তারক চক্রবর্তী, শিলিগুড়ি: শিলিগুড়ির দেশবন্ধু পাড়ার চক্রবর্তী বাড়িতে সপ্তমীর সন্ধ্যা আরতি চলছে। বাড়ি ভর্তি লোকজন। ধূপের সুবাসে চারিদিকে এক মনোরম পরিবেশ। আচমকা সেখানে প্রবেশ করলেন প্রখ্যাত গোয়েন্দা ফেলুদা প্রদোষচন্দ্র মিত্র। সঙ্গে তাঁর প্রধান সহযোগী তপেশ রঞ্জন মিত্র ওরফে তোপসে। সকলের মধ্যে তীব্র উৎকণ্ঠা। তবে কী এবার চক্রবর্তী বাড়িতে কোনও রহস্যের সমাধান করতে তাঁদের আবির্ভাব? তাহলে কী মা দুর্গার বাহন জঙ্গলের রাজার মুখে কেউ মহামূল্যবান গণেশ মুর্তি লুকিয়ে রেখেছে? নাকি অন্য কোনও বড় ধরনের রহস্যের পর্দাফাঁস হতে চলেছে? ভুল ভাঙল চক্রবর্তী বাড়ির সদস্য দীপজ্যোতি চক্রবর্তীর আচরণে। দেখা গেল ফেলুদা এবং তোপসেকে আপ্যায়ন করছেন। আর করবেন না-ই বা কেন! পর্দার ফেলুদা ও তোপসের চরিত্রের অভিনেতা সব্যসাচী চক্রবর্তী ও শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় যে তাঁদের তারকা আমন্ত্রিত।
১২৩ বছরেরও বেশি পুরনো চক্রবর্তী বাড়ির পুজোতে প্রায় প্রতি বছরই হাজির হন সব্যসাচী চক্রবর্তী ও শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়। তাই শিলিগুড়ির চক্রবর্তী বাড়ির পুজোয় (Durga Puja 2023) তাঁদের উপস্থিতি এখন আর নতুন কিছু নয়। ফি বছর এভাবেই এই বাড়ির অন্দরমহলে পুজোর কটাদিন কাটান ফেলুদা ও তোপসে। এমনকি, সব্যসাচীবাবুর স্ত্রী অভিনেত্রী মিঠু চক্রবর্তীর নাচের তালে আরতি শেষ করার পর প্রতিমা নিরঞ্জন করা হয়।দীপজ্যোতিবাবু বলেন, “আমি শিলিগুড়িতে এই পুজো শুরু করার পর প্রায় প্রতি বছর বেণুদা ও অপু এসেছেন। তবে তাঁরা আগে থেকে জানিয়ে আসেন না। আমাকে না জানিয়ে চলে আসাই যেন ওঁদের রেওয়াজ।”
[আরও পড়ুন: ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে হিসাব বহির্ভূত বিপুল টাকার লেনদেন! গ্রেপ্তার কনস্টেবলের স্ত্রী]
বাংলাদেশের বিক্রমপুরের বাগোরা গ্রামে এই পুজোর সূচনা করেন দীপজ্যোতিবাবুর পূর্বপুরুষেরা। তাঁদের কয়েক বিঘা জমির উপর ৩০ ফুটের নাটমন্দিরে প্রায় ১৫০ বছর আগে এই পুজো শুরু হয়। পরিবারের দাবি, ওই এলাকাতে চক্রবর্তী পরিবার স্কুলের জমি থেকে শুরু করে বহু প্রতিষ্ঠানের জন্য জায়গা দান করে। বর্তমানে জরাজীর্ণভাবে পড়ে থাকলেও বাড়ি ও নাটমন্দির দখল করেননি স্থানীয়রা। তাঁদের পরিবারের ইতিহাস লিখেছেন এক বিশিষ্ট লেখক। সেখানে ১৯০০ সাল থেকে বিভিন্ন বিষয় লেখা রয়েছে। সেখানেও এই পুজোর কথা বর্ণিত রয়েছে।
জানা গিয়েছে, আশেপাশের গ্রামের অন্তত চার হাজার মানুষ চারদিন ধরে ওই পুজোয় অংশ নিতেন। চলত ব্যাপক খানাপিনা। মোষ বলির প্রথাও ছিল ওই পুজোতে। যথেষ্ঠ নিষ্ঠা মেনেই চলত পুজোর কাজ। তবে কালের নিয়মে ১৯০৪ সালে চক্রবর্তী পরিবারের সদস্যরা চলে আসেন কলকাতায়। আত্মীয় পরিজনেরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েন আলাদা আলাদা জায়গায়। এক এক জায়গায় বিভিন্ন শরিকরা পুজো চালিয়ে গেলেও ২০০৫ সালে পুজো বন্ধ হয়ে যায়। এরপর শিলিগুড়িতে বাড়ি করেন দীপজ্যোতিবাবু। ২০১৪ সাল থেকে ফের শিলিগুড়ির বাড়িতে শুরু হয় বাংলাদেশের চক্রবর্তী জমিদার বংশের সেই পুজো। বিগত ন’বছর ধরে এই পুজো শিলিগুড়িবাসীর কাছে আকর্ষণের কারণ হয়ে গিয়েছে।