পাকিস্তানের কিংবদন্তি অধিনায়ক ছিলেন তিনি। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ’৬৭-র ওভালে ন’নম্বরে নেমে সেঞ্চুরি করার রেকর্ডও আছে। আর কলকাতায় জীবনের শেষ টেস্টে তাঁকে ইডেনের দেওয়া ‘স্ট্যান্ডিং ওভেশনও’ কেই-বা ভুলেছে? সেই আসিফ ইকবাল (Asif Iqbal)বর্তমানে লন্ডন নিবাসী। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল দেখারও ইচ্ছে আছে। তার আগে টেস্ট ফাইনাল নিয়ে আসিফ ইকবাল দীর্ঘ সাক্ষাৎকার দিলেন ‘সংবাদ প্রতিদিন’-কে।
আর বাহাত্তর ঘণ্টার মধ্যে ওভালে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল শুরু। বিরাট কোহলির ভারত গত টেস্ট ফাইনালে উঠেও পারেনি শেষ পর্যন্ত। এবার আবার সামনে অস্ট্রেলিয়া। কী বলবেন, এবার পারবে ভারত?
আসিফ: দেখুন, ভারত-অস্ট্রেলিয়া দুটো টিমই বেশ ভাল। ব্যালান্সড টিম। তাই ফেভারিট বাছা একটু ডিফিকাল্ট। তবু বলব, ভারত এগিয়ে।
[আরও পড়ুন: ‘আমাদের প্রতি ধারণা বদলে গিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার’, পরিবর্তনের কারণ জানালেন কোহলি]
কেন?
আসিফ: দুই স্পিনারের জন্য। অশ্বিন আর জাদেজা। ওভালের পিচে পরের দিকে টার্ন হয়। অস্ট্রেলিয়ার কিন্তু সে দিক থেকে দেখলে নাথন লায়ন ছাড়া আর বিশেষ কেউ নেই।
ভারতের তো জশপ্রীত বুমরাহ নেই।
আসিফ: তাতে কী হয়েছে? বুমরাহ তো প্রায় এক বছর ধরে খেলছে না। তা, বুমরাহ খেলেনি বলে কি ভারত জেতেনি? আর টেস্ট ক্রিকেটে কখনও একজন প্লেয়ারের থাকা না থাকা বিশাল তফাত করে দিতে পারে না। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে সেটা হয়। একজন নামী ক্রিকেটারের থাকা না থাকায় প্রভাব পড়ে। সেখানে কোন টিম কত ভাল, খুব একটা কিছু যায় আসে না। হয়তো দেখলেন, কেউ একজন দারুণ খেলে দিল। একাই ম্যাচের গতিপথ বদলে দিল। কিন্তু টেস্টে সে সব চলে না। টেস্টে তোমাকে ধারাবাহিক ভাবে পাঁচ দিন ভাল খেলতে হবে। ম্যাক্সিমাম সেশন জিততে হবে। আর তা ছাড়া ভারতের কারা আছে দেখুন। সামি, সিরাজ, উমেশ। এরা কম কিছু? আমি বলছি না যে, বুমরাহর অভাব টের পাবে না ভারত। পাবে। কিন্তু বুমরাহর না থাকাটাই অস্ট্রেলিয়াকে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল জিতিয়ে দেবে, ভাবাটা ভুল। প্লাস, ইন্ডিয়ার হাতে দারুণ সব অলরাউন্ডারও আছে। আমি অবশ্যই ভারতকে ক্লিয়ার ফেভারিট বলছি না। কারণ, আজকালকার দিনে একে অন্যের বিপক্ষে এত খেলে যে, কার কোনটা শক্তি, কার কোনটা দুর্বলতা, সবাই জানে। তবু ভারত ৫১-৪৯ এগিয়ে। একটা কারণ বললাম আগে। ভারতের স্পিন অনেক বেশি শক্তিশালী। দ্বিতীয়ত, ওভাল নিরপেক্ষ কেন্দ্রে খেলা। ভারতীয় বোলিং এখন আর শুধুই ভারতের পিচে কার্যকর নয়। অস্ট্রেলীয় পরিবেশ, ইংল্যান্ডের পরিবেশ, সর্বত্র ভাল পারফর্ম করতে জানে।
বুমরা না থাকলে আকাশ-পাতাল তফাত হবে না। কিন্তু ঋষভ পন্থের অভাবও কি টের পাবে না ভারত? রোহিত শর্মার অফ ফর্মও কি চিন্তার বিষয় নয়?
আসিফ: আবারও বলব, টেস্টে কোনও একজনের থাকা না থাকা ইম্পর্ট্যান্ট নয়। আর ভারতের ব্যাটিং কিন্তু বিশ্বের বাকি টিমের কাছে ঈর্ষার বিষয়। এত এত ট্যালেন্ট! আর টি-টোয়েন্টিতে রোহিত কী করেছে, তা দিয়ে কিন্তু টেস্টের বিচার করতে বসবেন না। টি-টোয়েন্টি কখনওই স্কিল, ধৈর্যের পরীক্ষা নেয় না। যা টেস্ট ম্যাচ নেয়। তা ছাড়া টেস্টে সময় নিয়ে পারবেন আপনি। শুধু ক্লাস আর টেম্পারামেন্ট থাকতে হবে। যা শচীনের ছিল। দ্রাবিড়ের ছিল। ভিভিএসের ছিল। বর্তমান ভারতীয় টিমে যা কোহলির আছে, রোহিতের আছে।
তার মানে বিরাটের ফর্ম একটা বড় ফ্যাক্টর হবে। সঙ্গে গিলও আছেন!
আসিফ: টেস্টে গিল নিয়ে খুব বেশি বলতে পারব না। ক’টা টেস্ট খেলেছে এখনও পর্যন্ত?
পনেরোটা।
আসিফ: রান কত?
ন’শোর মতো।
আসিফ: দেখুন, শুভমান যে আইপিএলে দারুণ ফর্মে ছিল, কোনও সন্দেহ নেই। ক্লাস ব্যাটার। কিন্তু আইপিএল আর টেস্ট এক নয়। কিন্তু আপনাদের নির্বাচকরা যখন ওর উপর ভরসা রেখেছেন, আশা করছি সেই অনুপাতে ও রিটার্ন দেবে। তবে হ্যাঁ, কোহলি ফ্যাক্টর।
কী রকম?
আসিফ: কোহলিকে দারুণ দেখাচ্ছে। একটা লম্বা দুঃসময়ের পর আবার ফর্মে ফিরে এসেছে বিরাট। শুধু রান পাচ্ছে বলে বলছি না। যে আত্মবিশ্বাস বিরাটের মধ্যে দেখতে পাচ্ছি, সেটা ভা রতের পক্ষে বিশাল প্লাস পয়েন্ট। কোনও সন্দেহ নেই, বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে ভারত অনেকটাই নির্ভর করবে কোহলির উপর।
স্টিভ স্মিথের সঙ্গে কোহলির ডুয়েলটাও নিশ্চয়ই দেখার মতো হবে?
আসিফ: (হেসে) অবশ্যই। দর্শকদের জন্যও সেটা দারুণ ব্যাপার হবে।
দ্রাবিড়ের কথা উল্লেখ করলেন একটু আগে। ওভালে দ্রাবিড়ের রেকর্ড দুর্ধর্ষ। কোচ দ্রাবিড় কতটা ফ্যাক্টর হতে পারেন?
আসিফ: একটা কথা বিশ্বাস করি যে, কোচ যত বড় প্লেয়ারই হোক না কেন, দিনের শেষে প্লেয়াররাই আসল। বড়জোর দ্রাবিড় কী করতে পারে? না, নিজের ওভাল অভিজ্ঞতা ড্রেসিংরুমে শেয়ার করতে পারে। বাকি তো ক্রিকেটারদেরই করতে হবে।
শেষ প্রশ্ন। অস্ট্রেলিয়ার তিন পেসার নিয়ে খুব কথা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, কামিন্স-স্টার্কদের সামলানো টাফ হবে ।
আসিফ: বোলার কি ভারতের হাতেও নেই? যারা অস্ট্রেলীয়দের বিপদে ফেলতে পারে? আছে। দেখুন, আধুনিক ক্রিকেটে কেউ নাম দেখে আতঙ্কে ভোগে না। ও সব দিন চলে গিয়েছে। বরং অস্ট্রেলিয়াকে চিন্তায় রাখবে, ওদের দেশে গিয়ে ভারতের ওদের হারিয়ে আসা। ভারত কিন্তু এটা জেনে নামবে যে, আমরা অস্ট্রেলিয়াকে নিজেদের দেশে নয়, ওদের দেশে গিয়েও হারিয়ে এসেছি। একবার নয়, দু’বার।