সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: চলে গেলেন ইস্টবেঙ্গলের কিংবদন্তি ফুটবলার পরিমল দে (Parimal Dey)। ময়দানে একসময়ে ‘গ্ল্যামার বয়’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি। মঙ্গলবার রাতে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন পরিমল। অ্যালঝাইমার্সে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। স্মৃতি বিদ্রোহ করে বসছিল।
কলকাতা ময়দানে তিনি ‘জংলা’ নামে বেশি পরিচিত ছিলেন। তাঁর নাম উচ্চারিত হলে ফুটবলপ্রেমীরা নস্ট্যালজিক হয়ে পড়েন। স্মৃতির ক্যানভাসে ফুটে ওঠে ১৯৭০ সালের IFA শিল্ড ফাইনাল। সেই ম্যাচে ইরানের পাস ক্লাবকে হারায় ইস্টবেঙ্গল (East Bengal)। স্বাধীনতার পর সেই প্রথম কোনও ভারতীয় ক্লাব বিদেশি ক্লাবকে পরাজিত করে শিল্ড জেতে। ইস্টবেঙ্গলের সেই গৌরবময় ইতিহাসের নায়ক ছিলেন পরিমল দে। ফাইনালে তাঁর অনবদ্য গোল ময়দানের প্রবীণ ফুটবলপ্রেমীদের স্মৃতিতে আজও অক্ষত। ম্যাচ শেষ হওয়ার কয়েক মিনিট আগে মহম্মদ হাবিবের পরিবর্ত হিসাবে মাঠে নেমেছিলেন তিনি। তাঁর গোল ম্যাচের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করেছিল। গোলের মুহূর্তে ধারাভাষ্যকার কমল ভট্টাচার্য বলছিলেন, ”বল নইমের পায়ে। নইম স্বপনকে দিয়েছে। স্বপন অসম্ভব জোরে ছুটছে। বক্সের মধ্যে ঢুকে পড়েছে। জংলাকে দিয়েছে। জংলা গোল করে দিয়েছে। গো-ও-ও-ল। ইস্টবেঙ্গলের পি দে গোল করেছে।” পরিমল দে-র সেই ঐতিহাসিক গোল মিলিয়ে দিয়েছিল গোটা ময়দানকে। ম্যাচের শেষ বাঁশির পরে সমর্থকরাই তাঁকে কাঁধে করে পৌঁছে দেন ইস্টবেঙ্গল তাঁবুতে। ঐতিহাসিক পাস ক্লাবের ম্যাচ প্রসঙ্গে একবার পরিমল দে বলেছিলেন, ”এত দ্রুত ঘটেছিল সব কিছু যে প্রথমটায় আমি উপলব্ধিই করতে পারিনি যে ইতিহাস তৈরি হয়েছে। কেমন একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম।” ইস্টবেঙ্গল তাঁকে জীবনকৃতি সম্মান দিয়েছিল।
[আরও পড়ুন: বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরে মেসির ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট ব্লক হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু কেন?]
পরিমল দের জীবন শুরু উয়াড়ি ক্লাবে। ১৯৬১ সালের জুন মাস। এক সংবাদমাধ্যমে লেখা হয়েছিল, বাংলার বুকে দুটি দুর্ঘটনা। সেই দুপুরে গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান কিংবদন্তি চিত্রতারকা ছবি বিশ্বাস। বিকেলে ময়দানে উয়াড়ির কাছে হার মানে মোহনবাগান। গোল করেন পরিমল দে। উয়াড়ি ক্লাব থেকেই ইস্টবেঙ্গলে সই করেছিলেন তিনি। লাল-হলুদে সই করার পরে অনেকেই তাঁকে উপহাস করেছিলেন। কিন্তু তাঁদের ভুল খুব দ্রুত ভাঙেন পরিমল দে। তাঁর সম্পর্কে কিংবদন্তি ছড়িয়ে রয়েছে ময়দানে। ১৯৬৫ সালের লিগে শুকনো মাঠে মোহনবাগান রক্ষণকে তছনছ করে দিয়েছিলেন পরিমল। তাঁকে সামলাতে পারছিলেন না জার্নেল সিং। সেই ম্যাচ অবশ্য ড্র হয়েছিল। ১৯৭১ সালে পরিমল দে চলে আসেন মোহনবাগানে। কিছুটা অভিমান নিয়েই ক্লাব বদল করেন তিনি। বাংলার হয়ে সন্তোষ ট্রফি খেলেছেন।পরিমল দে-র কত স্মৃতি ছড়িয়ে আছে সবুজ ঘাসে, তার ইয়ত্তা নেই। আজ শুধু স্মৃতি রোমন্থনের দিন।
[আরও পড়ুন: ‘এই পিচে খেলা যায় না’, হার্দিকের তোপের জেরে চাকরি গেল কিউরেটরের]