ভাল-মন্দের বছর। কিছু আনন্দ, কিছু বিষাদের। দিন বদলাচ্ছে। ইদানীং ঘটনার উত্থানপতনের সুর বেধে দেয় ভারচুয়াল পৃথিবী, বিশেষত সোশ্যাল মিডিয়া। চলতি বছরে সেই জগতের ‘রাজা’ধনকুবের এলন মাস্ক। ২০২২-এ টুইটার কিনেছেন। অন্যদিকে বিপুল জনপ্রিয় হওয়ার পরেও নানা অজুহাতে গণছাঁটাই চালিয়েছে ফেসবুক-হোয়াটসঅ্যাপ-ইনস্টাগ্রাম মালিকানা সংস্থা মেটা। এদিকে ফের ভারতে নিষিদ্ধ হয়েছে বহু ইউটিউব চ্যানেল। আচমকা দীর্ঘ সময় বিকল হোয়াটসঅ্যাপ! সব মিলিয়ে ঘটনার ঘনঘটা বছরভর। কেমন ছিল ভারচুয়াল হালচাল? ফিরে দেখল সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল।
টুইটার ও মাস্ক ‘রাজা’র কাণ্ড:
চলতি বছরের শুরুতেই কানাঘুষো ছিল টুইটার (Twitter) কিনতে চলেছেন বিশ্বসেরা ধনী এলন মাস্ক (Elon Musk)। প্রথমবার এপ্রিল মাসে জানা যায়, টুইটার কিনে ফেলেছেন। যদিও এরপর মালিকানা সংক্রান্ত নানা টালবাহানা চলতে থাকে। মামলা গড়ায় আদালতে। শেষ পর্যন্ত অক্টোবরে টুইটারের মালিকানা পান। মোট ৪৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের চুক্তি সম্পূর্ণ করতে বেশ কাঠখড় পোড়াতে হয় মাস্ককে। জানা যায়, এই বিপুল অঙ্কের লেনদেন করার জন্য তাঁকে বড় অঙ্কের ঋণ নিতে হয়। এর জেরে টুইটার থেকে ব্যাপক হারে কর্মী ছাঁটাই করতে পারেন বলে আশঙ্কা করেছিলেন অনেকে। বাস্তবেও তাই হয়। সংস্থার মালিকানা পেয়েই ছেঁটে ফেলেন টুইটারের ভারতীয় বংশোদ্ভূত সিইও পরাগ আগরওয়ালকে।
মাস্ক টুইটার কেনার পর শুরু হয় আরেকপ্রস্থ বিতর্ক। জানা যায়, শেষ হচ্ছে টুইটারে বিনামূল্যে ব্লু টিক অ্যাকাউন্ট ব্যবহারের দিন! এবার থেকে ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্ট ব্যবহারের জন্য খসবে পকেটের কড়ি। এদিকে ক্ষমতা পেয়েই মাস্ক যেমন ছাঁটাই করেন সংস্থার বহু কর্তাকে, তেমনই কোম্পানির নয়া নীতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে না পেরে টুইটারের বেশ কয়েকজন কর্তা নিজে থেকেই ইস্তফা দেন। অন্যদিকে ভারতে কর্মী ছাঁটাই শুরু করে মাইক্রোব্লগিং সাইটটি। মাস্কের দাবি, টুইটারকে সঠিক পথে নিয়ে যেতে বিশ্বব্যাপী সংস্থার বহু কর্মীকে ছাঁটাই জরুরি ছিল। ‘দুর্ভাগ্যজনক’ হলেও এই সিদ্ধান্ত তাঁদের নিতে হচ্ছে, জানান মাস্ক। টুইটারের বিশ্বজুড়ে কর্মী সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৭ হাজার। যা অর্ধেক করে ফেলা হয় এক ধাক্কায়। পরে বিপুল সংখ্যক চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের ছাঁটাই করা হয়। এবং মাস্ক মহাশয়ের সর্বশেষ বিস্ফোরক সংবাদ হল টুইটারের সিইও পদ ছাড়তে পারেন তিনি। কেন?
আসলে সম্প্রতি টুইটার ইউজারদের কাছে প্রশ্ন রেখেছিলেন মাস্ক- ‘আমার কি টুইটার ছেড়ে দেওয়া উচিত?’ এই ভোটে ডাহা ফেল করেছেন তিনি। দেখা যায় তাঁকে সিইও হিসেবে দেখতে চান না ৫৭.৫ শতাংশ টুইটার ইউজার। এই খারাপ ফলের পর থেকেই মাস্কের টুইটার ছাড়ার জল্পনা জোড়ালো হচ্ছে। দাবি করা হচ্ছে, ভোটে হারার পর থেকে নাকি নতুন সিইওর খোঁজ শুরু করেছেন মাস্ক। টুইট করে জানিয়েওছেন, ঠিক কখন প্ল্যাটফর্মের সিইও পদ ছাড়বেন তিনি। লেখেন, “টুইটারের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য আমার মতো একজন বোকা ব্যক্তি খুঁজে পেলে সিইও পদ থেকে ইস্তফা দেব। তারপর আমি শুধু সফটওয়্য়ার আর সার্ভার টিমের দেখভাল করব।” সত্যিই কি এমন কোনও পদক্ষেপ করতে চলেছেন? উত্তর দেবে নতুন বছর।
নির্মম গণছাটাই ফেসবুক-ইনস্টাগ্রাম-হোয়াটসঅ্যাপের:
চলতি বছরে টুইটারের মতো ঘন ঘন খবরে আসেনি ফেসবুক-ইনস্টাগ্রাম-হোয়াটসঅ্যাপ (Facebook-Instagram-Whatsapp)। এমনিতে যুগের প্রয়োজনে তিন সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম আপডেট হয়েছে। উন্নত হয়েছে প্রযুক্তি, অ্যাপে পরিবর্তন এসেছে। এই অবধি। তবে বছর শেষে ফেসবুক-হোয়াটসঅ্যাপ-ইনস্টাগ্রামেের মালিকানাধীন সংস্থা মেটা (Meta) খবরে আসে গণছাঁটাইয়ের কারণে। নভেম্বরে একসঙ্গে ১১ হাজার কর্মী ছাঁটাই করে তারা। উন্নতির জন্যই ঐতিহাসিক কর্মী ছাঁটাইয়ের পদক্ষেপ, জানানো হয় সংস্থার তরফে। বিশ্বজুড়ে গণছাঁটাইয়ের পর দুঃখ প্রকাশ করেন মার্ক জুকারবার্গ (Nark Zuckerberg)। ২৮ বছরের মেটার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ছাঁটাইয়ের সাক্ষী হয় সিলিকন ভ্যালির এই সংস্থা।
নিষিদ্ধ ভারত বিরোধী ইউটিউব চ্যানেল:
জাতীয় নিরাপত্তা, বৈদেশিক সম্পর্ক ও দেশের আইনশৃঙ্খলা সম্পর্কে ভুয়ো তথ্য প্রচার করা হচ্ছে। এমনই অভিযোগে চলতি বছরে একাধিক ইউটিউব চ্যানেলকে (Youtube Channel) নিষিদ্ধ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এর মধ্যে শুধু জানুয়ারিতেই ৩৫টি পাক ইউটিউব চ্যানেলকে ভারতে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। এপ্রিল মাসে ৩৮টি ইউটিউব চ্যানেলকে ব্যান করে তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রক। আগস্ট মাসে পাকিস্তানি চ্যানেল-সহ ৮টি ইউটিউব চ্যানেলকে নিষিদ্ধ করা হয়।
আচমকা বিকল হোয়াটঅ্যাপ:
২০২১ সালের পর ২০২২-এও আচমকা হোয়াটসঅ্যাপ বিকল হওয়ার ঘটনা ঘটেছিল। ২৭ অক্টোবরে প্রায় দু’ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বন্ধ ছিল জনপ্রিয় মেসেজিং অ্যাপটি। শোরগোল পড়ে গিয়েছিল এই ঘটনায়। এমন বিভ্রাটের কারণ কী, সংস্থার তরফে স্পষ্টভাবে কিছু জানানো না হলেও এই নিয়ে মুখ খোলে মেটার এক মুখপাত্র। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেই মুখপাত্রের দাবি, বড় ধরনের প্রযুক্তিগত ত্রুটি হয়েছিল। তা হয়েছিল তাদের তরফেই। উল্লেখ্য, এর আগে ৪ অক্টোবর, ২০২১ সালে সবচেয়ে বেশি সময় প্রায় ৬ ঘণ্টা বন্ধ ছিল হোয়োটাসঅ্যাপ।