দুলাল দে: অবশেষে ইস্টবেঙ্গলের শতবর্ষের 'মশাল' আসতে চলেছে প্রেক্ষাগগ্রহে। হ্যাঁ ঠিকই পড়ছেন। জাতীয় পুরস্কারজয়ী প্রখ্যাত পরিচালক গৌতম ঘোষের পরিচালনায় ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের উপর নির্মিত তথ্যচিত্র 'মশাল' কিছুদিনের মধ্যেই মুক্তি পাবে বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে। আসার সম্ভাবনা ওটিটি প্ল্যাটফর্মেও। তার আগে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন বা সিনেমার ভাষার বদি বলি প্রিমিয়ার, তা অনুষ্ঠিত হবে ২৫ এপ্রিল 'নন্দন-ওয়ান' এ। বিকেল ৬টায়। সেই উপলক্ষ্যে, রাজ্যের মন্ত্রীরাই শুধু নয়, সমর্থকদের ভিড়ে কানায় কানায় পূর্ণ নন্দনে যেমন উপস্থিত থাকবেন বিভিন্ন সময়ের প্রাক্তন ফুটবলাররা, সেরকম ইস্টবেঙ্গল মনোভাবাপন্ন বিভিন্ন চিত্রতারকা। বাংলা সিনেমার উজ্জ্বল তারকা আবির চট্টোপাধ্যায়, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, কৌশিক সেন, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই তাঁদের উপস্থিতি নিয়ে সম্মতি জানিয়ে দিয়েছেন। ইস্টবেঙ্গল সমর্থক পরিচালক-অভিনেতা শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের নামও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে থাকার তালিকায় রয়েছে। কিন্তু তাঁর পুজোর সিনেমা 'রক্তবীজ-২' এর শুটিংয়ের ব্যস্ততা থেকে সময় বের করে আদৌ তিনি উপস্থিত হতে পারবেন কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।

ইস্টবেঙ্গলে ক্লাবের শতবর্ষ ঘিরে যে যে পরিকল্পনা পাঁচ বছর আগে নেওয়া হয়েছিল, তারমধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল গৌতম ঘোষের পরিচালনায় তথ্যচিত্র, 'মশাল।' ২০২০-তে লাল-হলুদের শতবর্ষে ক্লাবকে ঘিরে তথ্যচিত্রর কাজ শুরুও করে দিয়েছিলেন গৌতম ঘোষ। কিন্তু সেই সময় হঠাৎই কোভিডের আক্রমণ বিধ্বস্ত করে দেয় যাবতীয় পরিকল্পনা। শুধু যে শুটের কাজ আটকে যায় এরকমটা নয়। কোভিডের থাকায় সারা বিশ্বের আর্থিক পরিকাঠামো ভেঙে পড়ে। যার ভয়ঙ্কর প্রভাব থেকে রক্ষা পায়নি ইস্টবেঙ্গল ক্লাবও। একদিকে কোভিড। আরেকদিকে আর্থিক ধাক্কা। ফলে সাময়িকভাবে আটকে যায় তথ্যচিত্র তৈরির কাজ। যে কাজটা শেষ পর্যন্ত ভালোভাবে শেষ করতে লেগে গিয়েছে পাঁচ-পাঁচটি বছর। নাম দেওয়া হয়েছে, 'মশাল'।
ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের জন্য যে তথ্যচিত্রটি গৌতম ঘোষ বানিয়েছেন, তার সময়সীমা ৫৮ মিনিটের মতো। শতবর্ষের ক্লাবের উপর তথ্যচিত্র তৈরি করতে গিয়ে তথ্যগত দিক থেকে স্বাভাবিকভাবেই অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে জাতীয় পুরস্কার বিজয়ী পরিচালককে। ধরা হয়েছে দেশভাগের মুহূর্তকেও। কীভাবে ওপার বাংলা থেকে বাঙালরা এসে জীবনের দৈনন্দিন সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে এই শতাব্দীপ্রাচীন ইস্টবেঙ্গল ক্লাব গড়ে তুলেছেন। তথাচিত্রে থাকবে সেইসব সংগ্রামী দিনগুলির ইতিহাস। থাকবে বেশ কিছু প্রাক্তন ফুটবলারের অভিজ্ঞতাকে কেন্দ্র করে সাক্ষাৎকার। ৫৮ মিনিটের এই তথ্যচিত্রে মোটামুটিভাবে চেষ্টা করা হয়েছে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের ১০০ বছরের সামগ্রিক ইতিহাসকে তুলে ধরতে।
তথ্যচিত্র তৈরি তো হল। এরপরই ক্লাব কর্তারা আলোচনা করেন, বিশ্বজুড়ে লাখ-লাখ ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা এই তথ্যচিত্র দেখবেন কি করে? তাহলে কি ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের পেজে আপলোড করে দেওয়া হবে পুরো তথ্যচিত্রটি। দেবব্রত সরকাররা চাইছেন, একটু বড় আকারেই প্রকাশ করার। এই সূত্রেই ক্লাবের পরিকল্পনা হয়েছে, যে কোনও ফিচার ফিল্মের মতোই ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের তথ্যচিত্র 'মশাল' প্রদর্শিত হবে বিভিন্ন সিনেমা হলে। তবে কোন কোন সিনেমা হলে এই তথ্যচিত্র দেখানো হবে, তা এখনও ঠিক হয়নি। পাশাপাশি ভাবনা রয়েছে 'ওটিটি'-তে দিয়ে দেওয়ার যাতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের সমর্থকরা অনায়াসে দেখে নিতে পারেন তাঁদের ক্লাবের উপর তৈরি তথ্যচিত্র। কিন্তু তার আগে ২৫ এপ্রিল নন্দনে 'প্রিমিয়ার' ঘিরে প্রস্তুতি তুঙ্গে। ঠিক হয়েছে, সেদিন তথ্যচিত্র শুরুর আগে নন্দন চত্বরে ক্লাবের উপর তৈরি বিভিন্ন গান বাজানো হবে। থাকবে বাজি প্রদর্শনী। বলতে গেলে ২৫ এপ্রিল নন্দন চত্বর চলে যাবে লাল-হলুদ সমর্থকদের দখলে। তারপরেই ৬টা থেকে প্রদর্শিত হবে 'মশাল'। ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের পাশাপাশি উপস্থিত থাকবেন মহানাগরিক ফিরহাদ হাকিম। থাকবেন তথা সংস্কৃতি মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেনও। সঙ্গে একাধিক চিত্রতারকা। অনুষ্ঠানকে ঘিরে ইস্টবেঙ্গলের প্রহর গোনা শুরু।