দুলাল দে: এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছনোর আনন্দটা লাল-হলুদ সমর্থকরা সঠিকভাবে উদযাপন করতে পারবেন যদি শনিবাসরীয় ডার্বিতে মহামেডানকে হারানো সম্ভব হয়। আর শনিবাসরীয় ডার্বিতে কোনও কারণে ফলাফল অন্যরকম হলে কিছুদিন আগে ভুটান থেকে আন্তর্জাতিক ম্যাচে যে সাফল্য পাওয়া গিয়েছিল, সেই আনন্দ অনেকটাই ম্লান হয়ে যাবে। ফলে এএফসি পূর্ববর্তী আইএসএলের ম্যাচগুলির ব্যর্থতা ভুলে মহামেডান ম্যাচ থেকে নতুন করে শুরু করতে চাইছে ইস্টবেঙ্গল।
আইএসএলের লড়াইয়ে একই রকমভাবে ফিরে আসার জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠেছে মহামেডানও। ইস্টবেঙ্গল যদি আইএসএলে হারের ডাবল হ্যাটট্রিক করে বসে থাকে, তাহলে হারের হ্যাটট্রিক করেছে মহামেডানও। এই মুহূর্তে আইএসএলের লিগ টেবিলের শেষ দুটি দল। ইস্টবেঙ্গল শেষতম হলে, তার ঠিক আগেই মহামেডান। অথচ শুরুটা যেভাবে করেছিলেন মহামেডান ফুটবলাররা, তাতে এরকম হাল হওয়ার কথা ছিল না। ফলে মহামেডান কোচ চেরনিশভও ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য বেছে নিয়েছেন শনিবারের ইস্টবেঙ্গল ম্যাচকে। আর তার জন্য মাঠে, মাঠের বাইরে সবরকম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে মহামেডান টিম ম্যানেজমেন্ট।
মাঠের মধ্যে ফুটবলারদের নিয়ে নিজেদের মতো করে স্ট্র্যাটেজি সাজিয়েছেন কোচ চেরনিশভ। আর মাঠের বাইরে কর্তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, মানসিকভাবে ফুটবলারদের উদ্বুদ্ধ করতে। যে কারণে বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেটার সন্দীপ পাতিল এবং মহামেডানের প্রাক্তন জাতীয় ফুটবলার সাবির আলিকে ম্যাচের আগের দিন রাতে টিম হোটেলে নিযে এসেছিলেন শ্রাচী কর্তারা। ভিন্ন ডিসিপ্লিন হলেও জাতীয় দলের প্রাক্তন দুই ক্রীড়াবিদ নানারকম উদ্বুদ্ধ করার মতো কথা বলে পুরো মহামেডান দলটাকে ইস্টবেঙ্গল ম্যাচ জেতার জন্য উদ্বুদ্ধ করলেন। যেটাকে আগে বলা হত ‘ভোকাল টনিক।’
ইস্টবেঙ্গল অবশ্য এইসব ‘ভোকাল টনিক’-ঠনিকে নেই। কুয়াদ্রাত পরবর্তী কোচ অস্কার ব্রুজো চেষ্টা করছেন, টেকনিক্যাল দিকগুলো দ্রুত মেরামত করে আইএসএল লিগ টেবিলের অন্ধকারময় স্থান থেকে আলোতে ফিরে আসতে। কিন্তু চাইলেই পরিস্থিতি সব সময় অনুকূল হয় না। হেক্টর ইউস্তে নেই। তারমধ্যে প্র্যাকটিসের মধ্যেই কুঁচকিতে চোট পেলেন নন্দ। ফলে প্রথম দলের দু’জন নির্ভরযোগ্য ফুটবলার ছাড়াই কোচ অস্কার ব্রুজোকে মহামেডান ম্যাচের প্রথম একাদশ ঠিক করতে হবে। সেক্ষেত্রে প্রথম একাদশে থাকতে পারেন ক্লেটন সিলভা। আর নন্দ খেললে ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকারের প্রথম দলে থাকার সম্ভবনা খুবই কম।
সমস্যা উল্টোদিকের সাদা-কালো শিবিরেও আছে। সাংবাদিক সম্মেলনে এসে কোচ চেরনিশভ কিছু না বললেন, দলের সঙ্গে প্র্যাকটিসই করতে পারলেন না ঘানার দীর্ঘদেহী স্ট্রাইকার যোশেফ আদজেই। দলের অন্যান্য ফুটবলাররা যখন প্র্যাকটিসে নেমে পড়েছেন, মাঠের একপাশে দাঁড়িয়ে মুখটা করুণ করে তিনি জানালেন, শনিবারের ম্যাচে খেলা সম্ভব নয়। আদজেই না খেললে সেটা যে মহামেডান ডিফেন্সে সত্যিই বড় সমস্যা, এটা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে ডিফেন্সের সমস্যা শুধু মহামেডানেই নয়। দুটো দলই ভুগছে ডিফেন্সের সমস্যায়। যে কারণে একটি দল টানা হারের হ্যাটট্রিক করে বসে আছে। আরেকটি দল হারের ডাবল হ্যাটট্রিক। তাই ডিফেন্স মেরামত করার কথা দুই দলের কোচের মুখেই। তবে চেরনিশভ বলছেন, ‘‘শুধু ডিফেন্সকে দোষ দিয়ে কী লাভ? গোলকিপার থেকে স্ট্রাইকার সবার দোষ। গোলকিপারও তো অনেকগুলি গোল খেয়েছে।’’ মহামেডানের পরিস্থিতি বিচার করলে শুরুর তিনটে ম্যাচ আর শেষের তিনটে ম্যাচের মধ্যে বিশাল পার্থক্য। আর চেরনিশভে এই জায়গায় এসে সামান্য হতাশা রয়েছে। ‘‘সবাই শেষ তিনটে ম্যাচের কথা বলছেন। আমাদের প্রথম তিনটে ম্যাচের পারফরম্যান্স সবাই ভুলে গেলেন?’’
এদিকে, ভুটান থেকে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় ভাল ফল করলেও অস্কার ব্রুজো কীভাবে ভুলবেন, কুয়াদ্রাত পরবর্তী সময়ে তাঁর কোচিংয়েও ইস্টবেঙ্গল দুটো ম্যাচ হেরেছে। তবে সেই সময়ের থেকে মহামেডান ম্যাচ খেলতে নামার আগে লাল-হলুদের ড্রেসিংরুমের পরিস্থিতি অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে। আত্মবিশ্বাস ফিরেছে। কিন্তু সত্যিই পরিস্থিতির পরিবর্তন হল কি না, তার প্রমাণ দেবে শনিবারের মহামেডান ম্যাচের খেলার ফল। উল্টোদিকে আইএসএলে বেশ আশা জাগিয়ে খেলা শুরুর পরেও মোহনবাগান ম্যাচে যেভাবে মুখ থুবড়ে পড়েছিল মহামেডান, সেখান থেকে এখনও বের হওয়া সম্ভব হয়নি। ফলে শনিবারের ইস্টবেঙ্গল ম্যাচটা সাদা-কালো শিবিরের জন্যও ফিরে আসার ম্যাচ। ও হ্যাঁ, বলাই হয়নি। সংবাদ প্রতিদিনের খবরের পরে মহামেডান প্র্যাকটিসে আবার বরফ ফিরে এসেছে।