স্টাফ রিপোর্টার: এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতিতে ইডি’র জালে পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee)। গ্রেপ্তারির পরই মন্ত্রিত্ব থেকে মিলেছে অব্যাহতি। আপাতত ব্যস্ততা অতীত। প্রেসিডেন্সি জেলের ‘পয়লা বাইশ’ ওয়ার্ডের দু’নম্বর সেলেই দিন কাটছে পার্থর। প্রেসিডেন্সি জেলই ঘুরে দেখছেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী। শনিবার ঋষি অরবিন্দর সেল দেখলেন তিনি। ওই সেলে কিছুক্ষণ সময় কাটানোর ইচ্ছাপ্রকাশও করেন পার্থ।
স্থূলকায়তার কারণে পার্থবাবুর কিছু সমস্যা হচ্ছিল। জেলের চিকিৎসক ডাঃ প্রণবকুমার ঘোষ তাঁর সুপারিশে বলেছিলেন, যেহেতু জেলে আলাদা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই, তাই বাইরের বিশেষজ্ঞ এনে গাইডলাইন করে দেওয়া হোক। সুপার দেবাশিস চক্রবর্তী সুপারিশটি ডিআইজি অরিন্দম সরকারকে পাঠিয়ে দেন। অরিন্দমবাবু কারাদপ্তর থেকে পাঠান নবান্নতে। নবান্ন পাঠায় সিএমওএইচকে। সেখান থেকে বার্তা যায় পিজি এবং বাঙুরে। শনিবার দু’জায়গা থেকে আটজন করে ষোলোজনের টিম যায় জেলে। এতে ছিলেন মেডিসিন, অর্থোপেডিক, ডেন্টাল, নিউরো, নেফ্রোলজির বিশেষজ্ঞরা। ছিলেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞরাও।
[আরও পড়ুন: চিনার পার্কের ফ্ল্যাট থেকে নিজাম প্যালেসে গেল আলুপোস্ত-মাছের ঝোল, চেটেপুটে খেলেন কেষ্ট]
জেলে ‘পয়লা বাইশ’ ওয়ার্ডে দু’নম্বর সেলে শুয়ে ছিলেন পার্থ। মেডিক্যাল টিম খতিয়ে দেখেন। এরপর পার্থকে বলা হয় জেল হাসপাতালের আউটডোরে যেতে হবে পরীক্ষানিরীক্ষার জন্য। পার্থ বলেন, “একটু সময় দিন।” এরপর তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় জেল হাসপাতালের আউটডোরে। হুইলচেয়ারে যান পার্থ। যাওয়ার পথে বাঁদিকে দেখেন ঋষি অরবিন্দর সেল এবং শিবমন্দির। গতি কমিয়ে সামনে থেকেই দেখানো হয় পার্থকে। এর আগে জেলের এদিকে আসার সুযোগ হয়নি তাঁর। এই সেলেই থাকতেন অরবিন্দ। এখানেই তিনি আধ্যাত্মিকতায় আবিষ্ট হন। প্রণাম করেন পার্থ। বলেন, “আমাকে একদিন অরবিন্দর সেলে একটু সময় কাটাতে দেবেন তো।” পাশ থেকে একজন বলেন, এবার ১৫ আগস্ট অরবিন্দর জন্মের সার্ধশতবর্ষ পূর্তি। পার্থ বলেন, “ওইদিন আমি এখানে একবার আসতে চাই।” জেলকর্তারা সম্মতি দেন। চিকিৎসকরাও প্রণাম জানান ঐতিহাসিক ওই সেলে।
এরপর জেল হাসপাতালের আউটডোরে দীর্ঘ তিনঘণ্টা পরীক্ষা করেন ডাক্তাররা। শেষ পর্যন্ত তাঁদের নিদান এরকম –
- পার্থকে সেলেই রাখা যেতে পারে।
- তবে খাটের সঙ্গে একটি নারকেল ছোবড়ার গদি ও তোশক দিতে হবে। সঙ্গে একটি বালিশ।
- পার্থবাবুকে নিয়মিত হাত, পা, ঘাড়ের ব্যায়াম করতে হবে। সেগুলি দেখিয়েও দেওয়া হয়।
- সকাল বিকেল সেলের উঠোনে হাঁটতে হবে পার্থকে।
- চিকিৎসকদের মতে, জেলের খাওয়াদাওয়া একদম ঠিক আছে।
যদিও সপ্তাহে একদিন করে মাছ মাংস দেওয়া হয়, তবু পার্থকে এসব যথাসম্ভব কম খেতে হবে। মেডিক্যাল টিমের এক সদস্য পরে বলেন, “এমনিতে সব ঠিকঠাক। ওষুধপত্রও ঠিক আছে। আমরা সুপারকে বলেছি আপনারা যথাযথভাবেই পার্থবাবুকে রেখেছেন। ওঁর মানসিক অবস্থা নিয়ে আমাদের একটু চিন্তা ছিল। বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘক্ষণ কথা বলে দেখেছেন উনি একদম ঠিক আছেন। অন্যান্য বিষয়ে আমাদের যেটুকু যা বলার, বলে এসেছি।” সব পরীক্ষার পর পার্থকে আবার তাঁর সেলে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।