সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: তাঁরা ফুটবলের গোটা একটা প্রজন্মকে শাসন করেছেন। কেরিয়ারের সায়াহ্নে এসে একজন ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন, মহাদেশের সেরা হওয়ার যুদ্ধে আর শামিল হবেন না।
অন্যজন কিছু ঘোষণা না করলেও ফুটবলবিশ্ব ধরেই নিয়েছে, কোপার ট্রফি জিততে তিনি হয়তো আর মাঠে নামবেন না। বিশ্বফুটবলের সেই দুই মহীরূহের মধ্যে অনেক তফাত। তবে কোথায় গিয়ে যেন তাঁদের মিলিয়ে দিল ইউরো আর কোপার ফাইনাল। মাঠে নেমে নয়, যন্ত্রণাবিদ্ধ হয়ে ডাগ আউটে বসেই তাঁদের দেখতে হল দলের মরণপণ লড়াই। দেখলেন তাঁদের ছাড়াও দেশ জিততে পারে।
কোন বিন্দুতে এসে এক হয়ে গেলেন লিওনেল মেসি আর ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো? উত্তর খুঁজতে ফিরে যেতে হবে আট বছর আগের এক মায়াবী রাতে। ২০১৬ সালের ১০ জুলাই, ইউরো কাপের (Euro Cup) ফাইনালে রোনাল্ডোর পর্তুগাল। প্রথমবার ইউরো জয়ের স্বপ্ন বুকে নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন সিআর সেভেন। গোটা টুর্নামেন্টে দুরন্ত ফুটবল উপহার দেওয়া রোনাল্ডোই জেতাবেন অধরা ইউরো, সেই আশায় বুক বেঁধেছিলেন পর্তুগালবাসী। কিন্তু নিষ্ঠুর নিয়তির খেলায় ১৮ মিনিটেই চোট পেয়ে কাতরাতে কাতরাতে মাঠ ছাড়তে হল। ইউরো বুঝি আবারও হাতছাড়া, আশঙ্কায় ভুগতে শুরু করল পর্তুগাল।
[আরও পড়ুন: কোপায় বেলাশেষের গান, মেসি-মায়ার আর্জেন্টিনা স্বর্গে ‘দেবদূত’-এর নাম দি মারিয়া]
কাট টু ২০২৪। ১৪ জুলাই টানা দ্বিতীয়বার কোপা (Copa America 2024) জিততে মাঠে নামল বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা। যদিও গোটা টুর্নামেন্টে সেভাবে জ্বলে উঠতে পারেননি এলএম টেন। কিন্তু ফাইনালে সেরাটা উজাড় করে দিতে মাঠে নেমেছিলেন। অদৃষ্টের পরিহাসে তাঁকেও চোখের জলে মাঠ ছাড়তে হল। তাঁর সঙ্গে কান্নায় ভাসল গোটা গ্যালারি। মার্কিন মুলুক ছাড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ল বুয়েনস আইরেসও। মেসির মাঠ ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে টানা দ্বিতীয়বার কোপা জয়ের স্বপ্নও কি ভেঙে গেল?
আট বছর কেটে গেলেও ফুটবল দেবতা দুই কিংবদন্তির জন্য লিখে রেখেছিলেন একই চিত্রনাট্য। ২০১৬ ইউরো ফাইনালে চোট পাওয়া রোনাল্ডো মাঠের বাইরে থেকে লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে তাতিয়েছিলেন গোটা দলকে। সেদিন পর্তুগালের অঘোষিত কোচ হয়ে ওঠা রোনাল্ডোর জন্য একজোট হয়ে জান লড়িয়ে দিয়েছিল গোটা দল। ফ্রান্সের বিরুদ্ধে দাঁতে দাঁত চেপে অধিনায়ক রোনাল্ডোর হাতে ট্রফি তুলে দিয়েছিলেন এডাররা। স্বভাবসিদ্ধ শান্ত মেসি অবশ্য় রোনাল্ডোর মতো উত্তেজিত মেজাজে ধরা দেননি। কিন্তু তাঁর চোখের জলই যেন আগুন ছড়িয়ে দিয়েছিল আর্জেন্টিনার পারফরম্যান্সে। কলম্বিয়া ডিফেন্সকে চিরে দিয়ে অধিনায়কের জন্য জয় ছিনিয়ে আনলেন মার্টিনেজ।
শেষ পর্যন্ত দুই ফাইনালের স্কোরলাইন দাঁড়াল ১-০। দলের সেরা দুই অস্ত্র, আর্মব্যান্ডধারীদের জন্য তাঁদের বাহিনীর শ্রদ্ধার্ঘ্য- চ্যাম্পিয়নের ট্রফি। চোট পাওয়া মেসি-রোনাল্ডো মিশে গেলেন এক বিন্দুতে, নিজের মহাদেশের সেরা দল হওয়ার সম্মান নিয়ে। যন্ত্রণার চোখের জল সংগ্রাম শেষে জয়ের আনন্দাশ্রুতে বদলে গেল।