স্টাফ রিপোর্টার: ফকিরকে আমির বানায় এই পাথর৷ রাজাকে বানায় সম্রাট৷ গজমুক্তার ঐশ্বর্যে ঈর্ষান্বিত হয়ে অন্য রাজ্য আক্রমণের নজিরও ভূরি ভূরি মেলে কল্পকাহিনিতে৷
রূপকথার সেই কিংবদন্তি গজমুক্তা এবার বাজার গরম করে দিল কলকাতার৷ খোলাবাজারে বিক্রি হচ্ছে না বটে, তবে ওয়েবসাইট খুললে গজমুক্তা বা গজমণির সুলুকসন্ধান মিলছে৷ সবথেকে ছোট গজমণিটির দাম এক কোটি টাকা নির্ধারণ করেছেন পাথর-মালিক৷ ম্যাক্সিমাম? ‘অন রিকোয়েস্ট’৷
তবে ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপন দিয়ে পাথর বিক্রির যে রাজসূয় তোড়জোড় শুরু হয়েছিল তা অচিরেই ধাক্কা খেল বনদফতরের তৎপরতায়৷ ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপন দেখে বিক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগ করেন বনদফতরের কর্মীরা৷ একাধিক গজমুক্তা সমেত হাতেনাতে ধরা পড়ল এক সেতার বাদক৷ ভবানীপুরের বাড়িতে একটি সুদৃশ্য শ্বেতপাথরের বাক্সে পাথরগুলি রেখে দিয়েছিলেন তুলোয় মুড়ে৷ খদ্দের সেজে গিয়ে ১০টি গজমুক্তা সমেত তাকে গ্রেফতার করলেন বনদফতরের আধিকারিকরা৷ গ্রেফতার করা হয়েছে প্রবাল চৌধুরী নামের গজমুক্তা বিক্রেতাকে৷ আসল না নকল জানতে পাথরগুলিকে পাঠানো হয়েছে ফরেনসিকের জন্য৷
যে পাথর নিয়ে শুক্রবার সকাল থেকে আলোড়ন পড়ে গেল কলকাতায় সে গজমুক্তা আসলে কী? কেন এত দুর্মূল্য এই মণি? বাংলার অসংখ্য রূপকথা বলছে, দেবরাজ ইন্দ্রের বাহন ঐরাবতের শরীর থেকে উৎপন্ন হয়েছিল গজমণি৷ ঐরাবতের উত্তরাধিকারীরা একমাত্র এই মণি ধারণ করতে পারেন৷ সাপের মাথার মণির মতো একলক্ষের মধ্যে একটি হাতির মাথায় উৎপন্ন হয় মুক্তা৷
বনদফতরের এক কর্তা বলছেন, হাতির দাঁতে কিংবা মাথাতে অনেক সময় ক্যালসিয়ামের সঙ্গে অন্যান্য যৌগ মিলে জমে গিয়ে মুক্তার মতো আকার নেয়৷ নির্দিষ্ট একটি অসুখের কারণে এমন হয় বলে জানাচ্ছেন তিনি৷ যেহেতু হাতিকুলে কয়েকটি মাত্রই এই রোগে আক্রান্ত হয় তাই এই পাথর চোরাবাজারে চড়া দামে বিক্রি হয়৷ রোগ সারাবার বা ভাগ্য ফেরাবার কোনও বাস্তব ভিত্তি এর নেই৷ তবে কিংবদন্তির গল্পে বা রূপকথার কাহিনিতে এই মুক্তা ঠাঁই হয়েছিল বলেই একে নিয়ে গল্পকথার শেষ নেই৷ আর তাই এই পাথর নিয়ে চোরাচালানেরও অন্ত নেই৷ গোপন বাজারে এর মূল্য কোটি টাকার আশপাশে ঘোরাফেরা করে বলে জানা যাচ্ছে, বনদফতর সূত্রে৷
গত বেশ কয়েকদিন ধরেই ওয়েবসাইটে গজমুক্তার বিজ্ঞাপনটা চোখে পড়ছিল অনেকের৷ ডব্লুডব্লুডব্লু.শিবরুদ্রাক্ষ.কম এই সাইটে এন দাস নামের একটি ফোন নম্বর দেওয়া ছিল৷ গজমুক্তা কিনতে চাইলে সেই নম্বরে যোগাযোগ করার কথা বলা ছিল ওয়েবসাইটে৷ বনদফতরের এক কর্তা জানাচ্ছেন, গজমুক্তা ধরনের দামি চোরাই মাল সাধারণত চায়না বা হংকং বা আমেরিকার মতো কোনও দেশে খোলা ওয়েবসাইট থেকে অপারেট করা হয়৷ এ ক্ষেত্রে প্রবাল চৌধুরি কলকাতার ফোন নম্বর দেওয়ায় তাকে খুঁজে পেতে সুবিধা হল৷ ক্রেতা সেজে দু’তিন বার দরাদরি করে ফোন করার পর সাক্ষাতের জন্য বনদফতরের অফিসারদের বাড়ি আসার অনুরোধ করে প্রবাল নিজেই৷ সেখানে পাথরগুলি সমেত হাতেনাতে ধরা হয় তাকে৷
The post রূপকথার গজমুক্তায় বাজার গরম কলকাতার, বন দফতরের জালে বিক্রেতা appeared first on Sangbad Pratidin.