ভাস্কর মুখোপাধ্যায়, বোলপুর: কখনও ‘গুড় বাতাসা’। আবার কখনও ‘চড়াম চড়াম’। নিজের মন্তব্যের মাধ্যমেই ভাইরাল অনুব্রত মণ্ডল। বীরভূমের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা আপাতত সিবিআইয়ের জালে। পাড়ার মুদি ব্যবসায়ী কেষ্ট কীভাবে হয়ে উঠলেন দাপুটে তৃণমূল নেতা? কীভাবেই বা গরু পাচারের সঙ্গে নাম জড়াল তাঁর? জেনে নিন অনুব্রতর উত্থান।
বোলপুর থেকে কিছুটা দূরে নানুরের হাটসেরান্দি গ্রামে জন্ম অনুব্রত মণ্ডলের (Anubrata Mandal)। কৃপাসিন্ধু মণ্ডলের সন্তান তিনি। মূলত কৃষক পরিবারের সন্তান অনুব্রত হাটসেরান্দি গ্রামেই বেড়ে ওঠেন। ওই গ্রামেই পৈতৃক জমি, বাড়ি রয়েছে তাঁর। বাড়িতে দীর্ঘদিন ধরে দুর্গাপুজোও হয়।
ছোট থেকেই পড়াশোনায় মন ছিল না অনুব্রতর। অষ্টম শ্রেণির পর আর বিশেষ পড়াশোনা হয়নি। অল্প বয়সেই বাবার ব্যবসায় যোগ দেন। বাবার মুদি দোকান সামলাতে শুরু করেন। গ্রিলের কারখানার কাজকর্মও দেখতে শুরু করেন। এক সময় নাকি মাছ বিক্রেতা ছিলেন অনুব্রত, এমনই দাবি রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর (Suvendu Adhikari)। যদিও মাছ বিক্রির কথা স্বীকার করেন না অনুব্রত ঘনিষ্ঠ অনেকেই।
[আরও পড়ুন: বঙ্গ তনয়ার প্রেমে হাবুডুবু, জার্মানি থেকে চুঁচুড়ায় ছাদনাতলায় ড্যানিয়েল]
ব্যবসার ফাঁকে রাজনীতির আঙিনায় পা রাখেন অনুব্রত। সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ডাক দিয়ে কংগ্রেসে নাম লেখান। সেই সময় বাংলায় যুব কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন প্রদ্যুৎ গুহ। তাঁর অনুগামী ছিলেন অনুব্রত। রাজনীতি, ব্যবসার ফাঁকে স্ত্রী ছবির সঙ্গে মন দেওয়া নেওয়া। আইনি বিয়ে সারেন। ১৯৯১ সালে কন্যাসন্তানের বাবা হন অনুব্রত।
বিয়ের পর বেশ কয়েকদিন বর্তমান ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহার সঙ্গে কাঁধে কাঁধে মিলিয়ে জমি বেচাকেনার ব্যবসা করতেন। এরপর তৃণমূলে নাম লেখান।
একজন সাধারণ কর্মী হিসাবে পথচলা শুরু হয়। নানুর গণহত্যার সময় প্রথম সারিতে দাঁড়িয়ে আন্দোলন করেছিলেন অনুব্রত। লড়াকু মানসিকতা এবং সাহসিকতাকে হাতিয়ার করে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নজরে আসেন। ২০০০ সালে রাজ্য স্তরে উঠে আসে অনুব্রতর নাম। তারপর থেকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয় অনুব্রতকে।
বীরভূমে কার্যত রাজ করেছেন অনুব্রত। দোর্দণ্ডপ্রতাপ তৃণমূল নেতা বিরোধীদের এমনকী পুলিশকেও হুমকি দিতে দু’বার ভাবতেন না। সেই তৃণমূল নেতাই আজ সিবিআইয়ের জালে। গরু পাচার মামলায় কীভাবে জড়িত তিনি, তা তদন্তসাপেক্ষ। তবে অনুব্রতর গ্রেপ্তারিতে পঞ্চায়েত ভোটের আগে বীরভূমের তৃণমূল শিবির বড়সড় ধাক্কা খেল বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।