলেন মদ্রিচ। এবার মেসি নামক ম্যাজিকে চাপা পড়ল তাঁর দাঁতে দাঁত চাপা লড়াই। অথচ এককালের বার্সেলোনায় খেলা এই মেসির (Leo Messi) বিরুদ্ধেই কত না জয়ের কাহিনি রচনা করেছিলেন তিনি। ১০ বছর ধরে বিয়াল মাদ্রিদের বিশ্বস্ত সৈনিক হিসেবে কত না ট্রফি এনে দিয়েছেন। মাঝমাঠের স্তম্ভ হয়ে জিতে নিয়েছেন ব্যালন ডি’অরও। তবে নিজের শেষ বিশ্বকাপ (সম্ভবত) থেকেও খালি হাতেই ফিরতে হচ্ছে তাঁকে।
[আরও পড়ুন: সীমান্ত পেরিয়ে অনুপ্রবেশ করেছিল ভারতীয় সেনাই, তাওয়াং সংঘর্ষে চাঞ্চল্যকর দাবি চিনের]
মেসিকে নিয়ে মেতে ওঠার রাতে আরও একবার আড়ালে রয়ে গেল তাঁর কৃতিত্ব। আপনি হয়তো তথাকথিত হিরো নয়, কিন্তু আপনার মধ্যে রয়েছে নিষ্ঠাবান অন্তরালের নায়ক সত্ত্বা। তাই ভবিষ্যৎ ফুটবল বিশ্ব আপনাকে কুর্নিশ জানাবে।