অর্ণব আইচ: নম্বরহীন বাইকে ‘প্রেস’ স্টিকার। তা দেখেই সন্দেহ হয় পুলিশের। সূত্রের খবর পেয়ে উত্তর কলকাতার সিঁথির মোড়ের কাছে এসে পৌঁছয় কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স। গোয়েন্দা পুলিশের হাতে ধরা পড়ল বিহার থেকে কলকাতায় মারাত্মক অস্ত্র পাচার চক্রের মাথারা।
কলকাতায় মারাত্মক অস্ত্র কার্বাইন পাচার করছিল এই চক্রটি। একই সঙ্গে পাচার হয় আরও আগ্নেয়াস্ত্র। উত্তর কলকাতার সিঁথি থেকে গ্রেপ্তার হল চারজন। তাদের মধ্যে মহম্মদ ইমতিয়াজ ওরফে আব্বু ও মহম্মদ শাহিল মল্লিক বিহারের মুঙ্গেরের অস্ত্র পাচারকারী। সম্পর্কে ইমতিয়াজ শাহিলের বাবা। বাকি দু’জনের মধ্যে ভিকি প্রসাদ দক্ষিণ কলকাতার ভবানীপুর ও ইন্দ্রজিৎ শর্মা দক্ষিণ ২৪ পরগনার নরেন্দ্রপুর এলাকার বাসিন্দা। তারা কলকাতা ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার অস্ত্র পাচারকারী তথা এজেন্ট বলে অভিযোগ। ধৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে একটি মুঙ্গের মেড স্বয়ংক্রিয় রাইফেল কার্বাইন, যার দু’টি ম্যাগাজিন রয়েছে। এছাড়াও উদ্ধার হয়েছে দশটি অসমাপ্ত পিস্তল। পাচারকারীদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে একশোটি পাঁচশো টাকা, অর্থাৎ ৫০ হাজার টাকার জাল নোট।
[আরও পড়ুন: প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ মামলা: পর্ষদের বিজ্ঞপ্তিকে চ্যালেঞ্জ করে ফের মামলা হাই কোর্টে]
প্রাথমিকভাবে কলকাতা পুলিশের এসটিএফের আধিকারিকদের ধারণা, কার্বাইন ও জাল নোটের বদলে দশটি পিস্তল বিক্রি করা হচ্ছিল। এই অস্ত্র পাচারকারী চক্রকে জেরা করে জাল নোট পাচার চক্রের কয়েকজন মাথারও খোঁজ চলছে। আটক করা হয়েছে বাইকটিকেও। বৃহস্পতিবার চার অস্ত্র পাচারের অভিযুক্তকে ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হলে তাদের ১৪ দিনের জন্য পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক।
পুলিশ জানিয়েছে, বুধবার রাতে একটি নম্বরহীন বাইক সিঁথির মোড়ের কাছে দাঁড়িয়েছিল। ‘প্রেস’ লেখা বাইকটিতে কেন নম্বর নেই, তা নিয়ে সন্দেহ হয় এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার। সেইমতো তাঁরা পুলিশকে জানান। পুলিশ আধিকারিকরা আরও দু’জনকে তাদের সঙ্গে কথা বলতে দেখেন। ওই দু’জনের হাতে ছিল একটি ব্যাগ। অন্য দু’জন বাইকে রাখা আরও একটি ব্যাগ বের করে। পুলিশ সন্দেহের বশে বাইকটিকে আটক করে ব্যাগ দু’টি পরীক্ষা করতেই বেরিয়ে পড়ে মারাত্মক অস্ত্র ও জাল নোট। খবর পেয়ে এসটিএফ আধিকারিকরা এসে চারজনকে গ্রেপ্তার করেন।
প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে যে, বিহারের মুঙ্গেরের দুই বেআইনি অস্ত্রের মিস্ত্রি তথা পাচারকারী ইমতিয়াজ ও সাহিলের সঙ্গে ফোনেই যোগাযোগ হয় ইন্দ্রজিৎ ও ভিকির। মুঙ্গেরি দুই অস্ত্র পাচারকারীর কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকার জাল নোট ও ন’বোরের মুঙ্গের মেড মারাত্মক কার্বাইন উদ্ধার করেন গোয়েন্দারা। ইন্দ্রজিৎ ও ভিকি ওই নম্বরহীন বাইকটি নিয়ে আসে। তাদের কাছে ছিল দশটি অসমাপ্ত পিস্তল। গোয়েন্দাদের মতে, ওই পিস্তলগুলি তৈরি হয় দক্ষিণ ২৪ পরগনার বেআইনি অস্ত্র কারখানায়। কার্বাইন ও জাল নোটের বদলে দশটি অসমাপ্ত অস্ত্র কিনে নেয় ইমতিয়াজরা।
সূত্রের খবর, পিস্তলগুলি নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল মুঙ্গেরে। সেখানে যন্ত্রাংশ বসিয়ে অস্ত্রগুলি ‘সম্পূর্ণ’ করার ছক কষা হয়। সেগুলির একাংশ ফের দেওয়া হত ইন্দ্রজিৎদের। এদিকে, ইন্দ্রজিৎরা ওই কার্বাইনটি মোটা টাকায় কাকে বিক্রি করত, তা নিয়ে চলছে জেরা। কারণ, এই অস্ত্রটি দুষ্কৃতীদের হাতে পড়লে তার ফল হতে পারত মারাত্মক। এই অস্ত্র চোরাপথে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে পাচার করে কয়েকগুণ টাকা পাচারকারীরা রোজগার করার ছক কষে বলে ধারণা এসটিএফের। ধৃতদের জেরা করে এই অস্ত্র পাচার চক্রের অন্যদের খোঁজা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।