সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বেদান্ত গোষ্ঠীর সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে দিল ফক্সকন। ফলে ভারতে আসছে না ১ লক্ষ ৫৪ হাজার কোটি টাকার লগ্নি। ধাক্কা খেল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির স্বপ্নের প্রকল্প।
বিশ্বের বৃহত্তম বৈদ্যুতিন যন্ত্রাংশ প্রস্তুতকারক সংস্থা ফক্সকন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ভারতীয় শিল্পগোষ্ঠী বেদান্তের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধার। তবে তাইওয়ানের এই সংস্থা সোমবার জানিয়ে দিয়েছে ভারতে তারা আসছে না। এক বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, ‘ফক্সকন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ভারতে বেদান্ত গোষ্ঠীর সঙ্গে চুক্তিভিত্তিক উদ্যোগটি তারা আর এগিয়ে নিয়ে যেতে চায় না।’ গুজরাটের মাটিতে বেদান্তের এই শিল্প উদ্যোগে ভারতের মাটিতে চিপ তৈরির ভাবনা ছিল যা অঙ্কুরেই বিনষ্ট হল। যদিও কেন তারা বেদান্তের সঙ্গে আর ব্যবসা করতে চায় না তা নিয়ে কোনও বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হয়নি ফক্সকনের তরফ থেকে। তারা জানিয়েছে, এক বছরের বেশি সময় ধরে বেদান্ত গোষ্ঠীর সঙ্গে এ বিষয়ে কথাবার্তা চালিয়েছে। ‘দারুণ একটা সেমিকন্ডাক্টরকে বাস্তবে রূপ দিতে’ কথা চলেছে দফায় দফায়। তার পরেও বিষয়টি রূপ পায়নি। সেই কারণেই তারা এই প্রকল্প থেকে নিজেদের নাম সরিয়ে নিচ্ছে বলে জানানো হয়েছে। যৌথভাবেই এই প্রকল্পের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ফক্সকন, যা এখন থেকে শুধুই বেদান্তের মালিকানাধীন।
[আরও পড়ুন: পঞ্চায়েতের ফলাফল LIVE UPDATE: আরাবুলের গড়েই হার তৃণমূলের, আসন ছিনিয়ে নিল জমিরক্ষা কমিটি]
গুজরাট ভোটের আগে গত বছর সেপ্টেম্বরে ফক্সকনের সঙ্গে ১৯৫০ কোটি মার্কিন ডলারের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় বেদান্ত গোষ্ঠীর। ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় দেড় লক্ষ কোটি টাকা। আইফোন এবং অ্যাপেল সংস্থার জন্য চিপ তৈরি করা তাইওয়ানের সংস্থা ফক্সকন ভারতে লগ্নি করতে আসায় নিশ্চিতভাবেই উদ্দীপনা তৈরি হয় দেশের তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও এই প্রকল্প নিয়ে শুরু থেকেই প্রবল উৎসাহী ছিলেন। ভোটের আগে মোদির রাজ্যে নতুন কর্মসংস্থান ও শিল্পের জোয়ার আসার স্বপ্ন দেখানো হয়, যা নিশ্চিতভাবেই প্রভাব ফেলে ইভিএমে। মহারাষ্ট্র থেকে প্রায় ছিনিয়ে গুজরাটে এই প্রকল্প নিয়ে যাওয়ার পরেও অবশ্য শেষরক্ষা হল না। ফক্সকন এবং বেদান্ত দুই সংস্থা চিপ তৈরির কাজে আগে থেকেই অভিজ্ঞ। সেই কারণেই এই সংস্থার জোট নিয়ে উৎসাহ ছিল অনেকটাই বেশি। আশা করা হয়েছিল ২০২৬ সালের মধ্যে দেশের সেমিকন্ডাক্টরের বাজার বৃদ্ধি পেয়ে ৬৩০০ কোটি মার্কিন ডলারের বাজার তৈরি করবে। কিন্তু তা শুরু হওয়ার আগেই মুখ থুবড়ে পড়ল। ধাক্কা খেল মোদির মেক ইন ইন্ডিয়ার ভাবনা।
বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই অবশ্য ড্যামেজ কন্ট্রোলে নেমে পড়েছে কেন্দ্র। প্রাথমিকভাবে কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব টুইট করে জানান, ফক্সকন এবং বেদান্ত গোষ্ঠী একসঙ্গেই কাজ করবে এই প্রকল্পে। কিন্তু পরে তিনিই ফের জানান, ফক্সকন চলে গেলেও দেশে শিল্পক্ষেত্রকে তা কোনওভাবেই প্রভাবিত করবে না। তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী রাজীব চন্দ্রশেখর অবশ্য বলেছেন, সেমিকন্ডাক্টর তৈরির ক্ষেত্রে বেদান্তের কোনও অভিজ্ঞতা ছিল না। তার জন্য তাদের ফক্সকনের উপরেই নির্ভর করতে হত।
অবশ্য বেশ কিছুদিন ধরেই এই চুক্তি নিয়ে টালমাটাল পরিস্থিতি চলছিল। গুজরাট প্রশাসনের সঙ্গেও দফায় দফায় বৈঠক চলে। কিন্তু তা কার্যকর হয়নি। বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেবি-ও বেদান্ত গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নিয়মভঙ্গের অভিযোগে জরিমানা দায়ের করে। ফক্সকনের সঙ্গে চুক্তি বিষয়ে নিয়মবহির্ভূত তথ্য প্রকাশ্যে আনার কারণেই জরিমানা হয় তাদের। তবে শেষ পর্যন্ত সেই চুক্তিও ভেঙে গেল। ফক্সকন চলে যাওয়ার খবরে শিবসেনা উদ্ধব শিবিরের নেতা আদিত্য ঠাকরে কটাক্ষ করেন কেন্দ্রকে। টুইট করেন, ‘প্রায় চূড়ান্ত হয়ে যাওয়া একটি প্রকল্প প্রতিশ্রুতিভঙ্গের কারণে বাতিল হয়ে গেল।’ যদিও ফক্সকন কিংবা বেদান্ত, কোনও গোষ্ঠীই এই চুক্তি বাতিল বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চায়নি। তবে শোনা যাচ্ছে, বেদান্তর সঙ্গে গাঁটছড়া না বেঁধে ভারতে আলাদা ভাবে লগ্নি করার পরিকল্পনা করছে ফক্সকন।