[আরও পডু়ন: প্রতীক্ষার অবসান, আইপিএল ১৩-র টাইটেল স্পনসরের নাম ঘোষণা করল বিসিসিআই]
চরম আর্থিক অনটনের মধ্যে ২০০০ সালে ওড়িশা (Odisha) থেকে রোজগারের খোঁজে বাবা পূর্ণচন্দ্র পান্ডার হাত ধরে পশ্চিমবঙ্গে এসেছিলেন সূর্যকান্ত। হুগলির চুঁচুড়ায় জেলা খাদ্য ভবনের কাছে একটি ঘর ভাড়া করে রান্নার কাজ শুরু করেন বাবা। বাবার কাজে সাহায্য করেন সূর্যকান্ত। কিন্তু এই কাজ করতে গিয়ে শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। দেখানো হয় ডাক্তার। চিকিৎসক পরামর্শ দেন, এই কাজ করলে সূর্যকান্তর শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হবে। ছেলের শরীরের কথা চিন্তা করে এরপরই বাবা তাঁকে রান্নার কাজ থেকে সরিয়ে দেন। কিন্তু সংসারে যে বড়ই অভাব, অর্থের টানাটানি। তাই বাধ্য হয়েই বাবা চুঁচুড়ার খড়ুয়া বাজারে বিশ্বনাথ সাধুখাঁর মুদিখানার দোকানে কাজে লাগিয়ে দেন কিশোর সূর্যকান্তকে। তবে সূর্যকান্ত কোনও কাজকেই ছোট মনে করতেন না। সংসারের প্রয়োজনে মুদিখানার কাজকেই ভালবেসে গ্রহণ করেছিলেন তিনি। তবে শৈশব থেকেই ক্রিকেট খেলার প্রতি এক অসম্ভব আকর্ষণ অনুভব করতেন তিনি। কিন্তু অর্থের অভাবে খেলা হয়ে ওঠেনি। কিন্তু ক্রিকেটের প্রতি ভালবাসা অবসর সময়ে তাকে চুঁচুড়া ময়দানে টেনে নিয়ে যেত।
সেখান থেকেই স্কোরার হিসেবে ধীরে উত্থান তাঁর। চুঁচুড়া ময়দানে হুগলি স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশানের ক্রিকেট ম্যাচের স্কোরারের কাজও জুটে যায়। এরই মাঝে ২০১০–এ বাবা ও ২০১৪–য় মা মারা যাওয়ার পর সূর্যকান্ত বাস্তবের কঠিন লড়াইয়ের সম্মুখীন হন। একদিকে মুদিখানার দোকানের কাজ অন্যদিকে স্কোরারের কাজ দুটোই অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে চালিয়ে যেতে থাকেন সূর্যকান্ত। এরই পাশাপাশি ক্রিকেটের নিয়মাবলি নিয়ে অবসর সময়েও পড়াশোনা চালিয়ে যেতে থাকেন। অদম্য ইচ্ছাশক্তির জোরে ২০১৫–য় ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গলের স্কোরার হওয়ার পরীক্ষায় বসে যোগ্যতার সাথে উত্তীর্ণ হন। এরপর রঞ্জি-সহ বহু ক্রিকেট ম্যাচে স্কোরারের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ২০১৮–য় সিএবির সেরা স্কোরার হিসেবে সূর্যকান্ত পুরস্কৃত হন।
[আরও পডু়ন: খেলরত্ন সম্মান পাচ্ছেন রোহিত শর্মা, তালিকায় রয়েছেন সোনাজয়ী তিন অ্যাথলিটও]
এরপর আর তাকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। চলতি আইপিএলের ম্যাচের স্কোরার হিসেবে নির্বাচিত হন। এদিনই বেঙ্গালুরুর উদ্দেশে রওনা হচ্ছেন সূর্যকান্ত। সেখান থেকে সরাসরি দুবাই। সূর্যকান্ত জানান, তাঁর স্বপ্ন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মঞ্চে স্কোরার হওয়ার। আর সেই জন্য তিনি ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের (BCCI) পরীক্ষায় বসবেন বলে মনস্থির করেছেন। আইপিএলের পরই জোর কদমে সেই পরীক্ষার প্রস্তুতি চালাবেন বছর ৩৮–এর সূর্যকান্ত।
সুদূর ওড়িশায় জন্মভূমি আর কর্মভূমি বাংলা– এটাকে কী চোখে দেখেন? এই প্রশ্নের উত্তরে সূর্যকান্ত জানান, ‘‘শ্রীকৃষ্ণ এক জায়গায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন, কিন্তু কর্মভূমি ছিল অন্যত্র। সবকিছুর উপরে আমি নিজেকে একজন ভারতবাসী হিসেবেই ভাবি। তবে এই বাংলাকে হৃদয় দিয়ে ভালবাসি। কারণ বাংলা আমাকে জীবনে এগিয়ে যাওয়ার পথ দেখিয়েছে।’’ অন্যদিকে, মুদিখানার দোকানের মালিক বিশ্বনাথবাবু জানান, অসম্ভব নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে সূর্যকান্ত। আইপিএলে গেলে কামাই হবে ঠিক, কিন্তু জীবনে সূর্যকান্ত অনেকটা পথ এগিয়ে যাক এই শুভকামনাই করেন তিনি।
[আরও পডু়ন: দেশে প্রথমবার, অবসর নেওয়া ধোনিকে এই বিরল সম্মান দিতে চলেছে মুম্বই ক্রিকেট সংস্থা!]
এদিকে, তিন নয়, এক বছরের জন্যই IPL-এর মূল স্পনসর হতে চলেছে Dream 11। এর আগে সংস্থাটি আগামী তিন বছরের জন্য আইপিএলের মূল স্পনসর হওয়ার ব্যাপারে তদ্বির করলেও তাতে রাজি হয়নি ভারতীয় বোর্ড। অর্থাৎ চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বরই শেষ হয়ে যাবে চুক্তি।
The post স্বপ্ন হল সত্যি, আইপিএলের স্কোরার হয়ে দুবাই পাড়ি দিচ্ছেন হুগলির মুদি দোকানের কর্মচারী appeared first on Sangbad Pratidin.