পুজো (Durga Puja 2024) বা অনুষ্ঠানের আগে সাজগোজের তাগিদ বাড়ে। কিন্তু সাজগোজের সমস্ত সামগ্রী কি আপনার ত্বকের জন্য ভালো? শুধু ট্রেন্ডে গা ভাসালেই তো হল না, বুঝতে হবে এসব রূপচর্চার জিনিস বিজ্ঞানসম্মতভাবে তৈরি কি না। দীর্ঘ ব্যবহারে ক্ষতি করবে না তো? সাবধান করলেন ডার্মাটোলজিস্ট ডা. কৌশিক লাহিড়ী।
ঘটনা: ১
সমস্যাটা হল মহালয়ার দিনই। সীমন্তী রীতিমতো হাত-পা ছড়িয়ে কাঁদতে বসার অবস্থা। ফেসিয়াল নাকি না করলেই নয়। মুখে নাকি জেল্লা দেবে! তাই গেল সীমন্তী, বউদির চেনা পার্লারে। আর সেই যাওয়াই হল কাল। জেল্লা না ছাই। সারা মুখ শুকিয়ে খরখরে। দুই গালে দানা দানা, লাল ফুসকুড়ি, অসহ্য চুলকানি ও জ্বালা। সে এক জঘন্য অবস্থা।
ঘটনা: ২
পলিতকেশ সঙ্কর্ষণ সমাদ্দারের একটাই শৌখিনতা। সুগন্ধী বা পারফিউম। নানা সৌরভে আবৃত থাকতে পছন্দ করেন ভদ্রলোক। বয়স পঁয়তাল্লিশের ওপারে। বহুরকম দেশি-বিদেশি পারফিউম ওঁর সংগ্রহে। শখটা আর শখ নেই, নেশা হয়ে গিয়েছে। হঠাৎই একদিন দেখেন গালের বাঁদিকে লাল লাল ছোট ছোট দানা। প্রথমে একেবারেই পাত্তা দেননি। একটু চুলকানিও ছিল। ভাবলেন পোকা, টোকা। কিন্তু না, যখন ফোস্কা দেখা দিল জায়গাটা বেশ আতঙ্কিত হলেন।
ঘটনা: ৩
অলিভিয়া মাঝে মাঝেই ওয়াক্সিং করায়। ওয়াক্সিং করানোর পর থেকে দু’হাত জুড়ে দানা দানা কী সব বেরিয়ে গেল। মিসেস সান্যাল হেয়ার ডাই করেন, এখন মাসে দুই-একবার করতেই হয়। হঠাৎই দেখেন সারা মাথা জুড়ে ফুসকুড়ি, রস কাটছে। চুলকানি। কপাল, কানের চারপাশে লাল র্যাশ, চোখ ফুলে ঢোল।
এগুলো কিন্তু কোনও গল্প কথা নয়। সত্যিই এমন ভয়াবহ পরিণতি ঘটে নানাবিধ রূপচর্চায়। এঁদের প্রত্যেকের ভিন্ন সমস্যা, তবে সবই ত্বকজনিত সমস্যা। যেমন, সীমন্তীর আর মিসেস সান্যালের হয়েছিল ইরিট্যান্ট কন্ট্যাক্ট ডার্মাটাইটিস, সমাদ্দার সাহেবের অ্যালার্জিক কন্ট্যাক্ট ডার্মাটাইটিস আর অলিভিয়ার ফলিকুলাইটিস। হ্যাঁ, শুধু নামগুলিই নয়, অসুখগুলিও ভারি বিশ্রী। তবে এ অসুখগুলি কিন্তু এমনি এমনি হয় না। রীতিমতো খাল কেটে কুমির ডেকে আনা।
কন্ট্যাক্ট ডার্মাটাইটিস:
নামেই মালুম, এই প্রদাহমূলক ত্বকের সমস্যা কোনও বিপত্তিকর পদার্থের সংস্পর্শে হয়। এর আবার কিছু রকমভেদ আছে। যেমন -
ইরিট্যান্ট: মানে ত্বককে বিরক্ত করে, এমন কিছু তীব্র অম্ল বা ক্ষার বা উদ্বায়ী বাহক থেকে হতে পারে এই সমস্যা। নানারকমের ফেসিয়াল, হেয়ার ডাই, লিপস্টিক, সাবান, আফটার শেভ লোশন থেকে দেখা দিতে পারে এই আপদ।
অ্যালার্জিক: সবার নয়, কারও কারও হয়। প্রসাধনীর কোনও না কোনও উপাদান থেকে অ্যালার্জি। সুগন্ধি থেকেও হতে পারে।
ফোটো কন্ট্যাক্ট: প্রসাধনী তো আছেই, সঙ্গে এসে তাল মেলায় রোদ। অলক্ষে ঘটে যায় কিছু ইমিউনোলজিক্যাল ক্রিয়া-বিক্রিয়া। দেখা যায় ফোটো ইরিট্যান্ট বা ফোটো অ্যালার্জিক ডার্মাটাইটিস। অনেকটা দেখতে সানবার্নের মতোই। এছাড়াও ফোটোটক্সিক প্রতিক্রিয়া। অথবা প্রসাধনীর সংস্পর্শে হওয়া বিশেষ ধরনের আমবাত বা কন্ট্যাক্ট আর্টিকেরিয়া।
এছাড়াও নানারকম বিজ্ঞাপনী চমকে মজে অনেকেই প্রসাধনী থেকে নানা রকম ঘরোয়া টোটকায় বিশ্বাস রাখতে শুরু করেন, এগুলি বৈজ্ঞানিক ভিত্তি না জেনে করলে তার ফলও ভালো হয় না। তাই খুব বুঝে ব্যবহার করতে হবে।
Skincare products
সুরাহা
রূপচর্চার বিপদগুলি জানা হল কিছু কিছু। এবার দেখা যাক এগুলি প্রতিরোধ করা কীভাবে যায়। তথ্য কথা সত্য কথা কোনও প্রসাধনী কেনার সময় তার লেবেলটি ভাল করে পড়ে ফেলুন। জানুন, কী আছে উপাদানগুলি।
ভালো হয়, কোন উপাদানে আপনার অ্যালার্জি, সেটা জানা থাকলে। পড়ে নিন ব্যবহারবিধি। যে-কোনও প্রসাধন দ্রব্য কেনার পর সরাসরি মুখে লাগাবেন না। হাতে কনুইয়ের সামনে অথবা কানের পেছনে লাগিয়ে অন্তত ১২ থেকে ২৪ ঘণ্টা দেখুন কোনও অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া হচ্ছে কি না।
কোনও ঘা বা প্রদাহের ওপর প্রসাধনী নয়।
তৈলাক্ত ত্বকে তেল ভিত্তিক প্রসাধনী নয়। সরাসরি ত্বকে সুগন্ধি স্প্রে করবেন না। ভিটামিন ‘এ’ বা ‘ই’ মেশানো ক্রিম আলাদা করে বিশেষ উপকারী নয়। কারণ, ত্বকের ভেতর দিয়ে আদৌ শরীরের ভেতর এগুলো প্রবেশ করে না। কোনও ক্রিম মেখে ফর্সা হওয়া যায় না, অহেতুক প্রতিশ্রুতি।
মুখে শক্তিশালী স্টেরয়েড (যেমন বেটনোভেট) কখনওই না জেনে, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া, লাগাবেন না। চোখে, বিশেষত বাচ্চাদের, কাজল বা সুরমা দেবেন না। ক্ষতি হয়।
তবে, গ্ল্যামার, রূপচর্চা, ত্বকচর্চা আসলে গৌন ব্যাপার। শ্রেষ্ঠ প্রসাধন কিন্তু সুস্থতা, সুশিক্ষা, সুরুচি আর সুমেধার এক সুষ্ঠু সমন্বয়। এ প্রসাধন বহিরঙ্গে নয়, অন্তরঙ্গে। এতে বিপদ কম। চেষ্টা করুন না, বরং সেই প্রসাধনে প্রসাধিত হতে।