রান্নায় স্বাদ আনতে সবজি ভেজে, তেল-মশলা দিয়ে কষিয়ে রাঁধা হয়। এতে খেতে ভালো হলেও উপকারী নয়। কারণ টাটকা সবজি মহাষৌধি গুণে সমৃদ্ধ। খাবার পাতে সিদ্ধ খেলে একগুচ্ছ রোগ প্রতিরোধ সম্ভব। রোজ পাতে শুরুতে থাকুক সবজি সিদ্ধ। কোন কোন সবজিতে কী আছে বললেন ডায়েটিশিয়ান পল্লবী চট্টোপাধ্যায়

সেই প্রাচীনকাল থেকে একটা বিশ্বাস রয়েছে, তা হল খাদ্যতেই রয়েছে ওষুধের গুণ। তাই দিদা-ঠাকুমারা দুপুরের পাতে শুরুতেই তেতো খাওয়ার অভ্যাস রপ্ত করিয়েছেন। তেমনই একটি পথ্য হল পাতের শুরুতে একটা সেদ্ধ খাওয়া। সেটা যে কোনও সবজি হতে পারে। আমেরিকান জার্নাল অফ ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশন- জার্নালে অনেক আগেই প্রকাশিত হয়ে সেদ্ধ সবজি ওষুধের মতো কার্যকর। এতে রয়েছে একাধিক গুণাগুণ যা নিত্য পথ্য হিসেবে গ্রহণ করলে সর্বোপরিভাবে সুস্থ থাকা সম্ভব। একটা সোজা কথা হল, দিনের শুরুতেই প্রধান ভোজে যদি উপকারী উপাদানের অনেকটাই শরীরে যায় তবে সারাদিনের টক্সিনের প্রবেশ কম হয়। আর সেই গুণ রয়েছে বেশ কিছু সবজিতে। তাই রোজ লাঞ্চের শুরুতে থাকুক সেদ্ধ।
নানা দিক থেকে সুফল মেলে
পুষ্টি বজায় থাকে- সেদ্ধ খাবারে ভিটামিন, মিনারেল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সংরক্ষিত থাকে, তাই খেলে মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট ডেফিসিয়েন্সি হয় না, ইমিউনিটিও বাড়ে। ফ্রি-রাডিক্যালস থেকে শরীরকে মুক্ত রাখে। ফলে বড় রোগ শরীরে বাসা বাঁধতে পারে না।
ওজন কমাতে ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে- সাধারণত সেদ্ধ সবজি খেলে শরীরে তেল-মশলা একেবারেই যায় না, ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে ও ডায়াবেটিক রোগীদের পুষ্টিগুণ বজায় থাকে।
অ্যাসিডিটি কমে- যেহেতু সেদ্ধ খাবার সহজপাচ্য তাই এই খাবার হজম করতে শরীরের অ্যাসিড তৈরির প্রয়োজন পড়ে না। তাই অ্যাসিডিটির সমস্যা থেকে পেটে ব্যথা নিরাময়ে অত্যন্ত কার্যকর সেদ্ধ খাবার।
পেট জ্বালা কমায়- পেটে প্রদাহের কারণে অনেক সময়ই পেট জ্বালার সমস্যা দেখা দেয়। সেদ্ধ করে খেলে নানা ব্যাকিটিরিয়া প্রবেশের সম্ভাবনা কমে।
সেদ্ধ খাবার ত্বকের ড্যামেজ প্রতিহত করে উজ্জ্বলতা ধরে রাখে।
ত্বকের জন্য ভালো- অতিরিক্ত তেল-মশলাদার খাবারে ত্বকের ভীষণ ক্ষতি হয়। সেই জায়গায় সেদ্ধ খাবার ত্বকের ড্যামেজ প্রতিহত করে উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে কার্যকর। এতে জলের পরিমাণ বেশি থাকে, যা ত্বকের সমস্যা মেটায়। বিশেষত, গাজর, পালংশাক, টম্যাটো, বিট, মিষ্টি আলুতে এই উপকারিতা রয়েছে।
কিডনি স্টোন প্রতিরোধে- যাঁদের কিডনি স্টোন রয়েছে তাঁদের সেদ্ধ খাবার খুবই উপকারী। কারণ খাবার সেদ্ধ করলে খাবার থেকে অক্সালেট বেরিয়ে যায়। এই উপাদানই শরীরে গিয়ে স্টোন তৈরি হলে সাহায্য করে। তাই সেদ্ধ খেলে স্টোনের ঝুঁকি অনেক কমে।
কীসে কী উপকার?
কুমড়ো- এতে রয়েছে ভিটামিন এ, সি, বি-টু, ই, কে, আয়রন ইত্যাদি। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে কুমড়ো।
সেদ্ধ পটল- পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফ্ল্যাভোনয়েড প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। যা ত্বক ভালো রাখে ও হজমক্ষমতা বাড়ায়। পাচনতন্ত্র ও অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
উচ্ছে- নিয়মিত উচ্ছে সিদ্ধ খেলে রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে, শিশুদের কৃমির সমস্যা প্রতিহত করা যায়। সিদ্ধ উচ্ছে ভাজা উচ্ছের চেয়ে শতগুণে উপকারী। লিভার, ত্বক ভালো রাখতে কার্যকর।
পেঁপে- এতে পাপাইন নামক এনজাইম আছে, যা হজমে সাহায্য করে। কোষ্ঠকাঠিন্য, গ্যাসের সমস্যা দূর করে। পেটের জন্য খুবই ভালো। অ্যাসিডিটি কমায়, আইবিএস ও আইবিডি- এর মতো সমস্যা প্রতিহত করে। এতে ভিটামিন সি রয়েছে যা ভাইরাল সংক্রমণ প্রতিহত করতে সাহায্য করে।
রাঙাআলু- ফাইবার, ক্যালশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়ামে ভরপুর। হাড়ের জন্য ভালো, হার্ট ও চোখ ভালো রাখে। গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম, সুগার রোগীরাও খেতে পারেন।
পালং শাক- এতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, ফলিক অ্যাসিড, ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, জিঙ্ক রয়েছে। সিদ্ধ করে খেলে এই উপাদানগুলি সরাসরি শরীরে পৌঁছয়। পালং শাকে অক্সালেট থাকে যা সিদ্ধ করলে কমে যায় এর ফলে আয়রন ও ক্যালশিয়াম আরও সহজলভ্য হয়। অস্টিওস্পোরোসিস, আর্থ্রাইটিস ও ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়।
টাটকা সবজি মহাষৌধি গুণে সমৃদ্ধ।
ঢ্যাঁড়শ- এতে রয়েছে প্রচুর পলিফেনল, যা রক্ত জমাট বাঁধতে দেয় না। যার ফলে স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমে। প্রচুর ফাইবার, ম্যাগনেশিয়াম আছে।
গাজর- এতে বিটাক্যারোটিন আছে। যা শরীরে গিয়ে ভিটামিন এ-তে রূপান্তরিত হয় ও তা থেকে ক্যানসারের ঝুঁকি কমে, দৃষ্টিশক্তি বাড়ে।
বিটরুট- এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, বি৬, সি, কে এবং আয়রন। লিভার ভালো রাখতে এই মতো ভালো কিছু হবে না।
শিম- ভিটামিন, মিনারেল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ায় কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, খারাপ কোলেস্টেরল কমায় ও কোলন ক্যানসার প্রতিরোধ করে।
তাই খাবার পাতের শুরুতে রোজ একটা করে সেদ্ধ সবজি রাখুন, যা ওষুধের মতো কার্যকর হতে পারে সকলের জন্য।