দুলাল দে: আইএসএল সংক্রান্ত মামলার পরের শুনানি দুই সপ্তাহ পর। সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা গত শুনানির দিন কোর্টকে বলেছেন, আইএসএল নিশ্চিত করছে কেন্দ্র। এমন বার্তার পর মনে হতেই পারে এই দুই সপ্তাহের মধ্যে ফেডারেশনের সব সমস্যা মিটে যাবে, তা কিন্তু নয়।
এই দুই সপ্তাহের মধ্যে আইএসএল সমস্যার সবকিছু সমাধান হয়ে যাবে তার সম্ভাবনা খুব কম। আইএসএলের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে ফেডারেশনের অনেক বিষয় জড়িয়ে আছে। যেমন এই আইএসএল আয়োজন করার জন্য এফএসডিএল বার্ষিক পঞ্চাশ কোটি টাকা করে দিত ফেডারেশনকে। সেই অর্থ দিয়ে ফেডারেশনের চলত। ফেডারেশনের খরচ বলতে শুধুমাত্র কর্মীদের বেতন নয়। আই লিগ আয়োজন থেকে আরম্ভ করে জাতীয় দলের খরচ তো আছেই, এছাড়াও একাধিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হত এই টাকায়। ফেডারেশনের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক খাতে ব্যয় করা হত এই টাকা থেকেই। স্বাভাবিকভাবে এবারের আইএসএল কোনও ক্রমে শুরু হয়ে গেলেও ফেডারেশনের মূল সমস্যা কিন্তু অনেক গভীরে। শুধু আইএসএল আয়োজনই বড় কথা নয়, সেখান থেকে অর্জিত অর্থ থেকে ফেডারেশন চালানোটাও একটা বড় দিক। প্রফুল্ল প্যাটেলের সময় এফএসডিএল আসায় এই টাকার জোগানটা শুরু হয়েছিল।
পরিস্থিতি যে দিকে যাচ্ছে, তাতে করে হয়তো এবছর কোনও ক্রমে সম্ভবত আইএসএলটা শুরু করে দেওয়া হতে পারে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি ছাড়া ফেডারেশন এগিয়ে নিয়ে যাওয়া খুব কঠিন কাজ। ভারতীয় ফুটবলের উন্নয়নও থমকে যাবে। এখন আরেকটি দিক হল, কেন্দ্র দায়িত্ব নিলেও আইনত কোনও একটা কোম্পানিকে আইএসএল আয়োজন করার জন্য দিয়ে দিতে পারে না ফেডারেশন। সেক্ষেত্রে আইন মোতাবেক ফের টেন্ডার ডাকতে হবে। সেই টেন্ডার থেকে যে কোম্পানি দায়িত্ব পাবে, তারাই আয়োজন করবে আইএসএল। কেন্দ্র আসায় বিভিন্ন কর্পোরেট কোম্পানিগুলো আগ্রহ দেখাবে। তাদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রক কথা বলে রাখতে পারে। ফলে আইএসএল আয়োজন করার ক্ষেত্রে সুবিধা হবে। সেক্ষেত্রে হয়তো এবারের লিগ আয়োজনের জন্য তারা আসতে পারে। তারপর আগস্টের পর যখন ফেডারেশনের নতুন কমিটি আসবে, তখন হয়তো সেই কোম্পানি তাদের চুক্তি বৃদ্ধি করতে পারে।
তবে ফেডারেশনের হাতে সময় খুবই কম। নভেম্বরের শেষ দিক হতে চলল। এখন যদি ফেডারেশন ফের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির জন্য কর্পোরেট সংস্থাগুলোর সঙ্গে আলোচনা করতে বসে, তাহলে সেই আলোচনা করতে করতেই বছর ঘুরে যাবে। ফলে লিগ আয়োজন সম্ভব নয়। কিন্তু আগস্টের পর হাতে সময় পাবে ফেডারেশন। দুই সপ্তাহের পর যদি এই মামলার ফের শুনানি হয়, আশা করা যাচ্ছে সরকারি কর্তারা বিভিন্ন কর্পোরেট সংস্থার সঙ্গে আলোচনাই করে রাখবেন সমগ্র বিষয়টি। আগামী শুনানির পর যদি কোর্ট পরবর্তী প্রক্রিয়া চালাতে অনুমতি দেয়, তাহলে ফের টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। সেই প্রক্রিয়া শেষ হতে ন্যূনতম এক সপ্তাহ লাগবে। সেটাও দেখতে দেখতে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ কেটে যাবে। তারপর ক্রিসমাসের ছুটি আছে। কোর্ট ছুটি পড়ে যাবে। হাতে সময় খুব বেশি নেই। তাই আশা করা যাচ্ছে, যেভাবে হোক লিগটা শুরু করতে হবে। যদি ফেডারেশন এখনও দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির দিকে তাকিয়ে থাকে, তাহলে এবারের লিগও চালু করা খুবই কঠিন। আর আইএসএল যদি না বিক্রি করতে পারে, তাহলে ফেডারেশনে অর্থ আসবে কীভাবে? এফএসডিএল তাদের চুক্তি মতো ডিসেম্বর পর্যন্ত অর্থ দিয়ে রেখেছে। তাই ফেডারেশনের আর্থিক সমস্যা নেই এই মুহূর্তে। যদি এফএসডিএল বা তাদের মতো কোনও কর্পোরেট কোম্পানি আসে এ মরশুমের লিগটা আয়োজন করতে, তাহলে হয়তো স্পেশাল কেস হিসাবে এই সমস্যাটা উদ্ধার হবে। তবে ফেডারেশনের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি না হলে সমস্যা মিটবে না কোনও মতেই।
