সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কেউ বলেন, তিনিই নরেন্দ্র মোদির 'দ্বাররক্ষক'। আবার কেউ কেউ বলেন, "তিনি মোদির ছায়াসঙ্গী বটে, কিন্তু তাঁকে চোখে দেখা যায় না। অদৃশ্য!" শুধু তা-ই নয়, একধাপ এগিয়ে কারও কারও মত, মোদিকে 'আজকের মোদি' বানানোর নেপথ্যে তাঁর অবদানই সবচেয়ে বেশি। দীর্ঘদিনের সঙ্গী-আস্থাভাজন সেই হিরেন যোশীর কি ডানা ছেঁটে দিলেন প্রধানমন্ত্রী? এ নিয়ে জোর জল্পনা শুরু দিল্লির রাজনীতিতে।
নরেন্দ্র মোদি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় থেকেই তাঁর ছায়াসঙ্গী যোশী। ২০১৪ সালে মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরেও তার অন্যথা হয়নি। গুজরাট থেকে যোশীকে নিজের দপ্তর পিএমও-তে ডেকে নেন তিনি। পিএমও-তে যোশীই হন মোদির ওএসডি (অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি)। ওয়াকিবহাল মহলের দাবি, দীর্ঘদিন মোদির সঙ্গে থাকা সত্ত্বেও যোশীর সম্পর্কে কারও কাছে কোনও সঠিক তথ্য ছিল না। সঠিক ভাবে কেউই জানতে পারেননি, যোশীর দায়িত্ব ঠিক কী ছিল। কেউ বলতেন, তিনি মোদির 'মিডিয়া উপদেষ্টা'। আবার কেউ বলতেন, পিএমও-তে তথ্যপ্রযুক্তি সংক্রান্ত বিষয় দেখেন যোশী। কিন্তু কোনও দাবিরই আনুষ্ঠানিক সমর্থন মেলেনি মোদি সরকারের তরফে। প্রথমবার যোশীর ছবি প্রকাশ্যে আসে ২০২৩ সালে জি-২০ বৈঠকের সময়। সেই ছবিতে দেখা গিয়েছিল, মোদি, বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের পাশে বসে রয়েছেন মোদি।
কিন্তু কে এই হিরেন যোশী? দিল্লির রাজনীতির সঙ্গে যাঁরা ওতপ্রোতভাবে জড়িত, তাঁদের একাংশের মত, যোশীই হলেন মোদি সরকারের আসল 'ক্রাইসিস ম্যানেজার'। তাঁদের দাবি, ২০১৬ সালে যখন মোদির দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় এবং গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়, সেই সময় যোশীই ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনিই গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য এমএন প্যাটেলের সঙ্গে হোয়াট্সঅ্যাপে যোগাযোগ করেছিলেন। পরবর্তীকালে সে কথা 'স্বীকার'ও করেছিলেন প্যাটেল। জানান, মোদির শিক্ষাগত যোগ্যতার তথ্য যোশীকে হোয়াট্সঅ্যাপে পাঠিয়েছিলেন তিনি। এর পর ২০১৭ সালে আবার যোশীর নাম শোনা গিয়েছিল অটলবিহারী বাজপেয়ীর মন্ত্রিসভার সদস্য অরুণ শৌরির মুখে। তিনি বলেছিলেন, "পিএমও-তে মোদির যে টিম কাজ করে, তাকে নেতৃত্ব দেন হিরেন যোশী নামে একজন। ওঁর কাজ হল সমাজমাধ্যমে নজরদারি চালানো এবং জরুরি বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করা।" ঘটনাচক্রে, মোদির সঙ্গে অরুণ শৌরির 'মধুর' সম্পর্ক দিল্লির রাজনীতিতে কারও অজানা নয়।
বিজেপির অন্দরের অনেকের দাবি, সমাজমাধ্যমে বিজেপির ভাষ্য কী হবে, তা অমিত মালব্য ঠিক করেন না। তা ঠিক করেন যোশী। তিনিই 'মাস্টারমাইন্ড'! কেউ কেউ এ-ও দাবি করেন, টিভি চ্যানেলে বিজেপি বা কেন্দ্রীয় সরকার সম্পর্কিত বিভিন্ন খবরের হেডলাইনও যোশীই ঠিক করে দেন। শুধু তা-ই নয়, আন্তর্জাতিক মহলে মোদি 'বিশ্বগুরু' ভাবমূর্তি তৈরির নেপথ্যেও যোশী রয়েছেন। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের মোদির এই ভাবমূর্তিকে সামনে রেখে প্রচারে নেমেছিল বিজেপি। যদিও এই সব দাবিদাওয়ার আনুষ্ঠানিক সমর্থন মেলেনি কোনও পক্ষের তরফেই।
তবে দিল্লির রাজনীতিতে কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে, সম্প্রতি পিএমও-তে যোশীর প্রভাব কমেছে। এমনকি তাঁকে পিএমও থেকে ছেঁটে ফেলতেও চেয়েছেন মোদি নিজেই। ওয়াকিবহাল মহলের দাবি, অপারেশন সিঁদুরের পর আন্তর্জাতিক স্তরে মোদির ভাবমূর্তির প্রচার যে ভাবে হওয়া উচিত ছিল, তা হয়নি। তার উপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট যে ভাবে লাগাতার দাবি করে এসেছেন যে, তাঁর মধ্যস্থতাতেই ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি সম্ভব হয়েছে, সেই ভাষ্যেরও মোকাবিলা সঠিক ভাবে করা হয়নি। যার ফলে মোদির 'বিশ্বগুরু' ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাশাপাশিই, অনলাইন বেটিং-কাণ্ডেও পরোক্ষে যোশীর নাম জড়িয়ে পড়েছে। যা নিয়ে সংসদেও সরব হয়েছে কংগ্রেস। এই পরিস্থিতিতে যোশীকে পুরোপুরি ছেঁটে ফেললে বিরোধীদের দাবিতেই সিলমোহর পড়ে যাবে, এই যুক্তিতেই তাঁকে পুরোপুরি সরানো হয়নি বলে মনে করেন অনেকে।
ওয়াকিবহাল মহলেরই দাবি, যোশীকে পুরোপুরি সরানো না হলেও, সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে তিনি আর মোদির 'আস্থাভাজন' নন। বর্তমানে তাঁর জায়গা নিয়েছেন আর এক ওএসডি প্রতীক দোশী। ঘটনাচক্রে তিনি অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের জামাই।
