সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: প্রথমে সমতা ফেরানো। তারপর সুইজারল্যান্ড গোলরক্ষককে উল্টোদিকে ফেলে নিজের ডানদিকের জালে বলটা জড়িয়ে দিয়ে গ্যালারির দিকে তাকালেন বুকায়ো সাকা। দু’হাত কানের কাছে নিয়ে এসে যেন গ্যালারিকে জিজ্ঞেস করলেন, “কিছু কি বলবে?”
আসলে শনি রাতের গোল যে সাকার কাছে শুধু নিজের দেশকে সেমিফাইনালে তোলার পথ সুগম করে দেওয়া নয়। এ যেন অবশেষে শাপমুক্তি। প্রায় বছর তিনেক আগের কথা। সেদিন ইতালির বিরুদ্ধে ফাইনালে টাইব্রেকার মিস করেছিলেন সাকা। তারপর তাঁকে শুনতে হয়েছিল বর্ণবিদ্বেষমূলক কটুক্তিও। সেদিন থেকে কষ্টটা বুকের মধ্যে বিদ্ধ হয়েছিল।
[আরও পড়ুন: আন্তর্জাতিক মহিলা ফুটবলে জঙ্গলমহলের মৌসুমী, দেশের জার্সি গায়ে নামবেন মায়ানমারের বিরুদ্ধে]
তাই তো সুইজারল্যান্ডের বিরুদ্ধে টাইব্রেকারে গোল করার পর বাঁধনহারা উচ্ছ্বাস করতে দেখা যায়নি সাকাকে। শুধু যেন কান পেতে গ্যালারির বক্তব্য শুনতে চাইছিলেন। ম্যাচের (Euro Cup 2024) পর বললেন, “আগেরবার কী হয়েছিল, সবার মনে আছে। মানুষ একবারই ব্যর্থ হতে পারে। এরপর হয় সে সেই পরিস্থিতি এড়িয়ে যায়, নাহলে ওই একই পরিস্থিতিতে নিজেকে আবার ফেলে এবং নিজেকে প্রমাণ করে। আমার নিজের উপর বিশ্বাস ছিল, তাই নিজেকে ওই পরিস্থিতিতে ফেলে তা অতিক্রম করে এলাম।”
যাঁরা সেদিন সাকাদের ওভাবে আক্রমণ করেছিল, তাদের উদ্দেশ্যে ২২ বছর বয়সী ফুটবলার সেভাবে কিছু না বললে কী হবে? মুখ খুলেছেন সে রাতে টাইব্রেকার মিস করার পর আক্রান্ত হওয়া আরেক ইংরেজ ফুটবলার জ্যাডন স্যাঞ্চো, ইংরেজ কিংবদন্তী ডিফেন্ডার রিও ফার্দিনান্দরা। সামাজিকমাধ্যমে স্যাঞ্চো লিখলেন, ‘এই ছেলেটার উপর আমি খুব গর্বিত। ভাই বুকায়ো সাকা তুই আমার আর মার্কাসের হয়ে জবাব দিয়ে দিলি।’ আসলে ২০২১ সালের ১২ জুলাই ১২০ মিনিট পর্যন্ত ১-১ থাকার পর টাইব্রেকারে ২-১ এগিয়ে যায় ইংল্যান্ড। এরপরই একে একে টাইব্রেকার মিস করেন মার্কাস রাশফোর্ড, জ্যাডন স্যাঞ্চো এবং বুকায়ো সাকা। এরপরই তাঁদের দিকে ধেয়ে আসে বর্ণবিদ্বেষমূলক আক্রমণ। সেদিনও যার প্রতিবাদ করেছিলেন অনেক প্রাক্তনী। এদিনও মুখ খুললেন ফার্দিনান্দ। লিখলেন, ‘বর্ণবিদ্বেষমূলক আক্রমণ করা সেই লোকগুলো আজ কোথায়? এখনও উৎসব করছে?’
ফুটবল ইতিহাসে এখনও পর্যন্ত মাত্র দু’বার কোনও বড় প্রতিযোগিতার ফাইনালে খেলেছে ইংল্যান্ড। প্রথমবার ১৯৬৬ সালের বিশ্বকাপে। সেবার ববি ম্যুরের নেতৃত্বে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল থ্রি লায়ন্সরা। দ্বিতীয়বার ২০২১ সালের ইউরো ফাইনালে। দু’বারই খেলা ছিল লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে। অর্থাৎ যে দু’বার ফাইনাল খেলেছে ইংল্যান্ড দু’বারই ঘরের মাঠে। এবার সেই রেকর্ড ভাঙতে মরিয়া গ্যারেথ সাউথগেট। সুইজারল্যান্ডের বিরুদ্ধে ছিল ইংল্যান্ডের কোচ হিসেবে তাঁর শততম ম্যাচ। সেই ম্যাচ উতরে যাওয়ার পর এবার সাউথগেটের নজর ১৪ জুলাই বার্লিনের ফাইনালের দিকে। বলছিলেন, “আমরা কখনও ইউরো চ্যাম্পিয়ন হইনি। আমরা কখনও ঘরের মাঠের বাইরে ফাইনাল খেলিনি। এবার তা করতে পারলে একসঙ্গে দু’টো রেকর্ড গড়া যাবে।” অবশ্য শুধু কোচ কেন, সেমিফাইনাল ভুলে ফাইনালে যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে গোটা ইংল্যান্ড শিবির। জুড বেলিংহ্যাম ম্যাচের পর বলছিলেন “গত তিন সপ্তাহে স্পেন দুরন্ত ফুটবল খেলেছে। সম্ভবত ওদের সঙ্গেই আমরা ফাইনালে খেলব। রেজাল্ট যা খুশি হতে পারে। আমাদের নিজেদের সেরাটা দিতে হবে।”
সাধারণত এই ধরনের পরিস্থিতিতে যে কোনও দল একটি একটি করে ম্যাচ নিয়ে প্রস্তুতি নেয়। তবে বেলিংহ্যামের বক্তব্যে মনে করা হচ্ছে বুধবার নেদারল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচকে গুরুত্বই দিচ্ছেন না তাঁরা। এখন থেকেই যেন চার বছর আগের না পাওয়ার হতাশা মেটাতে তৈরি হচ্ছেন ইংরেজরা। ঠিক এখানেই সিঁদুরে মেঘ দেখতে পাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের বক্তব্য, এই ধরনের শরীরি ভাষা আদতে আত্মতুষ্টির প্রতিফলন। যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিপদ
ডেকে আনে।