পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। কিন্তু রোগ প্রতিরোধে ট্যাবলেটের চেয়ে অনেক ভালো কাজ করে। আবহাওয়া পরিবর্তনের জ্বর-সর্দি-কাশিতে ভেষজ কিছু পথ্যে পূর্ণ ভরসা রাখতে পারেন। কীভাবে খাবেন, কতটা খাবেন তা জানালেন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক অচিন্ত্য মিত্র।
এই সময়টা ঋতুপরিবর্তনের প্রভাবে জ্বর-সর্দির পাশাপাশি নানা প্রকার ভাইরাস ব্যাকটিরিয়াল অসুখের ঝুঁকি বাড়ে। রোদ-জল-বৃষ্টিতে কারও জ্বর, কারও দীর্ঘ কাশি, কেউ আবার সর্দিতে জর্জরিত। তবে এতে বিচলিত না হয়ে বা সঙ্গে সঙ্গে অ্যান্টিবায়োটিক না খেয়ে নিজের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রাকৃতিক উপায়ে ঠিক রাখা দরকার। তার জন্য ভেষজ পদ্ধতিতে ভরসা করতে পারেন। এগুলি সহজলভ্য ও অত্যন্ত কার্যকর। এই সময়ে যে ভাইরাসের আক্রমণগুলি হয় সেগুলিকে স্তিমিত করতে জুড়ি নেই এগুলির। উলটে কথায় কথায় ওষুধ খেলে নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে, এই সব ভয়ও নেই ভেষজ পথ্যে। অবশ্যই সমস্যার প্রাথমিক অবস্থায় এইগুলি কার্যকর। তারপর না কমলে তখন অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন। তবে প্রথমেই মুঠো মুঠো ওষুধ না খাওয়াই ভাল।
কী করবেন, কী করবেন না
প্রথমেই অ্যান্টিবায়োটিক খাবেন না। এখানে অ্যাটিবায়োটিকের তেমন কোনও ভূমিকা নেই। পরবর্তীকালে যদি সমস্যাগুলো দীর্ঘতর হয় তবে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে ।
ঠান্ডা গরমের তারতম্যের জন্যই ভাইরাসের এত বাড়বাড়ন্ত। তাই বাড়িতে, অফিসে, গাড়িতে এয়ারকন্ডিশনার সঠিক ব্যবহার করতে হবে।
প্রতিদিন যোগাসন, হালকা ব্যায়াম, প্রাণায়াম করলে রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
ঘরোয়া উপায়
উপসর্গ অনুসারে চিকিৎসা করতে হবে। এক্ষেত্রে ঘরোয়া চিকিৎসার মাধ্যমে নিরাময় সম্ভব। অযথা কেমিক্যাল জাতীয় ওষুধ না নিয়ে বাড়ির আশেপাশে ভেষজ ও রান্নাঘরের মশলা দিয়েই প্রাথমিক চিকিৎসা করা সম্ভব। এগুলি উপযুক্ত ব্যবহার করলে জ্বর-সর্দি-কাশি থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। সঙ্গে সঙ্গে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
ভেষজ ওষুধ ছাড়াও কিছু প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উপকার পাওয়া যায়। যেমন - দিনে ২-৩ বার বাষ্প নাক - মুখ দিয়ে নেওয়া। এক্ষেত্রে গরম জলে পুদিনা পাতা দিয়ে বাষ্প নিলে (steam inhalation) বেশ আরাম পাওয়া যায় এবং নাক কান গলা প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। কবল ধারণ ও কুলকুচি করলে উপশম হয়, তবে কম করে ২-৩ বার সারাদিনে করতেই হবে।
গার্গল করার জলে কয়েকটি নিমপাতা দিতে পারেন অথবা সোহাগার খইয়ের পাউডার ১-২ টিপ দিয়ে গার্গল করলে অ্যান্টিসেপটিকের কাজ করে।
[আরও পড়ুন: মুখের ভিতরে জ্বালা? সমস্যা এড়ালেই বিপদ, সতর্কবার্তা বিশেষজ্ঞর ]
গ্রিন টি বানিয়ে তার বাষ্প নাক দিয়ে নিয়ে, মুখে কিছুক্ষণ ধারণ করে তারপর পান করলে বিশেষ ফল পাওয়া যায়।
জ্বর হলে শিউলিপাতার রস ৫-১০ মিলিলিটার ১ চামচ মধুর সঙ্গে ২-৩ বার দেওয়া যেতে পারে। আয়ুষ ৬৪ বলে একটি ওষুধ যার মধ্যে চিরতা, নাটা করঞ্জ, কটকি ও ছাতিম এর নির্যাস আছে। এটি ৫০০মিলি গ্রাম করে ৩ বার নিতে হবে। এটি সহজলভ্য।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাবৃদ্ধি ও বার বার সর্দিকাশিতে যাঁরা ভোগেন তাঁদের জন্য আয়ুষ ক্বাথ ১৫-৩০ মিলিলিটার দিনে ২ বার নিতে পারেন। আয়ুষক্বাথ তুলসী, দারুচিনি, শুকনো আদা ও গোলমরিচ দিয়ে তৈরি করতে হয় যা বাড়িতেই তৈরি করা যায়।
খাদ্যতালিকায় অবশ্যই বিশেষ নজর দিতে হবে। আমলকী, পাতিলেবু, সজনেপাতা, ডাঁটা ও ফুল, পোড়া আমের শরবত বিশেষ ভাবে ইমিউনিটি বাড়িয়ে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
নাসারন্ধ্র পরিষ্কার রাখতে হবে। তার জন্য বাষ্প নেওয়ার পর ৬ ফোঁটা করে অনু তৈল দিনে ২-৩ বার নিলে নাকের পথ খুলে গিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে সাহায্য করে।
কাশি হলে মুখে একটুকরো লবঙ্গ বা যষ্টিমধু রাখতে পারেন। এছাড়া তালিশাদি চূর্ণ বা সিতপলাদি চূর্ণ ৩ গ্রাম করে দিলে ২-৩ বার নেওয়া যেতে পারে। বাসক পাতার রস ও কণ্টিকরি রস মধু দিয়ে ১০-১৫ মিলিলিটার দিনে ২-৩ বার নিতে পারেন ।
শিশুদের জন্য
এই সময়ে শিশুরা বেশি ভোগে তাদের রোগ প্রতিহত করার ক্ষমতা কম থাকার জন্য। ৬ মাসের পরে শিশুদের তুলসীপাতার রস ১-৫ মিলিলিটার পর্যন্ত মধুর সঙ্গে দেওয়া যেতে পারে। এছাড়া হালকা রোদ, নিত্য তেল মালিশ, ইত্যাদি বিশেষ উপকার দেয়। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে খুব অল্প সময়ে এটি মারাত্মক রূপ ধারণ করতে পারে, সেজন্য চিকিত্সকের পরামর্শ নেওয়া একান্ত বাঞ্ছনীয়।
বয়স্ক মানুষদের এর থেকে
রেহাই নেই। বৃদ্ধরা প্রতিদিন চ্যবনপ্রাশ, অগস্ত্য হরীতকী রসায়ন, চিত্রক হরীতকী রসায়ন যে কোনও একটি ১০ গ্রাম করে নিলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় ও বার বার সর্দি কাশি জ্বর হওয়া থেকে দূরে থাকবেন এবং সহজে কাবু হবেন না।