গোবিন্দ রায়: দীর্ঘ দেড় দশক ধরে দাঁতে দাঁত চেপে আইনি লড়াই চালিয়েছেন। অবশেষে এল জয়। হাই কোর্টের নির্দেশে স্বাধীনতা সংগ্রামীর ঘরে চালু হল প্রাপ্য সরকারি ভাতা।
জানা যায়, ১৯২৭ সালে অবিভক্ত বাংলার ময়মনসিংহ জেলার কিশোরগঞ্জ মহকুমার পাতুয়া গ্রামে জন্ম স্বাধীনতা সংগ্রামী নারায়ণ দাস মহন্তের। ছাত্রাবস্থাতেই যুগান্তর দলে যোগ দেন তিনি। প্রায় দু’বছর আত্মগোপন করে দলের জন্য কাজ করেন। স্বদেশি আন্দোলনের জেরে তাঁকে একাধিকবার গ্রেপ্তার করে তৎকালীন ইংরেজ সরকার। স্বাধীনতার জন্য আন্দামানের সেলুলার জেলেও কাটাতে হয়েছে বিপ্লবীকে।
পরে নারায়ণ দাস মহন্তকে মাতৃভূমিতে ফিরিয়ে এনে মুক্তি দেওয়া হয়। ভারতবর্ষের একাধিক স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নিয়েছিলেন প্রয়াত স্বাধীনতা সংগ্রামী। দেশভাগের পর তাঁর স্থায়ী ঠিকানা হয় নদিয়ার চাপড়াতে। পরে একাত্তরের মুক্তি যুদ্ধেও অংশ নেন। পরবর্তীতে ১৯৮০ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের জন্য চালু হয় কেন্দ্রীয় সরকারের স্বতন্ত্র সৈনিক সম্মান। কিন্তু ২০০৭ সালে তাঁর মৃত্যুর পর হঠাৎই কেন্দ্রীয় সরকারের স্বতন্ত্র সৈনিক সম্মান ভাতা বন্ধ করে দিয়েছিল তৎকালীন কেন্দ্র সরকার। যা থেকে বঞ্চিত হচ্ছিলেন তাঁর স্ত্রী পূর্ণিমাদেবী।
[আরও পড়ুন: ১৭ ঘণ্টা পর আয়ত্তে ট্যাংরার আগুন, হাইপাওয়ার তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রীর]
সেই থেকে শুরু আইনি লড়াই। মামলাকারীর আইনজীবী সূর্যপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়, অর্জুন সামন্তেরা জানান, পূর্ণিমাদেবীই যে নারায়ণ দাস মহন্তের স্ত্রী ছিলেন তা প্রমাণ করার আইনি লড়াই শুরু হয় ২০০৮ সালে। দীর্ঘ ৭ বছরের লড়াইয়ের পর ২০১৫ সালে নদিয়া জেলা আদালতে প্রমাণিত হয় পূর্ণিমা দাস মহন্তই বিপ্লবী নারায়ণ দাসের স্ত্রী। কিন্তু তারপরও চালু হয়নি পেনশন। পরে মামলা গড়ায় উচ্চ আদালতে।
তৎকালীন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের এজলাসে স্বতন্ত্র সৈনিক সম্মানের ২০১৩-র সংশোধিত আইনের যুক্তিকে খাঁড়া করে কেন্দ্র। কেন্দ্রের দাবি ছিল, বিপ্লবী নারায়ণ দাস মহন্তের দু’টি বিয়ে ছিল। প্রথম পক্ষের স্ত্রী মারা যাওয়ার পর তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেন। সংশোধিত আইন অনুযায়ী, দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী ভাতা পান না। ফলে মামলায় হেরে যান মামলাকারী পূর্ণিমা দাস মহন্ত। পরে সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে তৎকালীন হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি নিশীথা মাত্রের ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হন তিনি।
মামলাকারীর যুক্তি ছিল, ২০১৩-র আইন সংশোধনের আগে তাঁদের মামলা হয়। তাই সংশোধিত আইন এক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। এই যুক্তিতেই আসে জয়। হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ, কেন্দ্রীয় সরকারের স্বতন্ত্র সৈনিক সম্মান স্কিম অনুযায়ী যবে থেকে পেনশন আটকে রয়েছে সেই বকেয়া দিতে হবে। পাশাপাশি, নিয়মিত পেনশনের ব্যবস্থা করতে হবে। কিন্তু তারপরও বিভিন্ন টালবাহানায় কেটে গিয়েছে বেশ কয়েক বছর। বিভিন্ন সময় নথি নিয়ে টালবাহানায় আটকে রাখা হয় পেনশন। ফের আদালত অবমাননার মামলা দায়ের হয় হাই কোর্টে। বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্যের এজলাসে ভর্ৎসিত হয় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। আদালত অবমাননার রুল ইস্যু করেন বিচারপতি। অবশেষে গত ফেব্রুয়ারি মাসে আসে জয়। আদালতের নির্দেশে চালু হয় পেনশন। বকেয়া হিসেবে এককালীন ৩৪ লক্ষ টাকাও পান মামলাকারী।