অভিরূপ দাস: বেলগাছিয়ায় গোটা আটেক। দমদম স্টেশনের লাগোয়া অঞ্চলে চারটি। বাঁশদ্রোণীতে আরও পাঁচ। কুকুর নয় শিয়াল! শহরে জলাতঙ্ক ছড়াচ্ছে ধূসর লোমের মাংসাশী। দোষ হচ্ছে কুকুরের। সোমবার ছিল বিশ্ব জুনোসিস দিবস। ‘জুনোসিস’ অর্থাৎ পশুর থেকে মানুষের শরীরে অসুখ ছড়িয়ে পড়ার শব্দবন্ধ। এমন অসুখের মধ্যে রেবিস বা জলাতঙ্কই সর্বাপেক্ষা ভয়াল। মৃত্যুর হার একশো শতাংশ। ভুলে যাওয়ার নয়, ২০১১ সালে দেশে জলাতঙ্কে ২২৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল। তার মধ্যে শুধু পশ্চিমবঙ্গেই মারা গিয়েছিলেন ৭৩ জন।
যে মারণ অসুখের জন্য কুকুরকে দায়ী করে আমজনতা। রাস্তায় দেখলেই তাদের মারতে উদ্যত হন। আদৌ তার জন্য দায়ী নয় পাড়ার সারমেয়রা। কুকুরেরই এমন অসুখ করে শিয়ালের কামড় খেয়ে! শহর জুড়ে বহাল তবিয়তে ৪০টিরও বেশি শিয়াল। মাঝরাতে কান খাড়া করলেই ডাক শোনা যাচ্ছে। দক্ষিণ দমদম পুরসভার জলাতঙ্ক ক্লিনিকের দায়িত্বে থাকা পশু চিকিৎসক ডা. গৌতম প্রসাদ সরখেলের কথায়, দিনের বেলায় শিয়ালরা ঝোপে জঙ্গলে থাকে। রাত হলেই বেরিয়ে আসে। কুকুরকে কামড়ে দিলেই বিপত্তির শুরু। কামড় খাওয়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই কুকুরের সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমে মেগভিবডি টিস্যুর জন্ম হয়। প্রচণ্ড যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকে চারপেয়েরা। পশু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যন্ত্রণায় ৮ কিলোমিটার পর্যন্ত ছুটে যায় তারা।
সে কারণেই দেখা যায় রাস্তার যে কুকুরটা আচমকা কামড়ে দিল গতকাল পর্যন্ত সে এ পাড়াতেই ছিল না। ডা. সরখেল জানিয়েছেন, এই যন্ত্রণাকে অনেকটা আমাদের দাঁত ব্যথার সঙ্গে মেলানো যায়। মুখ দিয়ে লালা ঝরতে থাকে। অসহ্য যন্ত্রণাতেই কুকুর কামড়ে দেয়।
[আরও পড়ুন: বিষ খাইয়ে খুন! আফ্রিকার জঙ্গলে শয়ে শয়ে হাতির রহস্যমৃত্যুতে চরম উদ্বেগে পরিবেশপ্রেমীরা]
সাধারণত সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমে এই টিস্যু দেখা দেওয়ার পর থেকে কুকুরের বাঁচার আয়ু ৭ থেকে ১৪ দিন। তাই কুকুরটিকে আইসোলেশনে রেখে দেওয়া শ্রেয় বলে জানিয়েছেন জানিয়েছেন ডা. সরখেল। সাধারণ নিয়মেই ধীরে ধীরে তার মৃত্যু হবে। জনবহুল এলাকায় শিয়াল আসে না। তাদের থেকে সরাসরি মানুষের কামড় খাওয়ার সম্ভাবনা ছিটেফোঁটা। রাস্তার কুকুরদের বাঁচানো যায় শিয়ালের হাত থেকে? রাজ্য প্রাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডা. সিদ্ধার্থ জোয়ারদার জানিয়েছেন, রেবিস বা জলাতঙ্কের দুটি জীবনচক্র। একটি সিলভেটিক সাইকেল। যা শিয়াল-নেকড়ের মতো বন্যপ্রাণীদের দেহে দেখা যায়। অন্যটি আরবান সাইকেল যেটা রাস্তার কুকুরদের দেহে দেখা যায়। পথকুকুরদের শিয়ালের হাত থেকে বাঁচাতে প্রথমেই তাদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। জন্ম নিয়ন্ত্রণের টিকাকরণের পরেই কুকুরদের জলাতঙ্কের টিকা দিতে হবে। তাদের শরীরে জলাতঙ্ক না ঢুকলে মানুষও নিরাপদ থাকবে। সম্প্রতি লকডাউনের কারণে রাস্তাঘাটে যান চলাচল অনেক কমে যায়। শহর-মফস্বলে বন্ধ কারখানার আশপাশে শিয়াল দেখতে পেয়ে অনেকেই চমকে গিয়েছেন। রাস্তাঘাটে অযথা এদের আক্রমণ না করে বনদপ্তরকে খবর দিতে বলেছেন বিশেষজ্ঞরা।
The post কলকাতায় জলাতঙ্ক ছড়াচ্ছে শিয়াল! শহরে আস্তানা ৪০টিরও বেশি ধূসর লোমের মাংসাশীর appeared first on Sangbad Pratidin.