প্রসেনজিৎ দত্ত: এক সময়ের দেশের সর্বোচ্চ লিগ জাতীয় লিগ ও আই লিগে সবচেয়ে বেশিবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার রেকর্ড এই ক্লাবেরই ছিল। ডেম্পো স্পোর্টস ক্লাব। তারাই প্রথম ভারতীয় ফুটবল ক্লাব হিসাবে ২০০৮ সালে এএফসি কাপে সেমিফাইনালে পৌঁছেছিল। গোয়ার এই ফুটবল ক্লাবকে আবারও ভারতীয় ফুটবলের বড় মঞ্চে দেখা যেতে চলেছে। সম্প্রতি সুপার কাপ থেকে নাম প্রত্যাহার করে রিয়াল কাশ্মীর। ‘স্নো লেপার্ডস’ নামে পরিচিত কাশ্মীরের এই ক্লাবের জায়গায় সুপার কাপে অংশ নেবে ডেম্পো। কলকাতার দুই প্রধানের সঙ্গে একই গ্রুপে নিজেদের শক্তি মাপতে দেখা যাবে তাদের। কীভাবে সম্ভব হল গোয়ানিজ ক্লাবটির ফিরে আসা? 'সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল'কে শোনালেন ডেম্পোর সোনালি সময়ের বাঙালি গোলরক্ষক অভিজিৎ মণ্ডল।
২০১৬ সালে আই লিগে ফিরে আসার পর ডেম্পো মাত্র তিনজন বিদেশি খেলোয়াড় নিয়ে মরশুম শুরু করেছিল। দ্বিতীয় স্থানে শেষ করে তারা। দুই বিদেশি ড্যামিয়ান পেরেজ এবং সেন্টার-ব্যাক শাহের শাহিনের চোট তাদের ভুগিয়েছিল। তবে ডেম্পো আবারও ঘুরে দাঁড়ায়। ত্রিনিদাদের ফরোয়ার্ড মার্কাস জোসেফ অসাধারণ ভূমিকা নিয়েছিলেন। এহেন ডেম্পোর ফের ভারতীয় ফুটবলের মূলস্রোতে উঠে আসার নেপথ্যে তাদের ইউথ সিস্টেম। এ কথাই জানালেন ডেম্পোর হয়ে ২০০২ থেকে ২০১০ পর্যন্ত খেলা অভিজিৎ মণ্ডল।
তাঁর কথায়, “আই লিগ দ্বিতীয় ডিভিশনে যখন থেকে খেলতে শুরু করে ডেম্পো, তখন থেকেই ভারতীয় ফুটবলের মূলস্রোতে ফিরতে মরিয়া তারা। কর্মকর্তাদের লক্ষ্য ছিল, তাদের ইউথ সিস্টেমকে কাজে লাগিয়ে ফিরে আসা। ডেম্পোর দু'টি স্কোয়াড রয়েছে। একটি দল গোয়া প্রফেশনাল লিগে অংশগ্রহণ করে। সেখানে যুব দল খেলে। অন্যটি আই লিগ এবং অন্যান্য জাতীয় প্রতিযোগিতার জন্য সিনিয়র স্কোয়াড। যুব দলের তত্ত্বাবধানের জন্য ডেম্পোর একটা রেসিডেন্সিয়াল অ্যাকাডেমিও রয়েছে। যার পরিকাঠামো খুবই ভালো। এমনকী অনেক আইএসএল টিম, বিশেষ করে লকডাউনের সময়, ডেম্পোর পরিকাঠামো ব্যবহার করেছিল। ২০১৬ সালে আগে অবশ্য আই লিগ থেকে নাম তুলে নিয়েছিল তারা। যা খুবই কষ্ট দিয়েছিল। এরপর ফিরেও আসে ডেম্পো। ইউথ সিস্টেমের উপর জোর দিয়েছিল তারা। ডেম্পোর লক্ষ্য ছিল, যুব পরিকাঠামো আরও উন্নত করে তোলা।” উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে ভারতীয় ফুটবলের প্রথম সারির টুর্নামেন্ট আই লিগকে দেশের এক নম্বর লিগ না করার প্রতিবাদে দল তুলে নিয়েছিল ডেম্পো। তাদের সঙ্গে গোয়ার অন্য দল সালগাঁওকর ও স্পোর্টিং ক্লুব দে গোয়া একই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এরপর আই লিগ দ্বিতীয় ডিভিশন জয়ী হয় এই ক্লাব। বিজয়ী দল হিসাবে ২০১৬-১৭ আই লিগে ফিরে আসে। সেখান থেকেই এতটা পথ পেরিয়ে এসেছে ডেম্পো।
গোয়ার এই দল বরাবরই ভূমিপুত্রদের সুযোগ দেওয়ার ব্যাপারে এগিয়ে। এই প্রসঙ্গে প্রাক্তন গোলরক্ষক অভিজিৎ মণ্ডল বলছেন, “ডেম্পোয় খেলার সময়েও এটা দেখেছি। ওরা ভূমিপুত্রদের সুযোগ দিত। সিদ্ধান্তটা উপযুক্ত। ক্লাব চাইত, বড় জায়গায় সুযোগ পেলে যুব দলের ছেলেরা খেলবে। এতে নতুন ফুটবলার উঠে আসবে। একটা সাপ্লাই লাইনও তৈরি হবে। গত মরশুমের আই লিগে ডেম্পো মোটামুটি ভালোই খেলেছে। ২২ ম্যাচে ২৯ পয়েন্ট পায়। ১২ দলের লিগে ষষ্ঠ হয়। এবছর সুপার কাপের মতো বড় মঞ্চে ফিরছে ডেম্পো।”
২৫ অক্টোবর থেকে গোয়ায় শুরু সুপার কাপ। অর্থাৎ ঘরের মাঠেই আইএসএল দলগুলোর সঙ্গে খেলতে হবে ডেম্পোকে। অভিজিতের সংযোজন, “এটা অবশ্যই ফুটবলারদের জন্য দারুণ অভিজ্ঞতা হতে চলেছে। আইএসএল দলগুলোর সঙ্গে খেললে সর্বভারতীয় প্রচার মাধ্যমের নজরও থাকবে। ডেম্পোর এই ফিরে আসা খুবই আনন্দের। আমি চাই, ডেম্পো দেশের সর্বোচ্চ লিগে খেলুক। চ্যাম্পিয়ন হোক। চাইব, সোনালি দিন আবার ফিরে আসুক। আমাদের কোচ বলতেন, ডেম্পোকে হারাতে পারে একমাত্র ডেম্পোই। নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি, সেই সময় আমি এই দলেরই সদস্য ছিলাম। ভিনরাজ্যের ফুটবলার, বিশেষ করে বাঙালি হয়ে আমি ডেম্পোয় প্রতিষ্ঠা পেয়েছিলাম। এর জন্য গর্ববোধ করি। আমার ধারণা, দেশের শীর্ষ লিগে সুযোগ পেলে কর্মকর্তারা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতোই দল তৈরি করবেন।”
সুপার কাপে মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে একই গ্রুপে খেলবে ডেম্পো। এই প্রসঙ্গে অভিজিৎ বলেন, “সত্যি কথা বলতে, আমার আবেগ ডেম্পোর সঙ্গেই থাকবে। আমি এখন যে জায়গায় পৌঁছেছি, তা তো ডেম্পোয় খেলেই। কিন্তু বাস্তবটাও বুঝতে হবে। মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল খুবই শক্তিশালী দল। তাদের বিরুদ্ধে খেলা কঠিন চ্যালেঞ্জ। আমার শুভেচ্ছা সব সময় ডেম্পোর জন্য ছিল, আছে এবং থাকবে।” উল্লেখ্য, ২৫ অক্টোবর ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে ম্যাচ দিয়ে সুপার কাপ অভিযান শুরু করবে ডেম্পো। ২৮ তারিখ মোহনবাগানের বিরুদ্ধে মাঠে নামবে তারা।
