শ্রীকান্ত পাত্র, ঘাটাল: সেচের জল না পেয়ে ভোট বয়কটের ডাক দিলেন দাসপুরের খুকুড়দহ গ্রামের বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, বছর তিনেক আগের নদী থেকে জল উত্তোলন প্রকল্প (আরএলআই) বন্ধ হওয়ার মুখে। বার বার প্রশাসন থেকে শুরু করে শাসকদলের শরণাপন্ন হলেও জল উত্তোলন প্রকল্প চালুর কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। ফলে প্রকল্পটি যেমন নষ্ট হতে বসেছে, তেমনই চড়া দামে জল কিনে চাষ করতে হচ্ছে চাষিদের।
গ্রামবাসীদের প্রশ্ন, চালুই যদি না করা গেল, তাহলে কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করে আরএলআই প্রকল্প বসানো হল কেন? কেন-ই বা এভাবে সরকারি অর্থ নয়ছয় করা হল? সমস্যার কথা মানছেন দাসপুর ২ নম্বর ব্লকের জেলা পরিষদ সদস্য তথা জেলা কৃষি ও সেচ কর্মাধ্যক্ষ আশিস হুতাইত। তিনি বলেন, "এটা ঠিকই দাসপুর ২ নম্বর ব্লকের খুকুড়দহ গ্রামে বছর তিনেক আগে দুর্বাচটি নদীতে এগ্রি মেকানিক বিভাগের একটি আরএলআই প্রকল্প বসানো হয়। সেটি আজও চালু হয়নি। স্থানীয় একটি সমস্যার জেরেই এই জটিলতা। দেখছি কীভাবে সমস্যার সমাধান করা যায়।"
[আরও পড়ুন: একই পদের নিয়োগ বাতিল তিনবার! অঙ্কিতা-ববিতার পর চাকরিহারা অনামিকাও]
উল্লেখ করা যায়, ২০২০-২১ অর্থবর্ষে কৃষি মেকানিক বিভাগের উদ্যোগে কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করে দাসপুর ২ নম্বর ব্লকের খুকুড়দহ গ্রামে দুর্বাচটি নদীতে একটি জল উত্তোলন প্রকল্প (রিভার লিফটিং ইরিগেশন বা আরএলআই) বসানো হয়। উদ্দেশ্য ছিল, নদী থেকে মেশিনের সাহায্যে জল তুলে সেচের কাজে ব্যবহার। উপকৃত হবেন গ্রামের চাষিরা। তার জন্য অত্যন্ত স্বল্পমূল্য ব্যয় করতে হবে চাষিদের। গ্রামে আরএলআই প্রকল্প বসতেই খুশি হন চাষিরা। কিন্তু সেই প্রকল্প চালু হল কই?
অভিযোগ, পাশের দাসপুর ১ নম্বর ব্লকের আড়খানা গ্রামের বাসিন্দাদের বাধায় খুকুড়দহ গ্রামের আরএলআই প্রকল্পে বিদ্যুৎ সংযোগ করা যায়নি। ফলে চালু না হয়ে তালাবন্দি হয়ে পড়ে রয়েছে কয়েক লক্ষ টাকার আরএলআই প্রকল্প। দুই ব্লক প্রশাসন ও দুই ব্লকের শাসকদলের শত চেষ্টাতেও আজও চালু হল না জল উত্তোলন প্রকল্পটি। ফলে গ্রামেরই এক বেসরকারি শ্যালো থেকে চড়া দামে জল কিনে চাষ করতে হচ্ছে চাষিদের। খুকুড়দহ গ্রামের বাসিন্দা সরোজ পাঁজা, বানেশ্বর ভুঁইয়া, পূর্ণেন্দু চক্রবর্তী, মাণিক আদক, গোপাল সামন্ত বলেন, "দাসপুর ১ ও ২ নম্বর ব্লক প্রশাসনের উদ্যোগে প্রকল্পটি চালুর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে। সেই ২০২০ সাল থেকে বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে জল প্রকল্পটি। আসলে আড়খানা গ্রামের বাসিন্দাদের বাধায় বিদ্যুৎ সংযোগ করা যায়নি ওই প্রকল্পে। ফলে আমাদের চড়া দামে জল কিনে চাষ করতে হচ্ছে। যেখানে আরএলআই থেকে এক হাজার টাকায় জল পাওয়া যায়, সেখানে বিঘা পিছু দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা দরে জল কিনতে হচ্ছে আমাদের। শাসকদলেরও আর কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই। তাই আমরা ঠিক করেছি, আমাদের গ্রামের প্রায় দেড় হাজার ভোটার এককাট্টা হয়ে ভোট বয়কটের ডাক দিয়েছি। এবার থেকে যতদিন না এই জল প্রকল্প চালু হয়, ততদিনই কোনও নির্বাচনে আমরা ভোট দেব না।’’
[আরও পড়ুন: লোকসভায় প্রথম জয়ের খাতা খুলল বিজেপি, কোন পথে জয়ী পদ্ম প্রার্থী?]
গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় ভোট বয়কটের পোস্টারও দিয়েছেন সরোজবাবুরা। ফলে চাপে রয়েছে শাসকদল থেকে বিরোধীরা। দাসপুর ২ নম্বর ব্লক তৃণমূল সভাপতি তথা জেলা পরিষদ সদস্য সৌমিত্র সিংহরায় বলেন, ‘‘খবরটি জানা ছিল না। আমরা অবশ্যই চেষ্টা করছি যাতে আরএলআই প্রকল্পটি খুব শীঘ্রই চালু করা যায়। এ নিয়ে দাসপুর ১ নম্বর ব্লক প্রশাসনের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হবে।’’