রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়, চেন্নাই: বিভিন্ন ঘরানার কোচিংয়ের মতোই টিম তাতানোর ক্ষেত্রে এক-এক জন সুপার কোচ এক-এক রকম পন্থা প্রায়শই নিয়ে থাকেন। ক্লাব ফুটবলের বন্দিত কোচ পেপ গুয়ার্দিওলা যেমন দ্রুত উত্তেজিত হয়ে পড়েন। ম্যাঞ্চেস্টার সিটি গোল-টোল খেয়ে গেলে ড্রেসিংরুমে যে জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিতে শুরু করেন পেপ, প্লেয়ারদের তা চাগিয়ে দেয়। রিয়াল মাদ্রিদ কোচ কার্লো আন্সেলোত্তি আবার পেপের মতো উত্তেজনার বহিঃপ্রকাশে বিশ্বাসী নন। তিনি বিশ্বাস করেন, মাথা ঠান্ডা রেখে মোক্ষম স্ট্র্যাটেজিতে বিপক্ষকে ধরাশায়ী করতে। তা, ভারতীয় ক্রিকেট আকাশে সুপার কোচ হিসেবে দ্রুত আবির্ভূত হচ্ছেন যিনি, সেই গৌতম গম্ভীর কী বলেন-টলেন টিমকে? বা বলা ভালো, বারো বছর পর সুখস্মৃতির চিপকে আইপিএল ফাইনাল খেলতে নামার (গম্ভীরের অধিনায়ক হিসেবে প্রথম আইপিএল জয় চিপকেই, ২০১২ সালে) আগে টিমকে কী বললেন?
কিস্যু না। শুধু একখানা ভিডিও দেখালেন! রবিবাসরীয় চিপক গম্ভীরের (Gautam Gambhir) আপাতত আইপিএলের শেষ ম্যাচ হয়ে গেল কি না, সময় বলবে। এটা সর্বজনবিদিত যে, জাতীয় কোচের চেয়ারে রাহুল দ্রাবিড়ের উত্তরসুরি হিসেবে প্রবল ভাবে ভাসতে শুরু করেছে নাইট মেন্টরের নাম। ২০১৪ সালে কেকেআরে সাপোর্ট স্টাফ হিসেবে কাজ করা ডব্লিউ ভি রামনের মতো কেউ কেউ ইতিমধ্যেই জোরালো আওয়াজ তুলতে শুরু করেছেন যে, ভারতীয় কোচের হটসিটে গম্ভীর বসলে তার চেয়ে ভালো আর কিছু হয় না। রামন বলছিলেন, ‘‘ও যখন খেলত, তখন কেকেআরে কোচিং করিয়েছি আমি। আমার সব সময় মনে হয়েছে, গম্ভীর অসাধারণ নেতা। ২০১৪ সালে গম্ভীর যখন কেকেআর (KKR) ক্যাপ্টেন্সি করছে, তখন ওর স্ট্র্যাটেজি দেখতাম আর অবাক লাগত। গম্ভীরকে সাফল্য কেন ধাওয়া করে জানেন? কারণ ও যা করে, সৎ ভাবে করে। ভালোবেসে করে। ক্রিকেট ছাড়া আর কিছু বোঝে না গম্ভীর। ক্রিকেটকে উপাসনা
করে রীতিমতো।’’
[আরও পড়ুন: ‘পরের বছরও কেকেআর জার্সিতে খেলতে চাই’, ফাইনাল জিতিয়ে বলছেন স্টার্ক]
রামন বলছেন। ওয়াকিবহাল মহলও বলছে। তারা বলছে যে, একমাত্র ভিভিএস লক্ষ্মণ রাজি হয়ে গেলে আলাদা কথা। কিন্তু তিনি যদি কোচ হতে রাজি না হন, তা হলে গম্ভীরের চেয়ে বড় নাম এ মুহূর্তে বোর্ডের কাছে নেই। নাইট মেন্টরের ঘনিষ্ঠমহল এখনও বলছে যে, গম্ভীরের কাছে এখনও কোচ হওয়ার সরকারি প্রস্তাব বোর্ডের পক্ষ থেকে আসেনি। কেকেআর প্লেয়াররাও কেউ কেউ বললেন যে, গম্ভীর আগামী বছর থাকবেন নাকি থাকবেন না, তাঁরা এখনও জানেন না। কেকেআর মেন্টর তাঁদের কিছু বলেননি। কিন্তু কেকেআর সংসার এটা বলছে যে, চিপকে ফাইনালে নামার আগে টিমকে যে ‘উপহার’ দিয়েছিলেন গম্ভীর, তা চিরস্মরণীয় হয়ে থেকে যাবে।
ঠিক কোন ভিডিও শ্রেয়স আইয়ারদের দেখিয়েছেন ভারতীয় ক্রিকেটের ‘ডাবল জি’? সে ভিডিওয় ছিলও বা কী? কেকেআরে দু’দিন ছেড়ে-ছেড়ে প্রাইভেট ডিনারের রেওয়াজ এবার শুরু হয়েছে। প্লেয়ারদের মধ্যে একাত্মতা ধরে রাখতে যা চালু করা হয়েছে। শোনা গেল, গত কাল সেই নৈশভোজে গিয়ে নাকি ঈষৎ চমকে যান ক্রিকেটাররা। দেখেন, সেখানে ‘প্রোজেক্টর’ বসানো। কেকেআর ক্রিকেটারদের পূর্ণ জমায়েত ঘটতে, সেই প্রোজেক্টরে একটা ভিডিও চালিয়ে দেওয়া হয়। যে ভিডিও সপ্তদশ আইপিএলে নাইট সফরের বিভিন্ন মুহূর্ত ধরা ছিল। ড্রেসিংরুমে। টিম বাসে। ফ্লাইটে। নানা সময়ে টিমে যে সমস্ত সুখী মুহূর্ত সৃষ্টি হয়েছে, তা দেখানো হয় ওই ভিডিওয়। কেউ কেউ বলছিলেন,প্লেয়ারদের আবেগতাড়িত করে দেওয়ার মতো উপাদান ছিল সেই ভিডিওয়। এবং তাঁরা শেষে নাকি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েনও। এটাও বলা হল, পুরোটাই নাকি কেকেআর মেন্টর গম্ভীরের মস্তিষ্কপ্রসূত। টিমকে তাঁর নিরুচ্চার ভাবে মনে করিয়ে দেওয়া যে, ফাইনালে তারা হারুক বা জিতুক (কেকেআর অবশ্য জিতেছে) , সপ্তদশ আইপিএলে (IPL 2024) কেকেআরের সফর সোনালি হয়ে থেকে যাবে টুর্নামেন্ট ইতিহাসে। যা শত চেষ্টাতেও কেউ মুছে ফেলতে পারবে না। পাঠক, এবার বোঝা যাচ্ছে গুরু গম্ভীর কেন চির-ব্যতিক্রমী?