WHO এবং UNICEF অনুযায়ী, মায়েদের সদ্যোজাতকে ৬ মাস স্তন্যপান করানো উচিত। স্তন্যপান করানোর জন্য ৬টি 'গোল্ডেন রুল' মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়। যেগুলি মেনে চললে মায়েদের এক্সক্লুসিভ ব্রেস্ট ফিডিং করাতে কোনও সমস্যা হবে না এবং শিশুও সুস্থ থাকবে। বিস্তারিত জানাচ্ছেন ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথের পেডিয়াট্রিশিয়ান ডা. অগ্নিমিতা গিরি।
যেগুলো মনে রাখা জরুরি
সদ্যোজাত শিশুকে জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে স্তন্যপান করাতে হবে।
শিশুকে তার ৬ মাস বয়স পর্যন্ত টানা স্তন্যপান করাতে হবে।
এই সময় অন্য কোনও পানীয় বা খাদ্য দেওয়া যাবে না। মুখে মধু দেওয়া, পানীয় জল খাওয়ানো, গরুর দুধ দেওয়া ইত্যাদি সব কিছু থেকে বিরত থাকতে হবে।
ছবি: সংগৃহীত
কিন্তু এর সঙ্গে মনে রাখতে হবে শিশুকে ভিটামিন D3 ড্রপস প্রতিদিন দিতে হবে। শিশুর যদি কোনও ওষুধ অথবা ORS এর প্রয়োজন হয় সেটাও দিতে হবে।
শিশু যখন খেতে চাইবে দিনে এবং রাতে তখনই শিশুকে মায়ের দুধ দিতে হবে।
শিশুর ৬ মাস বয়স পূর্ণ হলে পরিপূরক উইনিং ডায়েট শুরু করা যাবে, কিন্তু মায়ের স্তন্যপান চলতে থাকবে শিশুর ২ বছর বয়স পর্যন্ত অথবা তার পরও।
শিশুর জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে অনেকেই শিশুর মুখে মধু দেন, এসব না করে স্তন্যপান শুরু করা প্রয়োজন, জন্মের পর প্রথম কয়েক ঘণ্টা সদ্যজাত শিশুরা সজাগ ও সক্রিয় থাকে। তাই এক ঘণ্টার মধ্যে স্তন্যপান করালে শিশুর সক্রিয়তা সম্পর্কে সজাগ হওয়া যায়।
[আরও পড়ুন: স্বাধীনতা দিবসে দেশপ্রেমের অনুভূতিতে সাজিয়ে তুলুন গেরস্থালি, রইল টিপস]
প্রথম ছমাস কেন শিশুকে পানীয় জল দেওয়া যায় না?
প্রথমত, শিশুর পুষ্টির প্রয়োজন বেশি, কিন্তু তাদের পাকস্থলী ছোট। যদি জল পান করানো হয় সেক্ষেত্রে শিশুর পেট ভরে যাবে, আর দুধ পান করবে না। এর ফলে শিশুর পুষ্টির ঘাটতি হতে পারে। তাই অযথা অতিরিক্ত পানীয় শিশুকে দেওয়া হয় না।
দ্বিতীয়ত, মায়ের দুধে ল্যাক্টোজ, ফ্যাট, প্রোটিন ছাড়াও ৮৭% জল থাকে। যেহেতু মায়ের দুধে পর্যাপ্ত পরিমাণে জল থাকে, তাই আলাদা করে অতিরিক্ত জলের আর প্রয়োজন পড়ে না।
ছবি: সংগৃহীত
কলোস্ট্রামের বিকল্প নেই
শিশুর জন্ম দেওয়ার পর থেকেই মায়ের স্তন থেকে কলোস্ট্রাম বের হয় যার পরিমাণ খুব অল্প। সেই সময় শিশুর খিদে মেটাতে কি বাইরের দুধ দেওয়া যেতে পারে? প্রসঙ্গত, শিশুর জন্মের পর ক্ষুধার্ত থাকে তাই সে মায়ের দুধ জোরে জোরে টানে। এই ভিগোরাস সাকিং এর ফলে, মায়ের মস্তিষ্ক থেকে অক্সিটোসিন হরমোন নিঃসৃত হয় এবং ‘মিল্ক লেট ডাউন রিফ্লেক্স’-এর মাধ্যমে ব্রেস্টফিডিং শুরু হয়। কিন্তু যদি বাইরের দুধ দেওয়া হয়, তাহলে শিশু ভিগোরাস সাকিং করবে না এবং ব্রেস্টফিডিং চালু করা কঠিন হতে পারে। এছাড়া শিশু খিদের জন্য বারবার মায়ের স্তন সাক করে সারাদিন রাত। এই মাল্টিপল টাইম সাকিং-এর ফলে টানা বা নিয়মিত ব্রেস্ট ফিডিং পদ্ধতি শুরু হয়। যা বাইরের কোনও পানীয় অথবা দুধ দিলে এই অভ্যাস গড়ে তোলা কঠিন।
তাই শুরুতে প্রসবের পর যে অল্প অল্প পরিমাণে মায়ের স্তন থেকে কলোস্ট্রাম বের হয় সেটাই ধীরে ধীরে পরিমাণে বৃদ্ধি পায় এবং পরিণত মিল্কে পরিবর্তিত হয়। কলোস্ট্রামের অনেক উপকারিতা আছে। প্রসবের পর মায়ের স্তন থেকে যে হলদেটে আঠালো নিঃসরণ (secretion) হয় সেটাই হলো কলোস্ট্রাম যেখানে হাই প্রোটিন, লো ফ্যাট ও সুগার থাকে। কিন্তু কলোস্ট্রামে হোয়াইট ব্লাড সেলস প্রচুর পরিমাণে থাকার কারণে প্রচুর অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। এই অ্যান্টিবডিগুলো শিশুর ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে এবং সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। কলোস্ট্রাম খুব গাঢ় হয় ও পুষ্টিকর তাই স্বল্প মাত্রায়ও শিশুর জন্য উপকারী।
ছবি: সংগৃহীত
কলোস্ট্রামের মধ্যে কী থাকে?
ইমিউনোগ্লোবিউলিন A (এক ধরনের অ্যান্টিবডি), ল্যাকটিফেরিন (একজাতীয় প্রোটিন যা সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে এবং আয়রন শোষণে সাহায্য করে), লিউকোসাইটস (হোয়াইট ব্লাড সেলস), এপিডার্মাল গ্রোথ ফ্যাক্টর (একটি প্রোটিন যা কোষের বৃদ্ধি উদ্দীপিত করে)। তাহলে বোঝাই যাচ্ছে এর উপকারিতা!