সংগ্রাম সিংহরায়, শিলিগুড়ি: ডেস্টিনেশন টাইগার হিল। নয়া সাজে সাজছে প্রায় ৩ হাজার মিটার উঁচু নৈসর্গিক সৌন্দর্যে ঘেরা শৈলরানি। ফলে এবার থেকে গাড়িতে করে এসে নয়, এখানেই রাত্রিবাস করে ভোরে উঠে ধোঁয়া ওঠা চা বা কফি সহযোগে উপভোগ করা যাবে কাঞ্চনজঙ্ঘার বুক চিরে সূর্যোদয়।
[খয়েরবাড়িতে বিশ্বমানের লেপার্ড সাফারি, শুরু তোড়জোড়]
পর্যটন দপ্তরের উদ্যোগে ১০ টি কটেজ তৈরি করে দ্রুত পর্যটকদের থাকার বন্দোবস্ত করা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একান্ত ইচ্ছে ও উদ্যোগে টাইগার হিলকে পর্যটন সার্কিটে নিয়ে আসার কাজ শুরু হয়েছে বেশ কিছুদিন ধরে। জিটিএ ও পর্যটন দপ্তরের যৌথ উদ্যোগে এই প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এবার সেই কটেজগুলিকে গাছ ও ঘাস দিয়ে সাজিয়ে তুলতে কোটি টাকা বরাদ্দ করল বন দপ্তর। দপ্তরের পার্ক ও উদ্যান বিভাগের তরফে এই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিভাগীয় ডিএফও অঞ্জন গুহ। তিনি বলেন, ‘‘টাইগার হিল এ যাবৎকালের পর্যটন সার্কিটে সবচেয়ে বড় প্রকল্প। এর প্রাকৃতিক ও নৈসর্গিক সৌন্দর্য আলাদা মাত্রা এনে দেবে তাই কটেজগুলিকে প্রকৃতির ছোঁয়া দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে খুব বেশি গাছ বা জঙ্গল তৈরি করা হবে না৷ কারণ ওই এলাকায় শীতকালে তাপমাত্রা মাইনাসে চলে যায়। ফলে সব ধরনের গাছ সেখানে বাঁচানো যাবে না। সে দিকে লক্ষ্য রেখেই গাছ লাগানো হবে।’’
[পর্যটকদের জন্য সুখবর, জঙ্গলের রূপ তুলে ধরতে বর্ষায় ‘মনসুন টুরিজম’]
অর্কিড জাতীয় গাছ বেশি লাগানো হবে। তবে কিছু দেবদারু, ইউক্যালিপটাস জাতীয় গাছ লাগানো যায় কিনা সেটিও দেখা হচ্ছে। মূলত কটেজগুলির চারিদিকে সবুজায়নের পাশাপাশি প্রয়োজন অনুসারে বিভিন্নভাবে সাজানো হবে। ১০টি কটেজের পাশাপাশি বেশ কিছু তাঁবুও রাখা হচ্ছে। যাঁরা একটু বেশি অ্যাডভেঞ্চার প্রিয়, তাঁদের জন্য এই তাঁবুর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। জোরকদমে চলছে কাজ। আগামী মরশুম থেকেই টাইগার হিলে পর্যটক যাতে থাকতে পারে সে জন্য ঝড়ের গতিতে কাজ চলছে। তদারকির দায়িত্বে রয়েছেন পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব ও জিটিএ বোর্ডের চেয়ারম্যান বিনয় তামাং। বিনয় জানিয়েছেন, ‘‘টাইগার হিলের এই প্রেজেক্ট তৈরি হলে এলাকার আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট বদলে যাবে। পর্যটক যাতায়াত বাড়লে এলাকার হোটেল, রিসর্ট ও যানবাহন শিল্পে যেমন জোয়ার আসবে তেমনি স্থানীয় বাসিন্দারাও নিজস্ব উদ্যোগে স্বনির্ভর হতে পারবেন।’’
[ঝিরঝিরে বৃষ্টি উপভোগ করতে চান? বেড়াতে যাওয়ার সেরা ঠিকানা আপনার জন্য]
টাইগার হিল এলাকায় প্রাকৃতিক সম্পদ যাতে নষ্ট না হয় সেদিকে নজর রাখা হচ্ছে। নিজস্ব মূল বৈশিষ্ট্য বজায় রেখে অযথা কংক্রিটের জঙ্গলে পরিণত করা হবে না বলে জানানো হয়েছে। সীমিত সংখ্যার বাইরে কটেজ তৈরি করা হবে না বলেও পরিষ্কার জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। চাহিদা বেশি থাকলেও পর্যটকদের অপেক্ষা করতে হবে পরবর্তী বুকিংয়ের জন্য। টাইগার হিলের পর্যটন সমাগম নিয়ে আশাবাদী উত্তরের পর্যটন ব্যবসায়ীরা।
[পর্যটক টানতে এবার বেঙ্গল সাফারি পার্কে ‘শচীন-সৌরভ’ যুগলবন্দি]
অন্যতম পর্যটন বিশেষজ্ঞ সম্রাট সান্যাল বলেন, ‘‘এমনিতেই দার্জিলিং পাহাড়ের একটা আলাদা সৌন্দর্য রয়েছে। যারা ঘুরতে আসেন, ডুয়ার্সের পাশাপাশি দার্জিলিং, গ্যাংটক, নেপাল ও ভুটান ঘুরতে যান। কিন্তু টাইগার হিলে সীমিত সংখ্যক পর্যটক ছাড়া তেমন কেউ এতদিন যেতেন না। সরকারিভাবে সেখানে পর্যটন শুরু হলে এখানকার আদিম সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন পর্যটকরা।’’ অর্থনৈতিক উন্নতি তো হবেই ব্র্যান্ড দার্জিলিংকে আরও খানিকটা এগিয়ে দেবে ডেস্টিনেশন টাইগার হিল।
The post টাইগার হিলে এবার রাত্রিবাসের সুযোগ, চায়ের সঙ্গে কাঞ্চনজঙ্ঘা দর্শন appeared first on Sangbad Pratidin.