সৈকত মাইতি, তমলুক: বাপ-ঠাকুরদার আমল থেকে সাপের চাষ! সেই ৪০ থেকে ৫০ বছর আগে থেকে এর সূত্রপাত। বাড়িতে পোষা সেসব বিষধর সাপ এবং তাদের বিষ বিক্রি করেই চলত জ্যোৎস্না, সুধা, মালতী, সুকুমারদের সংসার। বনদপ্তরের কর্মীদের জেরায় এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আসায় রীতিমতো এখন চর্চার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার প্রত্যন্ত চণ্ডীপুর এলাকা। উঠছে ভিন রাজ্যে ছাড়িয়ে বিদেশের দুষ্কৃতীদের পাচার যোগ! তদন্তে রহস্য উন্মোচন করল বনদপ্তর।
বাড়িতে পোষা সেসব বিষধর সাপ, বিষ বিক্রি করেই চলত জ্যোৎস্না, সুধা, মালতী, সুকুমারদের সংসার। নিজস্ব ছবি।
জমি আন্দোলনের জেলা হিসেবে পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রাম (Nandigram)অতি পরিচিত। আর এই নন্দীগ্রামেরই পার্শ্ববর্তী ব্লক হিসেবে বর্তমানে চণ্ডীপুর এলাকাও বিশেষ পরিচিতি লাভ করেছে। অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হয়েছে এলাকা। মূলত স্বল্প সময়েই ভেনামি কিংবা গলদা চিংড়ি-সহ মাথার চুলের আমদানি-রপ্তানি করে রীতিমতো ভোল পালটে ফেলেছে চণ্ডীপুরের প্রত্যন্ত এলাকাগুলি। পরিস্থিতি এমনই যে, চিন, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া থেকে শুরু করে বহু বিদেশি ব্যবসায়ীও প্রত্যন্ত চণ্ডীপুরের বিভিন্ন এলাকাগুলোতে ঘাঁটি গেড়ে এই সকল ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। তবে বসত বাটিতে একের পর এক বিষধর সাপের চাষ করে সেই সাপের বিষ (Venom)কিংবা আস্ত গোখরোর পাচার কিংবা রপ্তানি! এমন খবরে রীতিমতো চোখ কপালে উঠেছে জেলাবাসী থেকে শুরু করে বনদপ্তরের কর্মকর্তাদেরও।
[আরও পড়ুন: বিরাট অঙ্কের অর্থপ্রাপ্তি টিম ইন্ডিয়ার, বিশ্বজয়ীদের জন্য পুরস্কার ঘোষণা জয় শাহর]
তাহলে কি মাথার চুল কিংবা ভেনামি চিংড়ির মতোই চণ্ডীপুরে উদ্ধার গোখরোর বিষ পাচারের (Poaching) র্যাকেট চিন পর্যন্ত? এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে রীতিমতো অন্ধকারে হাতড়াচ্ছেন বনদপ্তরের তদন্তকারী অফিসাররা। স্থানীয় ও বনদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, চণ্ডীপুর থানার প্রত্যন্ত দুটি গ্রাম গাজীপুর এবং দামোদরপুর। এই গ্রামগুলিরই বাসিন্দা সুধা সিংহ, সুকুমার বর-সহ আশপাশ এলাকার একাধিক বাসিন্দা। যারা মূলত চাষবাসের পাশাপাশি ছিল সাপ ধরায় ওস্তাদ। বংশপরম্পরায় আবার তাঁরা নাকি গোখরো, কেউটেদের মত বিষধর সাপগুলিকে বাড়িতে রেখেই লালনপালন করে থাকেন। প্রয়োজনমতো সেগুলি আবার একেকটিকে প্রতি হাজার, ২০০০ টাকায় বিক্রিও করে দেন। গোপন সূত্রে এমনই খবর পেয়ে শনিবার খুব সকালেই অতর্কিতে হানা দেয় বাজকুল রেঞ্জের বনদপ্তরের (Forest Department) একটি টিম। একটি নয়, দুটি নয়। বনদপ্তরের এই তল্লাশি অভিযানে উদ্ধার হয় রীতিমত দুই ডজন জ্যান্ত গোখরো! যেগুলি কিনা গৃহস্থের বসত বাটিতে মাটির কলসিতে রেখে সযত্নে লালনপালন করা হচ্ছিল বলে অভিযোগ। বন্যপ্রাণী পাচারের অভিযোগে হাতেনাতে ধরা পড়ে গ্রেপ্তার হয় এক মহিলা-সহ দুজন। আর তাতেই তীব্র চাঞ্চল্য ছড়ায় জেলা জুড়ে।
[আরও পড়ুন: বাদ বিরাট, ভারতের ৬ জনকে নিয়ে বিশ্বকাপের সেরা একাদশ ঘোষণা আইসিসির]
রবিবার ধৃতদের তমলুক (Tomluk) আদালতে তোলা হলে বিচারক ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। যদিও গাজীপুরের পঞ্চায়েত সদস্য আরিফা বিবি জানিয়েছেন, ''ওরা অত্যন্ত গরিব মানুষ। গ্রামের লোকজন যখন সাপের ভয়ে সিঁটিয়ে থাকেন, তখন খবর পেলে ওরাই সাপগুলিকে উদ্ধার করে ধরে নিয়ে গিয়ে স্বস্তি দিত। তবে কোথায় কীভাবে বিক্রি করত, তা আমাদের জানা নেই।'' পূর্ব মেদিনীপুর জেলা বনদপ্তরের আধিকারিক সত্যজিৎ রায় জানিয়েছেন, চণ্ডীপুর এলাকার দুটি বসতবাড়ি থেকে মোট ২৪ টি বিষধর সাপ উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার হয়েছে এক মহিলা-সহ দুজন। ধৃতদের তমলুক আদালতে তোলা হলে বিচারক ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। এই পাচার কাণ্ডের সঙ্গে যুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।