ফিনান্সিয়াল মার্কেটের অন্যতম প্রমাণিত সত্য হল এখানে সব সম্পদ সব সময় ভালো লাভ দিতে পারে না। সব সম্পদের মূল্যও সব সময় সমানভাবে বৃদ্ধি পায় না। এই পরিস্থিতিতে সাধারণ বিনিয়োগকারীর করণীয় কী? জানাচ্ছেন সোমনাথ পাল।
ফুলকপি সারা বছর পাওয়া যায়। কিন্তু তার স্বাদ, গন্ধ ও দাম বছরের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকম থাকে। জানেনই তো শীতকালে ভালো ফুলকপির ফলন সবথেকে বেশি। তাই শীতকালে ফুলকপির বিক্রিও সবথেকে বেশি। কিন্তু ঠান্ডার সময় পটল ও ঝিঙেও তো পাওয়া যায়। কিন্তু সে সব শুকনো ও বিস্বাদ, আর দাম খুব উঁচুর দিকে। শাকসবজির বাজারের মতো, বিত্তবাজার বা ফিনান্সিয়াল মার্কেটেও সব সম্পদ সব সময় ভালো লাভ দিতে পারে না।
সব সম্পদ মানে? সম্পদ আবার হরেক রকম হয় নাকি? হয় বইকি! ফিক্সড ডিপোজিট, মিউচুয়াল ফান্ড, ULIP, এনডাওমেন্ট পলিসি, শেয়ার, বন্ড ইত্যাদি –যেখানে আমরা বিনিয়োগ করে টাকা বাড়াবার চেষ্টা করি, সেগুলোই আর্থিক সম্পদ। ফিনান্সিয়াল অ্যাসেট, ইংরাজি করলে। এছাড়া বাড়ি, জমি, দোকানঘর, গুদাম ইত্যাদি যদি হয়, তাহলে আপনি রিয়েল এস্টেটের মালিক। এছাড়া সোনা, রুপো, মূল্যবান রত্নও হতে পারে। বহু ভারতীয় পরিবারে কিছু না কিছু থাকেই। গত কয়েক মাসে সোনা ও রুপোর দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে অনেক পরিবারের মোট সম্পদ বেশ বেড়ে গেছে। উচ্চবিত্ত পরিবারে বিশেষ সম্পদ হিসেবে থাকে প্রখ্যাত শিল্পীদের আঁকা ছবি, অলংকার, বিলাসবহুল ইয়ট বা রেসের ঘোড়া। আমার মতে যে জিনিসের (বা যে বিনিয়োগের) মূল্য সময়ের সঙ্গে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায় -- সেটাই হল সত্যিকারের সম্পদ।
কিন্তু প্রশ্ন হল, সব সম্পদের মূল্য কি সব সময় সমান ভাবে বৃদ্ধি পায়? না। কখনওই নয়। ‘গালি বয়’ সিনেমার জনপ্রিয় সংলাপ ও গান মনে পড়ে কি?‘আপনা টাইম আয়েগা’র ভরসায় থাকে সব সম্পদ শ্রেণি। যার যখন সময় আসে -- সে তখন হিরো। কখনও সোনা, কখনও রিয়েল এস্টেট, কখনও ইক্যুইটি শেয়ার বা কখনও বন্ড। এই পরিস্থিতিতে সাধারণ বিনিয়োগকারী কী করবেন? তিনি কি একটা সম্পদ শ্রেণি থেকে আরেকটা সম্পদ শ্রেণিতে ছুটে বেড়াবেন? কিন্তু কোন সম্পদ শ্রেণী কখন, কতদিনে বা কতটা বাড়বে সেটা বোঝা তো সম্ভব নয়। NSE, AMFI ও Bloomberg-এর গবেষণা থেকে জানা যাচ্ছে যে ২০০৭ থেকে ২০২৫ (১৮/১৯ বছর) ইকুইটি শেয়ার ৭ বার (৭ বছর) লাভজনক থেকেছে। তার তুলনায় ভারতীয় ঋণপত্র মাত্র দু'বার (২ বছর) লাভজনক থেকেছে। এবং সোনা ৫ বার (৫ বছর) লাভজনক থেকেছে।
সুতরাং এখান থেকেই বোঝা যাচ্ছে যে, যে কোনও বিনিয়োগকারীকে সবরকম সম্পদ শ্রেণিতেই কিছু কিছু টাকা রাখা প্রয়োজন। এবার কোন সম্পদ শ্রেণিতে কোন বিনিয়োগকারী কত টাকা রাখবেন, সেটা নির্ভর করছে তাঁর ব্যক্তিগত ঝুঁকির নেওয়ার শক্তির ওপর। এই ভাবেই তৈরি করতে হয় সম্পদ বরাদ্দ। বিনিয়োগ এমন ভাবে করতে হবে যাতে একটা না হলেও আরেকটা বা আরও দু’টি সম্পদ শ্রেণি সর্বদা বিনিয়োগকৃত টাকাকে বাড়িয়ে নিয়ে চলে। এবার কোথায় কত টাকা রাখবেন, সেটা ঠিক করার জন্য একজন পেশাদারের সঙ্গে আলোচনা করে স্থির করুন। ঠিক যেরকম ডাক্তারবাবুর পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খান। সঠিক সম্পদ বরাদ্দ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত।
