সুমিত বিশ্বাস ও অমিতলাল সিং দেও, পুরুলিয়া: পাঁচ-পাঁচটা টোপ দিয়েও বাগে আনা যায়নি। তাই বৃহস্পতিবার ওড়িশার বাঘিনী জিনাতকে খাঁচা বন্দি করতে এবার হাতি তাড়ানোর কৌশল! পাহাড়ের নিচে আগুন জ্বালিয়ে হুলা পার্টি দিয়ে জঙ্গল ঘেরা। সেই সঙ্গে গজ-শস্ত্র, ৩ কিমি জাল বিছিয়ে প্রযুক্তি থেকে প্রাপ্ত লোকেশনে গিয়ে মোট ৬ টি শুটারের দিনভর সাঁড়াশি আক্রমন। প্রায় ১৫৪৪ ফুট উঁচু পাহাড় চূড়ায় পৌঁছে গিয়ে বাঘিনীর শিকার করা দুটি ছাগলের দেহাবশেষ পাওয়া যায়। কিন্তু ধরা পড়লো না জিনাত। রাতেও একইভাবে বাঘ বন্দি অভিযান চলছে।
আসলে জঙ্গল জীবনে জিনাতের যে অভিজ্ঞতা তার সঙ্গে কিছুতেই পেরে উঠছেন না আধিকারিক থেকে কর্মীরা। মহারাষ্ট্রের তাডোবা-আন্ধারি ব্যাঘ্র প্রকল্পের একেবারে কোর জোনের জিনাতের কাছে খাঁচা বন্দি টোপ, ঘুমপাড়ানি গুলিতে কাবু, সেই সঙ্গে খাঁচার মধ্যে বন্দি দশা জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পাতা ফাঁদে কিছুতেই পা দিতে চাইছে না সে। রাজ্যের মুখ্য বনপাল (দক্ষিণ-পশ্চিম চক্র) বিদ্যুৎ সরকার বলেন, " হুলা পার্টিকে আমরা জঙ্গল ঘেরার জন্য ব্যবহার করেছিলাম। তাছাড়া জাল দিয়ে তিন কিমি ঘেরা হয়েছিল। মোট ৬ টা শুটার ছিলেন। কিন্তু বাঘিনীকে পাওয়া যায়নি। রাতেও যথারীতি অভিযান চলছে। "
বুধবার ভোরের পর বৃহস্পতিবার ভোরেই তার অবস্থান জানান দেয় জিনাত। রাইকা পাহাড়ের টিলায় ঝাঁড়া-ভাঁড়ারিতে। হাইফ্রিকোয়েন্সি এন্টেনার পাশাপাশি রিয়েল টাইম মনিটরিং ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে। বাঘের গলায় থাকা রেডিও কলারের মধ্যে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ওই অবস্থান জানা যাচ্ছে। এদিন মোট চারটি দল পাহাড়ি পথে বাঘ বন্দি অভিযানে অংশ নেন। তার মধ্যেই ছিল সিমলিপাল ও সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের ২ জন করে মোট ৪ জন ও বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে একজন করে শুটার সহ মোট ৬ জন। সুন্দরবন, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুরের শুটাররা বুধবার রাতে বান্দোয়ানে আসেন। ওই দলগুলির মধ্যেই ছিল ট্র্যাকিং করার টিম। সঙ্গে ছিলো পাঁচটা টোপ। হুলা পার্টির ২০-২৫ জন ছাড়াও ওই চারটি টিম মিলিয়ে সংখ্যায় ছিলেন প্রায় ১০০ জন। সিমলিপাল ব্যাঘ্র প্রকল্পের আধিকারিকদের কথায়, বাঘিনীর মর্জির ওপরই সবকিছু নির্ভর করছে। তার চাওয়া বা কোন একটা ভুল-র মধ্যে একটা না হলে তাকে বন্দি করা বেশ কঠিন।
কিন্তু কারণটা ঠিক কি? কেনই তাকে বাগে আনতে এত প্রতিবন্ধকতা? সিমলিপাল ব্যাঘ্র প্রকল্পের আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে প্রথমত, মহারাষ্ট্রের তাডোবা-আন্ধারি ব্যাঘ্র প্রকল্পের জিনাত ওই এলাকার কোর জোনের বাঘ হওয়ায় ভীষণ-ই সতর্ক। দ্বিতীয়ত, সে জানে ঘুম পাড়ানি গুলির কাবু। জানে খাঁচায় থাকা টোপ। সবুজ খাঁচার গন্ধ তার পরিচিত। তৃতীয়ত, সর্বোপরি জঙ্গলের প্রকৃতি। চতুর্থত, খাঁচাবন্দি অভিযানে বাংলা-ওড়িশার সমন্বয়ের অভাব। আসলে তাকে সিমলিপাল ব্যাঘ্র প্রকল্পে আনার সময় টোপ দিয়েই ঘুম পাড়ানি গুলিতে কাবু করে খাঁচায় ভরে নিয়ে আসা হয়েছিল। বন্দি দশা কেমন তা তার জানা। আর সেই কারণেই পাতা ফাঁদের পাশ দিয়ে হেঁটে গেলেও সেখানে পা গলাত না জিনাত। পাঁচ দিন পর তাকে বাগে আনতে না পেরে এমন হতাশা- আক্ষেপই ঝরে পড়ছে সিমলিপাল ব্যাঘ্র প্রকল্পের আধিকারিকদের।