দেব গোস্বামী, বোলপুর: হাটসেরান্দির পুজো এবারও কেষ্টহীন। গত বছরের পুজো হয়েছিল ‘কেষ্টদা’ ছাড়াই। অনেকেই আশা করেছিলেন, হয়তো তার আর পুনরাবৃত্তি হবে না। কিন্তু সেই আশায় জল ঢেলেছে আদালত। জামিন মঞ্জুর না হওয়ায়, এবারও হাটসেরান্দিতে পা পড়বে না গাঁয়ের কেষ্টর।
প্রথা মেনে এবারও পারিবারিক দুর্গাপুজা হবে। গ্রামের ১৮ পাড়ার পারিবারিক পুজো হলেও বেশ কয়েক বছর ধরে অনুব্রতর হাত ধরে পুজোর ভোল বদলে গিয়েছিল। এলাহি আয়োজন হত। সমস্ত গ্রামবাসীদের জন্য থাকত এলাহি খাওয়া-দাওয়া। ধুমধামের সেই চিত্র গতবছর থেকেই বদলে গিয়েছে।
গ্রামের চারিদিক নিস্তব্ধ। অনুব্রত মণ্ডলের হাতে তৈরি দুর্গা মন্দির ও শিব মন্দির সবই পড়ে রয়েছে। কেষ্ট অবশ্য গ্রামবাসীদের কাছে শাসকদল তৃণমূলের নেতা নন। তাঁদের গ্রামের ছেলে। তিনি হয়তো নিজেও ভাবতে পারেননি এভাবে টানা দু’বছর জেলে কাটাতে হবে। সম্প্রতি হাট-সেরান্দিগ্রামকে তিনি সাজিয়ে তুলেছিলেন। গ্রামবাসীদের কথায়, চারদিন ধরেই বসে বসে মণ্ডল বাড়ির পুজোর তদারকি করতেন গ্রামের কেষ্ট। চারদিন ধরে নেতা-মন্ত্রীদের নেতাদের আনাগোনা দেখে অভ্যস্ত গ্রামের মানুষ। জেলার হাজার-হাজার কর্মী, সমর্থকরা আসতেন। দেখা যেত, লাইন দিয়ে সারি সারি নতুন-নতুন গাড়ি। কিন্তু এবারেও অনুব্রত নেই। মণ্ডল বাড়ির পুজোর(Gramer Durga Puja) কি হবে? গতবারেও কোনও রকমে নমো নমো করে কাটিয়ে দিয়েছিলেন। এবার কী হবে?
[আরও পড়ুন: অতিবৃষ্টিতে বানভাসি একাধিক জেলা, মোকাবিলায় একগুচ্ছ নির্দেশিকা জারি মুখ্যমন্ত্রীর]
যদিও আয়োজন চলছে, মন্দির রয়েছে, প্রতিমা তৈরি হচ্ছে। তবে একেবারেই ম্লান তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের বাড়ির পুজো। আগের মতো আর জৌলুস নেই এ বছরও। বাড়ি আছে, লোকজন আছে, পরিবার পরিজনও আছে। কিন্তু তিনি নেই। ফলে সবকিছুর মধ্যেও অনুব্রতর অভাব ঘুরে বেড়াচ্ছে ঠাকুরদালান অলিন্দের চারপাশে। দুর্গাপুজোর এই আনন্দের মুহূর্তেও মণ্ডল বাড়ির অন্দরে সর্বক্ষণই যেন বিজয়ার সুর।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, অনুব্রত মণ্ডলের আদিবাড়ির নানুর ব্লকের বঙ্গছত্রে। অনুব্রত মণ্ডলের দাদু বাবা গৌরহরি মণ্ডল এসেছিলেন নানুরের হাট-সেরান্দিগ্রামে। তার পর থেকেই সেখানেই শুরু হয় তাঁদের বাস। দুর্গাপুজোরও বয়স কম করে সাড়ে তিনশো বছর। আর হাট-সেরান্দিতে ১৪২ বছর ধরে হয়ে আসছে পুজো। মণ্ডল পরিবারের আদিপুজো এটি। সারা বছরই পিতলের দুর্গামূর্তিতে চলে নিত্যপুজো। পুজোর কয়েক দিন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেই কাটাতেন কেষ্ট। একসঙ্গে খাওয়া দাওয়া করতেন। এখন সবই অতীত।
[আরও পড়ুন: ‘হয় নবীশ, নয়ত তদন্ত করতে চাইছেন না’, অভিষেক মামলায় ইডিকে তোপ হাই কোর্টের]
গত বছরও সদ্য জেলে যাওয়া অনুব্রত মণ্ডলের জন্য অপেক্ষায় ছিল গোটা গ্রাম। আশা ছিল দুর্গাপুজোয় তিনি গ্রামে আসবেন। কিন্তু আশাপূরণ হয়নি তাঁদের। এবারও আশাহত গ্রামের বাসিন্দারা। পরপর দু’বছর নিজের বাড়ির পুজোয় থাকতে পারবেন না অনুব্রত। পুজো জেলেই কাটাতে হবে কেষ্টকন্যা সুকন্যাকেও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গ্রামবাসীরা বলছেন, “গতবছর কেষ্টদা না থাকায় আশা করেছিলাম এবছর হয়তো উনি থাকতে পারবেন। তাও হবে বলে মনে হচ্ছে না।” নিয়মমাফিক পুজোর আয়োজন হলেও মনমরা মণ্ডল পরিবার।