সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: সীমান্তে থাবা উঁচিয়ে ‘ড্রাগন’। গালওয়ান উপত্যকায় রক্ত ঝরিয়ে এবার ডোকলাম হয়ে শিলিগুড়ি করিডরে নজর দিয়েছে লালচিন। একইসঙ্গে, অন্য একটি ফ্রন্টেও কমিউনিস্ট দেশটির সঙ্গে লড়াই চলছে ভারতের। রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য পদের পথে নয়াদিল্লির সামনে প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়েছে বেজিং। একটি মাত্র ভেটোয় ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে মোদি সরকারের সমস্ত চেষ্টা। শুক্রবার সেই বিষয়ে বিরোধীদের প্রশ্নের মুখে সংসদে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করল কেন্দ্র।
দীর্ঘদিন ধরেই পাঁচ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী সদস্য পদ পেতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ভারত। ইতিমধ্যে আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও রাশিয়া নয়াদিল্লির দাবিকে সমর্থন জানিয়েছে। কিন্তু বাদ সেধেছে চিন (China)। এনিয়ে শুক্রবার লোকসভায় প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারের কাছে জবাব চান ডিএমকে সাংসদ পি ভেলুস্বামী। তিনি প্রশ্ন করেন, ভারতকে নিরাপত্তা পরিষদে অন্তর্ভুক্ত হতে না দেওয়াই কি চিনের নীতি? যদি তা না হয়, তাহলে নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী সদস্য পদ পেতে ভারত কি চিনের কাছে সমর্থন চাইছে? নিরাপত্তা পরিষদে সংস্কার আনতে ভারত কী কী পদক্ষেপ করেছে? স্থায়ী সদস্য পদ পেতে নিরাপত্তা পরিষদের সংবিধানে বদল আনতে ভারত কি বন্ধু রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে?
[আরও পড়ুন: বাড়ছে না আয়কর নথি জমা দেওয়ার সময়সীমা, ঘোষণা কেন্দ্রের]
উত্তরে বিদেশমন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী ভি মুরলীধরণ জানান, নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচের মধ্যে চার সদস্যই ভারতের স্থায়ী সদস্য পদের দাবিতে সম্মতি দিয়েছে। নিরাপত্তা পরিষদে সংস্কার আনতে লাগাতার চিনের সঙ্গে আলোচনা চালানো হচ্ছে। এই বিষয়ে ২০২১-এর ফেব্রুয়ারিতে চিনা বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র বলেছিলেন, “নিরাপত্তা পরিষদে সংস্কার চায় চিনও। তবে এটা এমনভাবে হতে হবে যাতে পরিষদের ক্ষমতা ও কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। নিরাপত্তা পরিষদে উন্নয়নশীল দেশগুলির প্রতিনিধিত্ব বাড়া উচিত। এমনটা হলে পরিষদের সিদ্ধান্তে তাদেরও স্বর মজবুত হবে।”
এদিন সংসদে মুরলীধরণ আরও জানান, নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী ও অস্থায়ী সদস্যপদ বৃদ্ধির জন্য জি-৪ (জাপান, ব্রাজিল, জার্মানি, ভারত) এবং লাতিন আমেরিকা, এশিয়া ও আফ্রিকার সমমনস্ক দেশগুলির সঙ্গে আলোচনা চলছে। রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ সভার নিয়মের আওতায় নিরাপত্তা পরিষদে সংস্কার আনতে আন্তঃসরকার আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছে ভারত। এ বিষয়টি ভারত সরকারের কাছে অত্যাধিক গুরুত্বপূর্ণ।
বিশ্লেষকদের মতে, ভারতকে কোনওভাবেই নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য গিসেবে দেখতে চাইছে না চিন। ফলে আলোচনা চালালেও ভোটাভুটি হলে নয়াদিল্লির বিরুদ্ধে ভেটো প্রয়োগ করবে বেজিং। ২০২১-এর আগস্টে এক মাসের জন্য রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের (UNSC) সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেছিল ভারত। ফ্রান্সের হাত থেকে ১ আগস্ট ভারত নিরাপত্তার পরিষদের সভাপতিত্বের দায়িত্ব গ্রহণ করে। তখন রাষ্ট্রসংঘে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি টি এস তিরুমূর্তি জানিয়েছিলেন, ভারত কখনই দায়িত্ব পালনে ভয় পায় না। বরাবারই সন্ত্রাসবাদ-সহ একাধিক ইস্যুতে সক্রিয় ভারত। প্রথম থেকেই দেশের প্রয়োজন অনুযায়ী আগ্রাধিকার বিষয়গুলিতে মনোনিবেশ করা হয়েছে।