সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ক্রীড়াপ্রেমীদের দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে শনিবার শহরে পা রেখেছিলেন লিওনেল মেসি। কথা ছিল তাঁকে নিয়ে খুশিতে মেতে উঠবে ‘আনন্দ নগরী’। কিন্তু সেটা সম্ভব হল কই? বদলে প্রাপ্তি শুধুই হতাশা। মেসি কনসার্টকে কেন্দ্র করে যেভাবে যুবভারতীতে বিশৃঙ্খলা (Yuva Bharati incident) তৈরি হয়েছে, তা নিয়ে রাজনীতি করতে নেমে পড়েছেন সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন সভাপতি কল্যাণ চৌবে (Kalyan Chaubey)।
রবিবার দুপুরে ক্রীড়া সংগঠক ও রাষ্ট্রবাদী প্রচারক হিসাবে তিনি রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলেন কল্যাণ চৌবে। তিনি বলেন, "মেসি ও রোনাল্ডো বিশ্ব ফুটবলে দুই কিংবদন্তি। তাঁদের নিয়ে দুই ভাগ হয়ে যান সমর্থকরা। যতগুলো ফুটবলখেলিয়ে দেশ রয়েছে, সব দেশেই তাঁদের অসংখ্য ফুটবল সমর্থক রয়েছে। অনেকেই কাছেই তাঁরা সর্বকালের সেরা। ফুটবল ২১১টা দেশে খেলা হয়। তাই এমন কোনও ঘটনা ঘটলে আন্তর্জাতিক স্তরে নজরে পড়বেই। কলকাতাকে আমরা ভারতীয় ফুটবলের মক্কা বলে জানি। এখানে পেলে, মারাদোনা, লেভ ইয়াশিন, অলিভার কান, রজার মিল্লা বেবেতো-সহ অনেক লেজেন্ডারি ফুটবলাররা এসেছেন। এমন খেলোয়াড়দের আনার একটা প্রটোকল থাকে। এর কোনওটাই মানা হয়নি। সেই কারণেই বিশ্বের কাছে সম্মানহানি হতে হল। শনিবার সল্টলেক স্টেডিয়ামে যে ঘটনা ঘটেছে, তা সহজেই এড়ানো যেত।"
তিনি আরও বলেন, "এর প্রভাব আগামী ৫০ বছর পশ্চিমবঙ্গে থাকবে। ভারত কমনওয়েলথ গেমস আয়োজন করছে। ভারতে একাধিক ইন্টারন্যাশনাল ইভেন্ট আয়োজিত হবে। বড় কোনও আন্তর্জাতিক ইভেন্টের জন্য বিড করা হলে সেখানে অন্য দেশগুলিও থাকে। সেই সময় প্রশ্ন উঠতে পারে, কলকাতা বা পশ্চিমবঙ্গ কি সত্যিই আন্তর্জাতিক মানের প্রতিযোগিতা আয়োজন করার জন্য তৈরি? এখানকার ব্যবস্থাপনা কি পরিণত? খেলা হল একটা দেশের সফট পাওয়ার। সেখানে উল্লেখযোগ্যভাবে উপরের সারিতে রয়েছে ফুটবল। ২১১টা দেশে খবরটা ছড়িয়ে গিয়েছে। এটা ব্যক্তির বা রাজনৈতিক দলের ক্ষতি নয়। পশ্চিমবঙ্গে আন্তর্জাতিক খেলার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াবে এই ঘটনা।"
মেসি কনসার্ট ছিল সম্পূর্ণরূপে একটি প্রাইভেট অনুষ্ঠান। যে অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য ফেডারেশন সভাপতি বেশ কয়েকবার ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগও করেছিলেন অনুষ্ঠানের প্রধান উদ্যোক্তা শতদ্রু দত্তর সঙ্গে। কিন্তু ফেডারেশনে আপাতত কল্যাণ-বিরোধী বলে পরিচিত সাজি প্রভাকরণ এবং রঞ্জিত বাজাজকে মেসির দিল্লি সফরে অ্যাডভাইসর করেছেন শতদ্রু। এতেই প্রতিশোধের সুযোগ খুঁজছিলেন কল্যাণ। অনেকেই বলছেন, হয়তো এই কারণেই কল্যাণ এদিন শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে সাংবাদিক সম্মেলনে এসেছিলেন। উল্লেখ্য, মেসির গোট কনসার্টে ঘটে যাওয়া বিশৃঙ্খলা, ভিড় নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন শুভেন্দু। তিনি বলেন, "শতদ্রুকে গ্রেফতার করেই বলির পাঁঠা করা হয়েছে।" এই কেস আদৌ 'ধোপে টিকবে না' বলে মন্তব্য করেন তিনি। তাছাড়াও বলেন, ক্তব্য, "অরূপ বিশ্বাস এবং সুজিত বসুকে গ্রেফতার করতে হবে।"
উল্লেখ্য, হাতে গেরুয়া পতাকা, কণ্ঠে জয় শ্রীরাম ধ্বনি স্লোগান দিতে দিতে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের ব্যারিকেড ভেঙে মাঠে ঢুকে পড়ছিল উন্মত্ত জনতা। শনিবারের এই দৃশ্য ভাইরাল হয়েছে নেটদুনিয়ায়। গোটা বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছিলেন তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। তাঁর স্পষ্ট বার্তা, বাংলা-বিরোধী বিজেপি বাংলাকে বদনাম করতে যেকোনও সীমা ছাড়াতে পারে। রবিবার সোশাল মিডিয়ায় তিনি লেখেন, 'যুবভারতী মেরামতির টাকা সরকারি কোষাগার থেকে যাবে কেন? যারা মাঠের মধ্যে মেসির সঙ্গে ছবি তুলছিল, নিজেদের ছবি তোলাচ্ছিল, সব ফুটেজ থেকে তাদের লিস্ট হোক। তারা কে, কোন অধিকারে ওখানে ছিল, প্রকাশ্যে আসুক। ওদের জন্য দর্শকরা বঞ্চিত। ওরাই দর্শকদের দেখতে দেয়নি। মূল আয়োজক এবং ওদের কাছ থেকে স্টেডিয়ামের ক্ষতিপূরণের টাকা তোলা হোক। একটা প্রভাবশালীও যেন ছাড় না পায়। সঙ্গে ভাঙচুরে যে কিছু গুন্ডা দেখা যাচ্ছে, তাদের থেকেও জরিমানা নেওয়া হোক।"
তাছাড়াও সংবাদমাধ্যমের সামনে কুণাল ঘোষ বলেন, "ফুটবল নিয়ে যেন বিজেপি কথা বলে। আইএসএল হচ্ছে না কেন? এআইএফএফ প্রেসিডেন্ট কল্যাণ চৌবে ভারতবর্ষকে কত নিচে নামবে আর?" অন্যদিকে, সুর চড়িয়েছেন বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুর বিধানসভা কেন্দ্রের সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস নেতা তন্ময় ঘোষও। তাঁর মতে, গোটা বিষয়টিই এখন তদন্তাধীন। অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অসীম কুমার রায়ের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই মতোই তদন্ত চলছে। উন্মত্ত জনতাদের মধ্যে গেরুয়া পতাকাও যেমন দেখা গিয়েছে, তেমনই জয় শ্রীরাম ধ্বনিও শোনা গিয়েছে।
