সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সম্প্রতি গোসাবা ব্লকের বালি দ্বীপের বিজয়নগর বাসন্তী মেলার মাঠে অনুষ্ঠিত হল মেয়েদের ফুটবল টুর্নামেন্ট। বালি দ্বীপ ছাড়াও পার্শ্ববর্তী গোসাবা দ্বীপের মেয়েরাও এই খেলায় অংশগ্রহণ করে। খেলোয়াড়রা মূলত স্কুলপড়ুয়া। পঞ্চম থেকে একাদশ শ্রেণির ছাত্রীদের নিয়ে তৈরি মোট চারটি দল এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। বিজয়নগর আদর্শ বিদ্যামন্দির, বালি ধনমণি মডেল হাইস্কুল-সহ একাধিক স্কুলের ছাত্রীরা মাসাধিক সময়ের প্রশিক্ষণের পর খেলোয়াড় হিসেবে নিজেদের অবস্থান এই প্রতিযোগিতা মাধ্যমে বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করে।
আয়োজক সুন্দরবন বিজয়নগর দিশা অবশ্য এটাকে প্রতিযোগিতা না বলে প্রদর্শন ও শিক্ষামূলক খেলা বলে মনে করছে। চারটি দলের নামকরণের মধ্যেও সেই বার্তা রয়েছে। সরলা দেবী চৌধুরানী, বেগম রোকেয়া, পদ্মশ্রী আরতি সাহা এবং অর্জুন পুরস্কারপ্রাপ্ত ফুটবল খেলোয়াড় শান্তি মল্লিকের নামে চারটি দলের নামকরণ করা হয়েছে। সুন্দরবন বিজয়নগর দিশা মূলত মহিলাদের আর্থিক ও মানসিক ভাবে স্বাবলম্বীকরণের কাজ করছে বহুবছর ধরে। সুন্দরবনের সুপরিচিত বেসরকারি সংগঠন তারা। সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা তথা সুন্দরবন এলাকার প্রথিতযশা শিক্ষক শ্রী সুকুমার পয়রা জানালেন, মেয়েদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের লক্ষ্যে তাদের ফুটবল প্রশিক্ষণ ও এই প্রদর্শনের আয়োজন। বালির বিরাজনগর আদিবাসী পাড়ার কিছু মেয়ে দিশা সংগঠনের কাছে একটি ফুটবল চেয়ে আবেদন জানালে তিনি মেয়েদের খেলাধুলার প্রতি আগ্রহকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। দিশা সংগঠনের উদ্যোগের সঙ্গে হাত বাড়িয়ে দেয় এলাকার কচিকাঁচাদের সংগঠন অঙ্কুর ও উন্মেষ, কৃষকদের সংগঠন বালি ফার্মারস ক্লাব, বিজয়নগর বাসন্তী মেলা কমিটি ও স্থানীয় বিদ্যালয়গুলির শিক্ষকেরা। দিশার সূত্রে আর্থিক সহায়তায় এগিয়ে আসেন কলকাতার বহু বিশিষ্ট নাগরিক ও রোটারি ক্লাব, কলকাতা। স্থানীয় বাসিন্দারা ব্যবস্থাপনায় হাত লাগিয়ে ও আর্থিক সাহায্য দিয়ে সমগ্র ঘটনাটিকে উৎসবের চেহারা দিয়েছেন।
দিনের প্রথমার্ধে চারটি দলের মধ্যে দু'টি ম্যাচ সংঘটিত হয়। প্রথম ম্যাচে আরতি সাহা দলের বিরুদ্ধে জয়লাভ করে বেগম রোকেয়া দল, দ্বিতীয় ম্যাচে সরলা দেবী চৌধুরানী দলের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাপটের সঙ্গে জয় ছিনিয়ে নেয় শান্তি মল্লিক দল। দুপুরের পর বিজয়ী বেগম রোকেয়া দলের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি ফাইনাল ম্যাচ খেলে শান্তি মল্লিক দল। দাপটের সঙ্গে দুই-এক গোলে বেগম রোকেয়া জয়লাভ করলেও তাদের কঠিন লড়াইয়ের মধ্যে ফেলে দিয়েছিল শান্তি মল্লিক দল। কলকাতা ও স্থানীয় বিশিষ্টজনেদের সঙ্গে এই খেলা উপভোগ করেন স্থানীয় গ্রামবাসীরাও। দর্শকদের মধ্যে মহিলাদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রামে মহিলাদের ফুটবল খেলার নজির খুবই কম। স্থানীয়দের মধ্যে এই খেলা নিয়ে তাই বাড়তি উৎসাহ ছিল বলাই বাহুল্য। উপস্থিত একজন গ্রামবাসী দর্শক জানালেন, আজকাল ছেলেমেয়েদের খেলাধুলোয় খুব একটা আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। বদলে তাদের অনেকটা সময় কেটে যাচ্ছে মোবাইল হাতে। ভিডিও গেমস আর রিলস ভিডিও দেখার নেশায় মেতে উঠেছে তরুন প্রজন্ম। পরিস্থিতি এমন যে গ্রামাঞ্চলে ছেলেদের ফুটবল টিম করে ওঠাই শক্ত। এই পরিস্থিতিতে আলো দেখাচ্ছে সুন্দরবনের মেয়েরা। ছোট্ট এলাকার মধ্যে মেয়েদের ফুটবল খেলার চার চারটি টিম তৈরি করতে পারাটা একটা বড় সাফল্য মনে করছেন উদ্যোক্তা থেকে দর্শক সাধারণ সকলেই। স্থানীয় স্তরে ফুটবল অ্যাকাডেমি তৈরি করার ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে। মেয়েদের তাগিদে এই খেলা শুরু হয়েছে। স্থানীয় ও বাইরে থেকে আসা শুভানুধ্যায়ীরা এটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াটাকে তাঁদের দায়বদ্ধতা বলে মনে করছেন। সুন্দরবনের মানুষের কাছে এ বড় আশার কথা।
