দুলাল দে: এফএসডিএলের সঙ্গে ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের চুক্তি রয়েছে ২০২৫-এর ডিসেম্বর পর্যন্ত। নিয়মমতো তার ৬ মাস আগের থেকে চুক্তি নবীকরণ নিয়ে দু’পক্ষের আলোচনা শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু এফএসডিএলের চুক্তি নবীকরণ নিয়ে ভারতীয় ফুটবল সার্কিটে নানারকম খবর ঘুরে বেড়াচ্ছে। যে কারণে, এফএসডিএলের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে এখনই আলোচনায় বসতে চাইছে ফেডারেশন। আলোচনায় বসতে চায়, এই মর্মে সময় চেয়ে এফএসডিএল-কে মেলও পাঠানো হয়েছে ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের পক্ষ থেকে। কিন্তু এফএসডিএলের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত মিটিং নিয়ে কোনও ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি। নিয়মমতো চুক্তি শেষের ৬ মাস আগে মিটিংয়ে বসা হবে, সেই কারণেই এই মুহূর্তে ফেডারেশনের সঙ্গে মিটিং এড়িয়ে চলছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু ঘটনা হচ্ছে, চুক্তি নবীকরণ নিয়ে এফএসডিএলের সঙ্গে ফেডারেশন মিটিং করার ইচ্ছে প্রকাশ করলেও এফএসডিএলের তরফে কোনও সাড়া শব্দ আসছে না।
২০১০-এ ভারতীয় ফুটবলে এফএসডিএল আসার আগে চুক্তি ছিল ‘জি স্পোর্টস’-এর সঙ্গে। ফেডারেশনের সঙ্গে দীর্ঘদিন জড়িত আছেন, এরকম লোকজন বলছেন, পরিস্থিতি একদম জি স্পোর্টস-এর শেষের দিনগুলির মতো। তখন দেশের ফুটবল পরিকাঠামো উন্নত ছিল না। ফলে বারবার বলেও রাতে আই লিগের ম্যাচ সম্প্রচার করতে পারেনি জি স্পোর্টস। ভারতীয় ফুটবল থেকে কোনওরকম আর্থিক লাভ না পেয়ে চুক্তি থাকা সত্ত্বেও শেষ দিকে ফেডারেশনকে কোনও অর্থ দিত না জি স্পোর্টস। ফলে আই লিগও ঠিকভাবে করা অসম্ভব হয়ে যাচ্ছিল। এই সময় ফেডারেশনে শুরু হয় প্রফুল্ল প্যাটেল-কুশল দাস যুগ। আর এই সময়ই ভারতীয় ফুটবলে প্রবেশ রিলায়েন্সের। তারা ৮০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়ে জি স্পোর্টস থেকে ১৫ বছরের জন্য যাবতীয় স্বত্ব কিনে নেয়। এর পরেও প্রথম চার বছর আইএসএল শুরু না করলেও বার্ষিক ৫০ কোটি টাকা দিয়ে গিয়েছে এফএসডিএল। আইএসএল শুরু হয় ২০১৪-তে। আগামী বছর ডিসেম্বরের ফেডারেশনের সঙ্গে এফএসডিএলের ১৫ বছরের চুক্তি শেষ হচ্ছে। নিয়ম অনুযায়ী এফএসডিএলকেই আগে প্রস্তাব দিতে হবে চুক্তি নবীকরণের। কোনও কারণে এফএসডিএল রাজি না হলে তখন অন্য কোনও সংস্থার সঙ্গে চুক্তির ব্যাপারে এগিয়ে যাওয়া হবে।
কিন্তু এফএসডিএল কর্তারা নিজেদের মধ্যে সমীক্ষা করে দেখেছে, বর্তমান ভারতীয় ফুটবল যে অবস্থায় রয়েছে, তাতে বার্ষিক ৫০ কোটি টাকা দিয়ে তার থেকে লভ্যাংশ পাওয়া সত্যিই কষ্টের। ভারতীয় ফুটবলের সব প্রতিযোগিতার স্বত্ব তাদের অধীনে থাকলেও জাতীয় দল আর আইএসএল রেখে বাকি সব প্রতিযোগিতা ধীরে ধীরে ফেডারেশনের হাতে দিয়ে দিচ্ছে তারা। জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপগুলি আগেই দিয়ে দিয়েছিল, এই মরশুমে আইলিগও ফেডারেশনের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে স্পনসরশিপের ক্ষেত্রে কিছু অংশ এফএসডিএলকে দিতে হবে।
ফেডারেশন কর্তারাও মোটামুটি ধরে নিয়েছিলেন, আলোচনায় বসলে হয়তো এফএসডিএল জানাবে, জাতীয় দল আর আইএসএল রেখে চুক্তির টাকা কমিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু বর্তমানে ভারতীয় দল ফিফা ক্রমতালিকায় ১২৭-এ পৌঁছে গেছে। ফলে শোনা যাচ্ছে, এফএসডিএল নাকি জাতীয় দল নিয়েও সবরকম আগ্রহ হারাতে শুরু করেছে। ফেডারেশনের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে যখন এত চারিদিকে সমালোচনা হচ্ছে, তখন জাতীয় দল চলে গিয়েছে ১২৭ এ! ফলে ভারতীয় ফুটবল নিয়ে মানুষের বিরক্তি দিন দিন বাড়ছে। এর ফলেই নাকি এফএসডিএল তাদের নতুন চুক্তিতে জাতীয় দলকেও বাইরে রাখে শুধুই আইএসএল-কে রাখতে পারে। সেক্ষেত্রে চুক্তির অঙ্ক শেষ ১৫ বছরের আর্থিক চুক্তির অর্ধেকেরও কম হতে পারে। আর এসব শুনতে পেয়ে স্বাভাবিকভাবেই চিন্তিত হয়ে পড়েছেন ফেডারেশন কর্তারা। আর তারপর থেকেই আলোচনায় বসার জন্য এফএসডিএলকে বলে যাচ্ছে ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন। কিন্তু এফএসডিএল কর্তারা সময় দিলে তো। ব্যস্ততা দেখিয়ে ক্রমশ দিন পিছিয়ে যাচ্ছে।