শিলাজিৎ সরকার: রাশিয়া-ইউক্রেন দ্বন্দ্ব চলছে সাড়ে তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে। ’২২-এর ফেব্রুয়ারিতে রুশ আগ্রাসনের শুরু থেকেই উয়েফার প্রতিযোগিতা থেকে ব্রাত্য হয়ে পড়ে সেদেশের ফুটবল। বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচ খেলতে রাজি হয়নি পোল্যান্ড, সুইডেনের মতো দেশ। আবার ইউরোপীয় ক্লাব ফুটবল থেকে বহিষ্কার করা হয় সেন্ট পিটার্সবার্গ, ডায়নামো মস্কোর মতো ক্লাবগুলিকে।
সাড়ে তিন বছরে রুশ-ইউক্রেন দ্বন্দ্বে অনেক ওঠাপড়া এসেছে। কখনও রুশ হানায় ধ্বংস হয়েছে ইউক্রেনের শহর। আবার কখনও ইউক্রেনীয় ড্রোনে রক্তক্ষরণ হয়েছে রাশিয়ার। তবে একটা বিষয়ে কোনও পরিবর্তন হয়নি। সাড়ে তিন বছরের বেশি সময় ধরে একই রকম রয়ে গিয়েছে তা। বরং বেড়েছে তার তীব্রতা। সেটা হল রুশ ক্লাবগুলির প্রতি ইউক্রেনপন্থী দেশের ক্লাবের ‘ঘৃণা’। যে ঘৃণার আবহে রীতিমতো ‘অস্পৃশ্য’ হয়ে উঠেছে রাশিয়ার ক্লাবগুলি। রাশিয়ার জাতীয় দল বা কোনও ক্লাব এখনও উয়েফার কোনও প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারে না। বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্ব হোক বা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, কোথাও নেই কোনও রুশ-উপস্থিতি। শুধু তাই নয়, উয়েফার মঞ্চের বাইরেও রুশ-সংস্রব এড়িয়ে চলছে ইউরোপীয় ক্লাবগুলি। পরিস্থিতি এমনই, রাশিয়ার ক্লাবের সঙ্গে ফ্রেন্ডলি ম্যাচ খেলা দূরের কথা, এক হোটেলেও থাকতে রাজি নয় তারা!
সদ্য তুর্কমেনিস্তানের আহাল এফকে'র সঙ্গে কলকাতায় এসেছিলেন গ্যারি গ্রিগোরিয়ান। আর্মেনিয়ার এই যুবক সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর একটি স্পোর্টস ম্যানেজমেন্ট সংস্থার সঙ্গে যুক্ত। তিনি শোনাচ্ছিলেন বাকি ইউরোপের কাছে রুশ ক্লাবের ‘অস্পৃশ্য’ হওয়ার কথা। “রাশিয়ার কোনও ক্লাবের সঙ্গে বাকি ইউরোপের কোনও ক্লাব একটা ফ্রেন্ডলি ম্যাচ খেলতেও রাজি নয়। আমরা গত তিন বছরে একটাও এমন ম্যাচ আয়োজন করতে পারিনি। রুশ ক্লাবের সঙ্গে খেলার জন্য তাই আফ্রিকা বা এশিয়ার ক্লাব খুঁজতে হয় আমাদের,” বলছিলেন গ্যারি, “খেলার কথা বাদ দিন। প্রাক্-মরশুম প্রস্তুতির জন্য এখন অনেক ক্লাব আমিরশাহী আসে। পোল্যান্ডের এমন এক ক্লাব বিষয়টি নিয়ে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। সব ঠিকঠাক হলেও হোটেল পাচ্ছিলাম না। ওদের তখন বলি যে রাশিয়ার একটা ক্লাবের সঙ্গে এক হোটেলে থাকতে হবে। শোনা মাত্রই ওরা জানায়, সম্ভব নয়! শেষ পর্যন্ত হোটেলের অভাবে সফর বাতিল করে ওরা।”
শুধু সিনিয়র পর্যায়ে নয়, রুশ অ্যাকাডেমির প্রতি একই মনোভাব বাকি ইউরোপের। “আমরা রাশিয়ার একটি অ্যাকাডেমি ম্যানেজ করি। ওদের অনূর্ধ্ব-১৩ দলের সঙ্গে স্লোভাকিয়ার একটি ক্লাবের অনূর্ধ্ব-১৩ দলের ম্যাচ আয়োজন করেছিলাম। সবকিছু ঠিকঠাক ছিল। কিন্তু ম্যাচের চারদিন আগে ওই ক্লাবের সমর্থকরা প্রতিবাদ শুরু করে। দু’দিন পর ক্লাব সভাপতি ফোনে দুঃখপ্রকাশ করে ম্যাচ বাতিলের কথা জানান। সিনিয়র দলের কথা বাদ দিন, বাচ্চারও ছাড় পাচ্ছে না এই ঘৃণা থেকে!” দ্রুত এই রুশ-ঘৃণার মনোভাব থেকে বের হবে বাকি ইউরোপ, সেই আশাও দেখছেন না গ্যারি। সবটাই তিনি ছাড়ছেন সময়ের উপর।
