shono
Advertisement

পুরুলিয়ার জেল হেফাজতে মৃত্যু শবর যুবকের, ২৫ বছর পর সাজা প্রাক্তন ওসির

৮ বছরের কারাদণ্ড শোনাল পুরুলিয়া আদালত।
Posted: 05:31 PM Feb 20, 2023Updated: 07:18 PM Feb 20, 2023

সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: ২৫ বছর ধরে আইন প্রক্রিয়া শেষে সুবিচার পেল পুরুলিয়ার (Purulia) শবর পরিবার। বিচারাধীন বন্দি হিসেবে জেল হেফাজতে অস্বাভাবিকভাবে আদিম জনজাতি শবর যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় অবশেষে শাস্তি পেল পুলিশ। সোমবার পুরুলিয়া আদালতের বিচারক এই ঘটনায় প্রাক্তন ওসি অশোক রায়কে ৮ বছরের কারাদণ্ডের নির্দেশ দিলেন। আড়াই দশক পর সুবিচার পেয়ে বুকের পাষাণভার খানিকটা নামল মৃত যুবক বুধন শবরের স্ত্রী ও পরিবারের। এদিন পুরুলিয়া আদালতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক জাহাঙ্গির কবীর ঘোষণা করেন, বুধন শবরকে আত্মহত্যার প্ররোচনার জন্য অশোক রায়ের ৮ বছর কারাদণ্ড ও ৩০ হাজার জরিমানা (অনাদায়ে ১ বছর কারাদণ্ড) এবং পুলিশ হেফাজতে অত্যাচারের জন্য ৫ বছর কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা হল (অনাদায়ে ৬ মাস কারাদণ্ড)।

Advertisement

ছবি: অমিত সিং দেও।

ঘটনা ১৯৯৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসের। পুজোর সময় পুরুলিয়ার বরাবাজার-বান্দোয়ানগামী যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতির (Dacoity)ঘটনা ঘটে। তারপরের বছর ১৯৯৮ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি স্ত্রী শ্যামলীকে নিয়ে তৎকালীন কেন্দা (বর্তমান টামনা) থানার অকরবাইদ গ্রাম থেকে ভাঙিরদিঘি গ্রামে যাওয়ার সময় বরাবাজার থানার পুলিশ হস্তশিল্পী বুধন শবরকে তুলে নিয়ে যায়। স্ত্রীর সামনে থেকে এভাবে তাঁকে নিয়ে যাওয়ায় হতবাক স্ত্রী বরাবাজার থানায় যান। গিয়ে দেখেন, বুধনকে দুই পুলিশকর্মী মারধর করছেন। তিনি গ্রামে গিয়ে সকলকে বিষয়টি জানান।

[আরও পডুন: সঙ্গে থাকুক প্রিয় গায়ক, পিঠে অরিজিৎ সিংয়ের অটোগ্রাফকে ট্যাটু করালেন অনুরাগী!]

 

এরপর ১১ তারিখ বুধন শবরকে গ্রেপ্তার করে পরদিন পুরুলিয়া আদালতে পেশ করে বরাবাজার থানার পুলিশ। ৫ দিনের জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন তৎকালীন বিচারক। এই সময়ে একদিন বুধনকে গ্রামে নিয়ে আসে পুলিশ। সবাই দেখেন, বুধন ভাল করে হাঁটতে পারছেন না। অভিযোগ, ১৬ তারিখ পুলিশ হেফাজতে ব্যাপক মারধর করা হয় বুধনকে। ওইদিনই তাঁকে আদালতে ফের তোলা হয়। ১৭ তারিখ সন্ধেয় মৃত্যু হয় বুধনের। জেলের ২ নং সেল থেকে সন্ধেবেলা ৬টা ১০ নাগাদ তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার হয় গামছার ফাঁস লাগানো অবস্থায়। ১৮ ফেব্রুয়ারি বুধনের সঙ্গে পরিবারের লোক দেখা করতে গেলে জেল কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়, বুধন আত্মহত্যা করেছে জেলের মধ্যে। সেসময় আদিম জনজাতির এই যুবকের বয়স ছিল মাত্র ২৭ বছর।

ছবি: অমিত সিং দেও।

প্রসঙ্গত, এই সময়ে শবরদের নিয়ে কাজ করছিলেন সাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবী (Mahasweta Devi)। তিনি শবরদের মূল স্রোতে ফেরাতে পথে নেমেছিলেন। পশ্চিমবঙ্গ খেড়িয়া-শবর কল্যাণ সমিতির কার্যকরী সভাপতি ছিলেন মহাশ্বেতা দেবী। বুধনের মৃত্যুর পর তিনি অভিযোগ করেন, জেল হেফাজতে বুধনের আত্মহত্যার যে কথা পুলিশ বলছে, তা মিথ্যা। পুলিশি নিগ্রহেই মৃত্যু হয়েছে তাঁর। মহাশ্বেতা দেবীর এই অভিযোগ অস্বীকার করে জেল কর্তৃপক্ষ। এরপর এই মামলায় কলকাতা হাই কোর্টের (Calcutta HC) প্রধান বিচারপতির হস্তক্ষেপ চেয়ে পোস্ট কার্ডে চিঠি লেখেন মহাশ্বেতা দেবী। সেই চিঠি রিট পিটিশন হিসেবে হাই কোর্ট গ্রহণ করে। জনস্বার্থ মামলা হিসেবে বিচারপতি রুমা পালের কাছে পাঠান প্রধান বিচারপতি।

[আরও পডুন: Exclusive: ‘প্রতীচী’র বিতর্কিত জমির মিউটেশন নিয়ে টানাপোড়েনের মাঝে হাতে লিজের নথি]

এদিকে, আদিম জনজাতি খেড়িয়া শবর সমাজের নিয়ম অনুযায়ী, ঘরের মধ্যেই মৃতদেহ মাটিতে পুঁতে দেওয়া হয়। সেভাবেই বুধনের দেহও তাঁর গ্রামের বাড়িতে নিজের ঘরে সমাধিস্থ করা হয়েছিল। এবার মহাশ্বেতা দেবীর মামলার পর হাই কোর্টের নির্দেশে মৃতদেহ মাটি খুঁড়ে তোলা হয়, পাঠানো হয় ময়নাতদন্তে। তার ভিডিও রেকর্ডিং আদালতে জমা পড়ে। সে বছর ৮ জুলাই হাই কোর্ট সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয়। তার আগে ১ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেয় রাজ্য সরকারকে।

দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে মামলা চলছিল। ৪৬ জন সাক্ষী দিয়েছিল। ২০০২ সালে চার্জশিট জমা পড়ে। ২০০৩ সালে চার্জ গঠন হয়। তারপর শুরু হয় বিচার। তৎকালীন ওসি (OC) অশোক রায় দোষী সাব্যস্ত হন। তবে তৎকালীন এএসআই অজয় সেনকে বেকসুর খালাস করে দেওয়া হয়। আর সোমবার তাকে ৮ বছরের কারাদণ্ড দিল পুরুলিয়া আদালত।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement
toolbarHome ই পেপার toolbarup ছাঁদনাতলা toolbarvideo শোনো toolbarshorts রোববার