শান্তনু কর, জলপাইগুড়ি: “ভূত আমার পুত, পেত্নী আমার ঝি, রাম-লক্ষ্মণ বুকে আছে, ভয়টা আমার কি”! ছোটবেলায় ভূতের ভয় তাড়াতে এই ছড়াই বড় ভরসা ছিল মা-ঠাকুমাদের৷ কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে এই ছড়া শিখিয়েও বাড়ির ছেলে-মেয়েদের স্কুলে পাঠাতে পারছেন না জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের পাহাড়পুরের চৌধুরিপাড়া ও তার আশপাশের গ্রামের বাসিন্দারা৷ স্কুলের এক বন্ধুর সাম্প্রতিক অবস্থা দেখে, বাকিদের মনেও জাঁকিয়ে বসেছে ভূতের আতঙ্ক৷ তাদের আশঙ্কা, স্কুলে গেলেই এবার ঘারে চেপে বসবে ‘তেনারা’৷ পত্রপাঠ বন্ধ হওয়ার মুখে ওই গ্রামের গোমস্তাপাড়া মোহনচন্দ্র প্রাথমিক বিদ্যালয়৷ যাতে বেজায় চিন্তায় পড়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ৷
[মুখ্যমন্ত্রীর জনসভায় ঢোকার অনুমতি পেলেন না সব্যসাচী দত্ত!]
ঘটনার সূত্রপাত হয় বুধবার সকালে৷ তৃতীয় শ্রেণির এক ছাত্রীর অস্বাভাবিক আচরণকে কেন্দ্র করে ভূতের আতঙ্ক ছড়ায় ওই স্কুলে৷ চৌধুরিপাড়া ও তার আশপাশের গ্রামে রটে যায় যে, স্কুল থেকে ফেরার পথে ওই ছাত্রীকে ভূতে ধরেছে৷ ওই ছাত্রীর বাবা কাশিম আলি জানান, “স্কুল থেকে ফেরার পর থেকেই অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকে মেয়ে। একা একাই হাসতে থাকে। সেই হাসির শব্দে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠছিল সকলের। হাসতে হাসতেই মেয়ে বলছিল, আমার জন্য প্রার্থনা কর, না হলে ক্ষতি করব।” জানা গিয়েছে, কয়েক বছর আগে ওই স্কুলের পাশে আত্মহত্যা করেছিলেন এক মহিলা। চৌধুরিপাড়ার বাসিন্দাদের ধারনা, ওই মহিলার অতৃপ্ত আত্মাই ভর করেছে ওই ছাত্রীর উপরে। ফলে আরও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে সকলের মধ্যে। সন্ধ্যার পর থেকে বাড়ি থেকে বাইরে আসার সাহস দেখান না কেউ৷
লোকমুখে এই ভূতের গল্প ছড়িয়ে পড়তেই ওই স্কুলমুখো হচ্ছে না চৌধুরিপাড়া ও আশপাশের গ্রামের পড়ুয়ারা৷ গোমস্তাপাড়া মোহনচন্দ্র প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বর্তমান ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ১৫৫ জন। জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার উপস্থিতির সংখ্যা ছিল মাত্র ১৮ জন। স্কুলের শিক্ষিকা জ্যোতি রায় জানান, “বাচ্চাদের মনে আতঙ্ক চেপে বসেছে। আতঙ্ক দূর করতে স্কুল ছুটির পর বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচারের কর্মসূচি নেওয়া হবে৷ প্রচার করব আমরা” স্থানীয় এক মহিলা জানান, তাঁর বাড়ির পাশেই ঘটনাটি ঘটে। ফলে ভয়ে স্কুলে যেতে চাইছে না তাঁর বাড়ির বাচ্চাও। এই ঘটনার কিনারা হোক চাইছেন গ্রামের সকলেই। শাহজাহান চৌধুরি নামে এক বাসিন্দা জানান ওঝাই তাঁদের জানিয়েছেন যে, ওই ছাত্রীকে ভূতে ধরেছে৷
[রহিম ভাইয়ের হাতে তৈরি প্রতিমার কাঠামো, সম্প্রীতির মেলবন্ধন জগদ্ধাত্রী পুজোয়]
ছাত্রীর বাবা কাশিম আলি আরও জানান যে, ওঝায় কাজ না হলে ডাক্তারের কাছেও নিয়ে যাবেন মেয়েকে। এই ঘটনা ওই এলাকায় এতটাই শোরগোল ফেলে দেয় যে, খবর পৌঁছায় যুক্তিবাদী সংগঠনের সদস্যদের কাছেও। জলপাইগুড়ি সায়েন্স এন্ড নেচার ক্লাবের সম্পাদক রাজা রাউত জানান, ভূত বলে কিছু নেই। সবটাই মনের ভুল। হয়তো অন্য কোনও শারীরিক সমস্যা হয়েছে মেয়েটির। চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন তিনি৷ পাশাপাশি তাঁরাও ঘটনাস্থলে যাবেন বলে জানান রাজাবাবু৷
The post ছাত্রীর অদ্ভুত হাসিতে ভয়! ভূতের আতঙ্কে ফাঁকা গোটা স্কুল appeared first on Sangbad Pratidin.