রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়: শাহরুখ খানকে আর ধরে রাখা যাচ্ছে না! সাদা টি শার্ট, সানগ্লাস আর জিনসে বলিউড বাদশাকে দেখলাম, আনন্দ-আবেগে উন্মত্ত প্রায়। কী করবেন, কী করা উচিত, যেন বোধগম্য হচ্ছে না। পরের পর ফ্লাইং কিস ছুড়ে দিচ্ছেন একজনের উদ্দেশ্যে। এবং দিচ্ছেন যাঁর দিকে, সেই সুনীল নারিন ইডেনে নিজের আইপিএল কেরিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি করে উঠলেন সদ্য! মহাকীর্তি ছুঁয়ে ব্যাটটা তুললেন ঈষৎ। টিভি সম্প্রচার ক্যামেরা এ সব ক্ষেত্রে যা করে, তা করে ফেলল দ্রুত। নাইট ডাগআউটে বসা মেন্টর গৌতম গম্ভীরকে ধরল। দেখলাম, গম্ভীরের মুখে এক অনির্বচনীয় হাসি ছেয়ে। এক স্মিত হাসি। প্রাপ্তির হাসি। বিশ্বাসের প্রতিদান পাওয়ার হাসি। সুনীল নারিন যে মঙ্গলবার ইডেনে রাজস্থান রয়্যালসের বিরুদ্ধে শুধু সেঞ্চুরি করলেন না। কেকেআরকে দুশো কুড়ি পার করে দিলেন না। একই সঙ্গে গুরু গম্ভীরকেও জিতিয়ে দিলেন।
কেকেআরকে দু’বার আইপিএল জেতানো ক্যাপ্টেন গম্ভীর নাইট সংসারে মেন্টরের বেশে ফেরত আসার পর নীরবে কিছু কিছু সংস্কার করেছেন। কিছু কিছু করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। যার একটা হল, কেকেআরের সঙ্গে বাংলার আত্মিক যোগাযোগ বাড়ানো। সোজাসুজি বললে, আগামী আইপিএল থেকে টিমে দু’একজন বাংলা ক্রিকেটার রাখা। না, আকাশদীপ কিংবা মুকেশ কুমার, শাহবাজ আহমেদদের নাকি চাইছেন না গম্ভীর। চাইছেন, বাংলার ভূমিপুত্রদের। গম্ভীরের অধিনায়কত্বেই কেকেআরে শেষ বাংলার প্লেয়াররা খেলে গিয়েছেন। লক্ষ্মীরতন শুক্লা। মনোজ তিওয়ারি। কিন্তু তার পর থেকে আর কাউকে দেখা যায়নি নাইট জার্সি পরে খেলতে। গম্ভীর চাইছেন কেকেআরকে আরও বেশি করে বাংলাকেন্দ্রিক করে তুলতে।
[আরও পড়ুন: মমতার উত্তরসূরি কি অভিষেক? মুখ খুললেন তৃণমূল সুপ্রিমো]
শেষ পর্যন্ত তা হবে কি না, আইপিএল (IPL 2024) টিমে খেলানোর মতো বাংলার ভূমিপুত্র ক্রিকেটার পাওয়া যাবে কি না, সময় বলবে। কিন্তু আপাতত মনে হচ্ছে, গম্ভীরের (Gautam Gambhir) সেরা মাস্টারস্ট্রোক হল নারিনকে বিশ্বাস জোগানো। ভরসা ফিরিয়ে দেওয়া। গত কয়েক বছর ধরে আইপিএল খুব ভালো যায়নি নারিনের। গম্ভীর অধিনায়কত্ব ছেড়েছুড়ে চলে যাওয়ার পর কেকেআর নারিনকে আর ওপেনিংয়ে নিয়মিত খেলায়ওনি। এমনকী অনেকেই ভেবেছিলেন যে, আইপিএলে নারিনের ‘এক্সপায়ারি ডেট’ পেরিয়ে গিয়েছে। তিনি এখন বুড়ো ঘোড়া। টগবগিয়ে আর ছুটতে পারেন না। কিন্তু সেই ধারণা যে কতটা ভুল, প্রমাণ করে দিয়েছেন গম্ভীর ফেরত এসে। সর্বসমক্ষে নারিন নিয়ে বলে। যেখানে মিডিয়া ছিল। যেখানে নাইট সমর্থককুল ছিল। কেউ ন্যূনতম ভাবতে পারেনি, নারিনকে (Sunil Narine) সবার সামনে আত্মত্যাগের সমনামী বলে দেবেন গম্ভীর। যা নাকি মনোবলবর্ধক টনিকের মতো কাজ করে। নারিন তেতে যান। তেতে যান পুরনো নেতার বিশ্বাস ফেরাতে।
আর তাতে কাজ হয়েছে ঠিক কতটা? এ দিন কমেন্ট্রি বক্স থেকে একফাঁকে বেরিয়ে প্রাক্তন অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক বলে গেলেন, ‘‘এ রকম পাওয়ার হিটিং আমি খুব বেশি দেখিনি। নারিনকে একস্ট্রা অর্ডিনারি বললেও কম বলা হয়।’’ শোনা গেল, ইদানিং টিমের প্র্যাকটিস সেশনে এসে নারিনকে নিয়ে একটা কাজ নাকি প্রায়ই করছেন গম্ভীর। তা হল, সেন্টার উইকেটে চলে গিয়ে ‘রেঞ্জ হিটিং’ প্র্যাকটিস করানো। বিশেষ করে ইডেনের যে সমস্ত অঞ্চল ছোট, অর্থাৎ মাঠ থেকে যে সমস্ত অঞ্চলের বাউন্ডারির দূরত্ব কম, সে সব জায়গায় নাকি নারিনকে হিট করতে বলছেন গম্ভীর। যা মারাত্মক কাজে দিয়েছে। শোনা গেল, কেকেআর মেন্টর প্রভূত বিশ্বাস করেন যে, ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডারের ব্যাট সুইং মারাত্মক ভালো। তাই নারিনের টেকনিক আছে কি না, সে সবকে আমল দিতেই যান না। নারিনকে তাঁর নির্দেশিকা ধরানো থাকে যে, টেকনিক নিয়ে ভাবারই দরকার নেই। রেঞ্জে পেলে সোজা উড়িয়ে দেবে! নারিনকে ওপেনারের ভূমিকায় আনার পর তাঁকে গম্ভীর এটাও বলেছেন যে, টাইম করো। পাওয়ার নিয়ে ভাবতে যেও না। নারিনের সেঞ্চুরি পর কেন গৌতম গম্ভীরের মুখে স্মিত হাসি ছিল, এর পর বোঝা যাচ্ছে?