খরচ করছেন। বিনিয়োগও করছেন। কিন্তু ফিরছে কতটুকু? সোজা কথায় বলতে গেলে রিটার্ন কতটা পাচ্ছেন? আর যা পাচ্ছেন, তা যথাযথ তো? উত্তর নিয়ে যদি মনে দ্বিধা থাকে, তাহলে তা নিরসনে কাজে লাগতে পারে সঠিক বিশ্লেষণ। সেটাই জানাচ্ছেন এবারের অতিথি শৈবাল ব্যানার্জি
‘সঞ্চয়’-এর জন্য প্রথম কলম ধরার নেপথ্যে যে কাহিনি লুকিয়ে আছে তা আপনাদের সকলেরই জানা। এদেশে বিত্তবানের সংখ্যা কম তো নেই-ই-মিলিয়নারদের পরিসংখ্যানও ইদানিং চমকপ্রদ। একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতবর্ষে ৭.৯৬ লক্ষ মিলিয়নার ছিলেন গত বছর। আগামি দিনে বাড়বে, বেড়ে প্রায় ১৬ লক্ষে পৌঁছবে ২০২৬ সালে। তাহলে প্রশ্ন, মানুষ কোথায় বিনিয়োগ করছেন? কোথায় লগ্নি করা হচ্ছে ভারতীয়দের অর্থ সম্পদ?
সম্পদশালীদের কথা আর নতুন করে বলছি না। তবে দেখুন, আমাদের মিডল ক্লাস তথা মধ্যবিত্ত শ্রেণি কিন্তু সমাজের মেরুদণ্ড, অর্থনীতিতেও তাই। তা সত্ত্বেও, ফাইন্যান্সিয়াল প্রোডাক্টের চল খুব সীমিত। যদি আধুনিক জগতের প্রোডাক্টগুলি ধরেন, তাহলে বুঝবেন সেগুলির ‘পেনিট্রেশন’ বেশ কমই। রিয়েল এস্টেট এবং গোল্ড, এই দুই অ্যাসেট ক্লাসের প্রাধান্য তো চোখে পড়ার মতো। প্রায় ৫০ শতাংশ ‘ওয়েলথ’ এই দু’টিতে লগ্নি করা হয়েছে। বাকিটুকু আছে নানা ফিক্সড ইনকাম অ্যাসেটে। ব্যাংক এফডি, প্রভিডেন্ট ফান্ড, স্মল সেভিংস প্রকল্প ইত্যাদির কথা সকলেই জানেন।
[আরও পড়ুন: মুদ্রাস্ফীতির পিচেও ভাল রিটার্ন দিচ্ছে সোনা, আশাবাদী বিশেষজ্ঞরা]
অর্থাৎ, এত সবের মধ্যে মার্কেট-লিঙ্কড ইনস্ট্রুমেন্টসের স্থান নগণ্য, প্রায় চোখেই পড়ে না। এমনই ছোট সেগুলির পরিসর। আমি মূলত ইকুইটি (ডিরেক্ট) এবং মিউচুয়াল ফান্ডের কথাই এখানে বলতে চাইছি। এই সন্ধিক্ষণে এদের ভূমিকা ১০ শতাংশেরও কমে সীমিত। মোট ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাসেটের একটি ক্ষুদ্র অংশ মাত্র। অথচ ভাবনার বিষয় এই যে সাধারণ ভারতীয়রা কিন্তু সনাতনী সঞ্চয়ের মাধ্যমে উপকৃত হচ্ছেন না। মুদ্রাস্ফীতিকে মান্যতা দেওয়ার পর তাঁদের হাতে কতটুকু পড়ে থাকে, তা কি কেউ খেয়াল করেছে? আমার অভিজ্ঞতা বলছে, না। মুদ্রাস্ফীতির জন্য আমাদের ভাল উদ্দেশ্য, সঠিক উদ্যোগ, সবই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
ফিক্সড ডিপোজিটের মাধমে গ্যারান্টিড ধরনের রিটার্ন পাওয়া সম্ভব। এই কথা যেমন সত্যি, তেমনই সত্যি যে এই রিটার্নের উপর ট্যাক্সও দিতে হবে। কারণ ইন্টারেস্ট কর-মুক্ত নয়। যখন আপনি ফিক্সড ডিপোজিটের কথা ভাবেন, তখন কি আয়কর তথা ইনফ্লেশনের কথাও চিন্তা করেন? সাধারণত আমরা তা করি না। করি না বলেই ধরতে পারি না যে আমাদের ‘অ্যাভারেজ রিয়াল রিটার্ন’ প্রায় একেবারেই হতাশাজনক। ইনফ্লেশনের জন্য আমাদের ক্রয়ক্ষমতা (পারচেজিং পাওয়ার) ক্রমাগত কমে আসছে।
কয়েকটি সোজাসাপ্টা পরিসংখ্যান বুঝিয়ে বলি পরিস্থিতি ঠিক কেমন। গত দুই দশকের ট্রেন্ড যদি দেখেন, তখন বুঝবেন ফিক্সড ডিপোজিটের গড় রিটার্ন ছিল ৭.৩২ শতাংশ (২০০২ সাল থেকে ধরে ২০২১ সাল পর্যন্ত)। সর্বোচ্চ রেট ছিল ৯.১৩ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন ছিল ৫.৩০ শতাংশ। এই সময়ে গড় মুদ্রাস্ফীতি কত ছিল, জানেন? অ্যাভারেজ ইনফ্লেশন ছিল ৬.৩৬ শতাংশ। অতএব, বুঝতেই পারছেন যে, সাধারণ বিনিয়োগকারীর রিয়াল রিটার্ন ছিল গড়ে এক শতাংশের কম। এবার যদি আয়করের ভার যোগ করেন, তাহলে পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়ে উঠবে, তাই নয় কি? হ্যাঁ, ঠিকই। রিয়াল রিটার্ন যে নেগেটিভ তা তো বোঝাই যাচ্ছে।
এত পর্যন্ত পড়ার পর যদি আপনার মনে সঠিক প্রশ্নগুলি জাগে, সেগুলির উত্তর খোঁজার ব্যবস্থা করুন। দেরি করবেন না, কারণ তা হলে বহুমূল্য সময় আরও নষ্ট হবে। বিনিয়োগকারীকে যে দায়িত্বগুলি নিতে হয়, সেগুলির মধ্যে সাশ্রয় অবশ্যই আছে। সময় সাশ্রয়ের থেকে বেশি জরুরি আর কি কিছু আছে?
(লেখক বিনিয়োগ উপদেষ্টা)